এইদিন ওয়েবডেস্ক,০৭ ফেব্রুয়ারী : দেশের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ, উদারপন্থী, বামপন্থীরা বলে যে বীর সাভারকরকে ভারতরত্ন দেওয়া উচিত নয় কারণ তিনি মহাত্মা গান্ধী হত্যা মামলার আসামি ছিলেন ! গান্ধীর মৃত্যুবার্ষিকী এলেই তারা বীর সাভারকারকে গালাগালি দিতে শুরু করে । কিন্তু সত্যই কি বীর সাভারকর গান্ধী হত্যার সাথে যুক্ত ছিলেন ? যদি থেকেই থাকেন তাহলে ১৯৪৯ সালে গান্ধী হত্যার মামলা থেকে তিনি খালাস পেলেন কিভাবে ? তাহলে কে এবং কেন ফাঁসাতে চাইছিল বীর সাভারকারকে ? বিভিন্ন তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে বীর সাভারকারকে ফাঁসানোর মূল ষড়যন্ত্রকারী আর কেউ নয়, তিনি স্বয়ং জহরলাল নেহেরু । ডক্টর ভীমরাও বাবাসাহেব আম্বেদকর নিজেই সন্দেহ করেছিলেন যে নেহেরু সাভারকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ষড়যন্ত্র করেছিলেন । আম্বেদকর বিশ্বাস করতেন যে নেহেরু ষড়যন্ত্র করে গান্ধী হত্যা মামলায় সাভারকরকে জড়াতে চেয়েছিলেন । আর এই ষড়যন্ত্রে নেহেরু পাশে পেয়ে গিয়েছিলেন তার কিছু তাঁবেদার কংগ্রেসি নেতাদের ।
লাল কেল্লার আদালতে মহাত্মা গান্ধী হত্যার মামলা চলছিল এবং দেশের বিখ্যাত আইনজীবী এলবি ভোপাটকর বীর সাভারকারের পক্ষে মামলা লড়ছিলেন । শোনা যায়, ভোপাটকর বিচারের সময় প্রায়ই হিন্দু মহাসভার অফিসে যেতেন । ভোপাটকর বলেছিলেন যে একদিন সকালে তার জন্য একটি কল এসেছিল… তিনি ফোন ধরলে অন্যপ্রান্ত থেকে একজন বললেন যে ‘আমি বি আর আম্বেদকর, আজ সন্ধ্যায়, আপনি কি আমার সাথে মথুরা রোড দেখা করতে পারেন ? আমরা কি দেখা করতে পারি ?’
সেই সন্ধ্যায়, যখন ভোপটকর নিজেই গাড়ি চালিয়ে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছেছিলেন, তিনি দেখলেন যে ডঃ আম্বেদকর ইতিমধ্যেই সেখানে অপেক্ষা করছেন… তিনি ভোপটকরকে তার গাড়িতে বসতে বললেন । নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন… কয়েক মিনিট পর তিনি গাড়ি থামিয়ে ভোপাটকারকে বললেন,’আপনার মক্কেল সাভারকরের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই, পুলিশ অকেজো প্রমাণ পেশ করেছে… এই ইস্যুতে নেহরু মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য তাদের সমর্থন জানিয়েছেন, সাভারকরের পক্ষে। কিন্তু চাপে কেউ কিছু করতে পারছে না… তবুও আমি বলছি সাভারকারের বিরুদ্ধে কোনো মামলা টিকবে না, আপনি জিতবেন।’ বিস্মিত ভোপাটকর জিজ্ঞেস করলেন,তাহলে কে চাপ দিচ্ছে… জওহরলাল নেহেরু? কিন্তু কেন ? আম্বেদকর কোনো উত্তর দেননি ।
মনোহর মালগাঁওকর আইনজীবী ভোপটকার এবং আম্বেদকরের মধ্যে এই গোপন কথোপকথনের কথাও উল্লেখ করেছেন । গান্ধীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে যদি এই দেশে কেউ প্রথম নিরপেক্ষ গবেষণা করে থাকেন, তবে তিনি ছিলেন দেশের সুপরিচিত লেখক মনোহর মালগাঁওকর ৷ তার গবেষণাটি ৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে বিশ্বের বিখ্যাত ম্যাগাজিন লাইফ দ্বারা প্রথম প্রকাশিত হয় এবং ১৯৭৫ সালে, তার বই “দ্য মেন হু কিল্ড গান্ধী”… যা লন্ডনের প্রকাশক ম্যাকমিলান দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল… এই বইটি পৃষ্ঠায় সম্পূর্ণ প্রকাশ এর পরেও কোনো “নেহরু ভক্ত” তাদের অভ্যাস বশত মনে করতে পারেন যে মনোহর মালগাঁওকর একজন সংঘী ছিলেন । গান্ধী-নেহেরুর তাঁবেদাররা ছাড়া মনোহর মালগাঁওকরের নিরপেক্ষতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি আজ পর্যন্ত ।
গান্ধী হত্যা মামলাটি অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে সাভারকারের উপর আরোপিত মামলাটি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে এবং তিনি ছিলেন দিগম্বর ব্যাজ । দিগম্বর ব্যাজ হলেন সেই ব্যক্তি যিনি গান্ধী হত্যা মামলায় জড়িত ছিলেন এবং তিনি নিজেই একজন সরকারী সাক্ষী হয়েছিলেন । তিনি দাবি করেছিলেন যে গান্ধী হত্যার আগে যখন গডসে এবং আপ্টে সাভারকারের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি সেই বৈঠকের একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এবং তিনি দূর থেকে শুনেছিলেন যে সাভারকর গডসে এবং আপ্টেকে মারাঠি ভাষায় বলেছিলেন যে “সফল হয়ে ফিরে এস”… শুধু এই একটি বাক্যের কারণে, নেহেরু সরকার সাভারকারকে গান্ধী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে । পরে, গান্ধীর তদন্তের জন্য কাপুর কমিশন গঠন করা হলে প্রকাশ্যে আসে যে ব্যাজ ছিল একজন অপরাধী ব্যক্তি যিনি অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত ছিলেন । আর একজন দুষ্কৃতকারীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে, কালাপানিতে ব্রিটিশদের অত্যাচার সহ্য করে একজন বিপ্লবীকে গান্ধী হত্যার ষড়যন্ত্রকারী প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল ।
