প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০২ জুন : বাংলায় ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার মামলার তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই।তদন্তে নেমে সিবিআই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার শাসক দলের নেতা কর্মীদের একের পর এক ডেকেও পাঠাচ্ছে।এবার সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠালো বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসকে।এমনকি সিবিআই খোকন দাসের ঘনিষ্ট বর্ধমান আদলতের আইনজীবী উদয় কোনার কেও ডেকে তলব করে। তবে কোন এক রহস্যজনক কারণে সিবিআই এর তলব পাওয়ার কথা খোকন দাস বুধবার সংবাদ মাধ্যমের কাছে অস্বীকার করে যান।কিন্তু বৃহস্পতিবার তিনি ও তাঁর ঘনিষ্ট আইনজীবী উদয় কোনার যথারিতি সিবিআই অফিসারদের কাছে হাজির হন ।
কয়েক দিন আগেই বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ট পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ২ ব্লকের তৃণমূল নেতা অরুপ মির্ধাকে নোটিশ পাঠায় সিবিআই । অরুপ বাবু
আউশগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূলের কর্যকরি সভাপতি । তাঁকে ডেকে পাঠানোর পর পাঁচ দিন কাটতে না কাটতে সিবিআই এর বর্ধমান দক্ষিনের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসকে তলব করার ঘটনা যথেষ্টই তাতপর্য পূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।এই খবর বর্ধমানের রাজনৈতিক মহলেও শোরগোল ফেলে দিয়েছে ।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে সিবিআই ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার মামলার তদন্তে নেমেছে। তদন্তে নেমে সিবিআই শুধু বর্ধমানের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস ও আউশগ্রামের তৃণমূল নেতা আহমেদ শামস তবরিজ ওরফে অরূপ মির্ধাকে তলব করেছে এমনটা নয়।বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে অনেক আগেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠিয়েছে সিবিআই।যদিও শারীরিক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে অনুব্রত একাধীকবার সিবিআই দফতরে হাজিরা এড়িয়ে যান। শেষ পর্যন্ত বৃহষ্পতিবার তিনি কলকাতায় গিয়ে সিবিআই এর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন । অনুব্রত ঘনিষ্ট তৃণমূল নেতা অরুপ মির্ধাও গত শনিবার সিবিআই এর নোটিশ পাওয়ার পর সোমবার নির্দিষ্ট দিনেই দুর্গাপুরে এনআইটি গেস্ট হাউসে গিয়ে সিবিআই অফিসারদের মুখোমুখি হন। ওই দিন অনুব্রত ঘনিষ্ট আরো নয় জনকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করে।বিধায়ক খোকন থাস আবার নির্দিষ্ট দিনের একদিন আগে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা নাগাদ দুর্গাপুরে গিয়ে সিবিআই অফিসারদের মুখোমুখি হন । বিধায়ক খোকন দাসের পাশাপাশি বর্ধমান আদালতের আইনজীবী উদয় কোনারও এদিন সিবিআই দপ্তরে হাজিরা দেন।
সেখান থেকে বর্ধমানে ফিরে এদিন বিকালে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন খোকন দাস। তিনি দাবী করেন, বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ফোন করার জন্য সিবিআই তাঁকে তলব করেছিল।এদিন সিবিআই অফিসাররা তাঁকে তাঁর ফোনের কল লিস্ট প্রথমে দেখায় । সেই লিষ্ট অনুযায়ী ২ মে সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিট নাগাদ তিনি ফোন করে ছিলেন অনুব্রত মন্ডলকে।ওই দিন অনুব্রত মডলকে কেন ফোন করেছিলেন তা জানতে চান সিবিআই অফিসাররা। খোকন দাস বলেন ,তিনি সিবিআই অফিসারদের জানিয়েছেন, “বিধানসভা নির্বাচনে বিধায়ক হিসাবে বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে জয়লাভ করার জন্য তিনি ওইদিন অনুব্রত মণ্ডলকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। কারণ তার নির্বাচনী প্রচারে অনুব্রত মণ্ডল বর্ধমানে এসেছিলেন“।বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার দিন বীরভূমের ইলামবাজারে রাজনৈতিক অশান্তি হয়।বীরভূমে ওইদিন কি ঘটনা ঘটেছিল তা নিয়েও সিবিআই তাঁর কাছে জানতে চায় । খোকন দাস বলেন ,আমি সিবিআই অফিসারদের জানিয়েছি ওই দিন বীরভূম জেলায় কি হয়েছিল তা আমার জানা নেই । কারণ আমি পূর্ব বর্ধমান জেলার বাসিন্দা। পাশাপাশি খোকন দাস সংবাদ মাধ্যমের কাছে এও দাবী করেন,’বর্ধমানে ভোট পরবর্তী হিংসার কোন ঘটনা ঘটেনি ।’
যদিও বিরোধীরা দাবী করেছে,বিধানসভা
ভোট পরবর্তীতে বর্ধমানের কাঞ্চননগরের বিজেপি কর্মী নারায়ন দে কে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে । সিবিআই সেই মামলাটিও নিজেদের হাতে নিয়েছে। জেলা বিজেপির (পূর্ব বর্ধমান) সহসভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘২০২১ বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর রাজ্য জুড়ে বিজেপি নেতা,কর্মী ও সমর্থকদের উপর অমানুষিক সন্ত্রাস চাালিয়েছে তৃণমূল বাহিনী । তৃণমূলের হামলা, আক্রমণ ও সন্ত্রাসের জেরে অনেক বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে । অনেকে জখম হয়েছে,আবার অনেকে বাড়ি ছাড়া হতে বাধ্য হয়েছেন । তৃণমূলের সেই সন্ত্রাসের হাত থেকে বীরভূমের বিজেপি কর্মীরা যেমন রেহাই পায়নি, তেমনই রেহাই পায়নি বর্ধমান ও আউশগ্রামের বিজেপি কর্মী ও সমর্থকরা । কোন সভ্য দেশে এমনটা হয় না ।উচ্চ আদালতের নির্দেশে সেই ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার মামলার তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। এই মামলায় এদিন সিবিআই জেরার মুখোমুখি হয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল ।
বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক ও তাঁর ঘনিষ্ট আইনজীবীও এদিন সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন বলে জেনেছেন । সৌম্যরাজ বাবু দাবী করেন, অত্যাচারিতদের প্রত্যাশা রয়েছে সিবিআই দ্রুত তদন্ত শেষকরে অত্যাচারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে।
এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপত্র দেবু টূডু বলেন,’কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নির্দেশ মতো কাজ করছে সিবিআই ।তাই ওরা নানা অছিলায় শুধু তৃণমূলের লোকজনকেই ডেকে পাঠাচ্ছে । তবে এইসব করে কিছু লাভ হবে না। ওদের বাংলা জয়ের স্বপ্ন আজীবন অধরাই থেকে যাবে ।’।