এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৫ মার্চ : ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে ‘শেষ সুযোগ’ বলে মন্তব্য করলেন বিজেপির যুব মোর্চার নেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি । তিনি আজ এক্স-এ একটি বৈদ্যুতিক চ্যানেলের প্রতিবেদনের ক্লিপিং শেয়ার করেছেন । যেখানে মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ূন কবীরকে বলতে শোনা গেছে,’ভোটের দিনে হিন্দুরা বসে থাকে, পান্তা ভাত খেয়ে ঘুমায়,ভোট দিতে যায় না । আর মুসলিম ছেলেরা ঘুগনি-মুড়ি খেয়ে সারাদিন ভোট করে ৷ এখানেই পার্থক্য গড়ে দেবো ।’
তরুণজ্যোতি লিখেছেন,’২০২৬ : পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের শেষ সুযোগ ! সম্প্রতি তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ূন কবীর প্রকাশ্যে বলেছেন— “ভোটের দিন হিন্দুরা বসে থাকে, পান্তাভাত খেয়ে ঘুমায়, ভোট দিতে যায় না। আর মুসলিম ছেলেরা ঘুঘনী-মুড়ি খেয়ে সারাদিন ভোট করে বেড়ায়। এখানেই পার্থক্য গড়ে দেবো!” এই বক্তব্য যতটা বিস্ময়কর, ততটাই বাস্তবতা তুলে ধরে! পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ট্রেন্ড দেখলেই বোঝা যায়, মুসলমান ভোটাররা যেভাবে ভোট দিতে সমবেত হয়, হিন্দুরা তার ধারে-কাছে নেই। হিন্দু সমাজের একটা বড় অংশ ভোটের দিনটাকে ছুটির দিন হিসেবে ধরে নিয়ে পিকনিকে বেরিয়ে পড়ে কিংবা কাছাকাছি কোনো রিসোর্টে STAYCATION কাটায়। ফলস্বরূপ, মুসলিম প্রধান এলাকায় ভোট পড়ে ৯০-১০০%, অথচ হিন্দুপ্রধান এলাকায় ভোটের হার ৬০-৬৫% পর্যন্ত নেমে আসে।’
তিনি আরও লিখেছেন,’ভোট না দেওয়ার মূল্য চোকাচ্ছে হিন্দুরাই! ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে একাধিক হিন্দুপ্রধান এলাকায় তৃণমূল এগিয়ে গেছে শুধুমাত্র এই কারণে যে, সেখানকার মুসলিম ভোটাররা এককাট্টা হয়ে ভোট দিয়েছে, আর হিন্দুরা অনাগ্রহ দেখিয়েছে। এমনকি কোভিডের সময়ও মুসলিম এলাকাগুলোতে ভোট পড়েছে ৯৫-১০০%, কিন্তু হিন্দু এলাকায় ভোট পড়েছে অনেক কম। হিন্দুদের ভোট না দেওয়ার এই প্রবণতা পশ্চিমবঙ্গে এক গভীর সংকট তৈরি করেছে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত হিন্দুদের মধ্যে এক ধরনের মানসিকতা তৈরি হয়েছে— “ভোট দিতে লাইনে দাঁড়ানো মানে মর্যাদাহানি!” তারা ভাবে, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে গরমের মধ্যে দাঁড়ানো ‘কষ্টকর’, অথচ পাঁচ বছর ধরে অত্যাচার সহ্য করাটাই যেন ‘সহজ’!
তরুণজ্যোতি তিওয়ারি ‘হিন্দুরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক’ বলে মন্তব্য করে লিখেছেন,’গত এক দশকে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা ধীরে ধীরে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে উঠেছে। আজ দুর্গাপুজো করতে অনুমতি লাগে, রাস্তায় শঙ্খধ্বনি বাজালে আপত্তি ওঠে, রামনবমীর মিছিল করলে লাঠিচার্জ হয়। আগামী দিনে হয়তো শাঁখা-সিঁদুর পরতেও অনুমতি লাগবে! আজ হুমায়ুন কবীররা প্রকাশ্যে ঘোষণা করছে, ভোটের মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করবে। তারা জানে, মুসলিম ভোট একজোট, হিন্দুরা বিভক্ত এবং অনাগ্রহী। মুসলমানরা যা চায়, সেটাই করছে। প্রশ্ন হলো— হিন্দুরা কী চায়?’
কেন এ রাজ্যের হিন্দুদের কাছে ২০২৬ সালের বিধানসভার ভোট শেষ সুযোগ বলেছেন তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি । এই বিষয়ে তিনি লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৮০টি বিধানসভায় মুসলিম ভোট একচেটিয়া। বাকি আসনগুলোতেও মুসলিম ভোট যদি ৩০-৪০% হয়, তাহলেও তারা নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে দিতে পারে, যদি হিন্দুরা ভোট দিতে না যায়! সুতরাং, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন হিন্দুদের জন্য শেষ সুযোগ। এখনই হিন্দুরা ঠিক করুক— তারা কি নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে চায়, নাকি হাতের নাগালের সুযোগ হারিয়ে চিরতরে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থাকতে চায়? ভবিষ্যৎ আপনার হাতে। সিদ্ধান্ত নিন!’
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে ধর্মের ভিত্তিতে রাজনৈতিক মেরুকরণ ইতিমধ্যে অনেকাংশে ঘটে গেছে । বিগত বছরগুলিতে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপকভাবে হাইলাইট করেছে বিজেপি । রাজ্যের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তার একটা প্রভাবও পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে । পাশাপাশি এরাজ্যে দুর্গা পূজো থেকে শুরু করে সর্বশেষ কার্তিক পুজো পর্যন্ত মন্ডপে হামলার ঘটনাকে প্রচার করে তার সমস্ত দায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ‘তোষামোদী নীতি’র উপর চাপিয়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবির । কিন্তু ভোট কাটাকাটির অঙ্কে কিছুটা হলেও এখনো পিছিয়ে আছে বিজেপি । আর এই কাটাকাটির অঙ্কে সিপিএম শাসক দলকে অনেকাংশে সাহায্য করে বলে অভিযোগ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর । অবশ্য তিনি এটাও জানান যে আর চার থেকে ছয় শতাংশ হিন্দু ভোটকে যদি এককাট্টা করা যায় তাহলে এরাজ্যে মমতা ব্যানার্জির শাসনের অবসান নিশ্চিত । তবে ভোটের দিন হিন্দুদের ‘পান্তা ভাত খেয়ে ঘুমানো’র প্রবণতা আদবেই বন্ধ হবে কিনা তা ভবিষ্যতেই জানতে পারা যাবে ।।