যাই হোক,১৯৪৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী, লাল কেল্লায় অনুষ্ঠিত আদালতে, বিচারপতি আত্মা চরণ বীর সাভারকারকে গান্ধী হত্যার অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছিলেন… কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ৭০ বছর পরেও, সমস্ত সেকুলার, উদারপন্থী এবং বামপন্থী ছদ্মবেশীরা বীর সাভারকরকে গান্ধী হত্যার সাথে যুক্ত করার ষড়যন্ত্র করে যায় । এমতাবস্থায় প্রশ্ন ওঠে যে, সাভারকর যদি সত্যিই গান্ধীর খুনি হয়ে থাকেন, তাহলে নেহরুর সরকার কেন সাভারকরের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেনি? যেখানে লাল কেল্লা আদালতের সিদ্ধান্তের পরে, নাথুরাম গডসে, গোপাল গডসে, নারায়ণ আপ্তে, দত্তাত্রেয় পারচুরের আপিলের উপর সিমলার পাঞ্জাব হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলা চলে এবং এর পরে গডসে আপ্তেকে ফাঁসি দেওয়া হয়… তাহলে প্রশ্ন হল বীর সাভারকার যদি সত্যিই গান্ধীর খুনি হয়ে থাকেন, তাহলে নেহেরু সরকার কেন তাকে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করেনি? কারণ বীর সাভারকরের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণই ছিল না । যেকারণে আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয় নেহেরুকে ।
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে যে সাভারকারের সঙ্গে কি এমন শত্রুতা ছিল নেহেরুর? এর কারণ খুঁজতে হলে দেশভাগের ইতিহাসের দিকে তাকাতে হয় । প্রকৃতপক্ষে সেই সময়, দেশ ভাগের ভয়াবহতার মুখোমুখি হয়েছিল কোটি কোটি মানুষ এবং দেশের বড় অংশের মানুষ কংগ্রেসের নীতির উপর আস্থা হারিয়েছিল । দাঙ্গার পরে, আরএসএস এবং হিন্দুত্বের মতাদর্শের প্রতি মানুষের ঝোঁক দ্রুত বাড়তে থাকে । নেহরুও এটি উপলব্ধি করছিলেন এবং তিনি একারণে তিনি প্রায়শই প্রকাশ্য সভা থেকে আরএসএস এবং হিন্দু মহাসভাকে ধ্বংস করার কথা ঘোষণা করতেন । নেহেরুর এইসব বক্তব্যের প্রমাণ এখনও বর্তমান । তা থেকে অনুমেয় যে গান্ধী হত্যা মামলার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে হিন্দুত্ববাদী বীর সাভারকর এবং আরএসএসকে নিশ্চিহ্ন করতে ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়েছিলেন জহরলাল নেহেরু ।
স্বাধীনতার পরে, নেহেরুর জন্য প্রকৃতপক্ষে কোন চ্যালেঞ্জ ছিল না । নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোসকে সুকৌশলে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল অনেক আগেই । কৃপালানি, জেপি, লোহিয়া, ট্যান্ডন, প্রসাদ, যাঁরা অনেক পরে তাঁর প্রতিপক্ষ হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই সেই সময়ে কংগ্রেসেই ছিলেন… তাঁর জন্য মাত্র দু’জন লোক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছল….. বীর বিনায়ক দামোদর সাভারকর এবং সংঘের প্রধান গোলওয়ালকর ।
সম্ভবতঃ, সাভারকরকে গান্ধী হত্যা মামলায় টেনে নিয়ে গিয়ে তাঁকে সাজা দেওয়ার পর সংঘকে নিষিদ্ধ করা হত । এরপর গোলওয়ালকরকে গ্রেপ্তার করে আরএসএসকে নিশ্চিহ্ন করার বৃহত্তর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল । মনে করা হয় যে জহরলাল নেহেরু সাভারকারের প্রতি অত্যন্ত ঈর্ষান্বিত ছিলেন । জহরলাল নেহেরু যে হিংসা ও ঈর্ষায় ভরা একজন ব্যক্তি ছিলেন একথা বলেছিলেন নেহেরুর কট্টর সমর্থক মৌলানা আবুল কালাম আজাদ। তার বই “ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম”-এর ১২৩ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘জওহরলাল নেহেরু এটা সহ্য করতে পারতেন না যে তার চেয়ে বেশি প্রশংসা অন্য কেউ পেতে পারে ।’।