সম্প্রতি দেশ জুড়ে সিএএ লাগু করেছে কেন্দ্র সরকার । কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে এই আইন কারোর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয় বরঞ্চ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ধর্মীয়ভাবে নিপীড়নের শিকার হিন্দু, ক্রিশ্চান, বৌদ্ধ, জৈন সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়াই এর উদ্দেশ্য । কিন্তু ভারতীয় মুসলিম সমাজ এই সিএএ আইনের প্রবল বিরোধিতা করছে । কংগ্রেস,বামপন্থী, তৃণমূল কংগ্রেস,আম আদমি পার্টির মত রাজনৈতিক দলগুলি মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কের জন্য এই আইন কার্যকর করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে । সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠছে যে নাগরিকত্ব দেওয়াতে মুসলিমদের এত বিরোধিতা কেন ? এর পিছনে একটাই কারণ হল হিন্দু, খ্রিস্টান,বৌদ্ধ, জৈনদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মুসলিম অনুপ্রবেশকারী ভারতের ঢুকে পড়েছে । কিন্তু সিএএ আইনে কোথাও মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দেওয়ায় কথা বলা হয়নি । যেকারণে পরবর্তী সময়ে দেশে এনআরসি লাগু হলে হয় তাদের নিজের দেশে প্রত্যাবর্তন অথবা ডিটেনশেন ক্যাম্পে পাঠানোর আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে । আর এতে বেজায় চটেছে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদ-উল- মুসলিমীনের সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ও পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জিরা,বামপন্থী ও কংগ্রেস । তাদের বিরোধিতার কারন হল মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক হারানোর ভয় । ওয়াইসি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের পর্যন্ত নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন । কিন্তু প্রশ্ন ওঠে যে ওই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির বিরোধিতা ভোটব্যাঙ্ক হারানোর কারনে হলেও এদেশের মুসলিম নাগরিকদের সিএএ বা এন আরসির বিরোধিতার কারন কি ?
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর অমুসলিম রাষ্ট্র আমেরিকা, ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় দেশগুলিতে বিপুল পরিমাণে মুসলিম শরণার্থীরা আশ্রয় নিচ্ছে । ওই সমস্ত শরণার্থীরা মূলত এশিয়া ও আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোর নাগরিক । কিন্তু ইরান, তুরস্ক, সৌদি আরব,আরব আমিরাতের মতো আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলিতে কোনো মুসলিম শরণার্থীকে আজ পর্যন্ত আশ্রয় দিতে দেখা যায়নি । তালিবানের ভয়ে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান বা ইরানে পালিয়ে যাওয়া নাগরিকদের দফায় দফায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে নিজের দেশে । অর্থাৎ তারা আশ্রয় দিতে চায় না আফগানিদের । কিন্তু প্রশ্ন উঠে যে ইসলামী রাষ্ট্রগুলিতে মুসলিম শরণার্থীদের কেন আশ্রয় দেওয়া হয় না ?
বলা হয় যে যখন একজন মুসলিম ব্যক্তি কোনো অমুসলিম দেশে চলে যায়, তখন তা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটে এবং এই ব্যবস্থাকে ‘হিজর’ বলা হয়। “হ ইজরাত” একটি আরবি শব্দ, ” হিজর” থেকে উদ্ভূত,
যার অর্থ “প্রস্থান করা” বা “পরিত্যাগ” করা । ইসলামে, এর অর্থ সাধারণত আল্লাহর জন্য “নিজের জমি ছেড়ে দেওয়া” বা “এক স্থান থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা” । ইসলামের নবীর জীবনীতে মোহাম্মদ-ই- আরাবী লিখেছেন,’আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বাড়ি ও স্থান ত্যাগ করা এবং অন্য জায়গায় বসবাস করাকে হিজরত বলা হয় ।’
এর উদ্দেশ্যের কথা বলতে গেলে,’হিজর’ হল সারা বিশ্বে একটি ইসলামী জাতি প্রতিষ্ঠার একটি নীতি, যা মুসলমানরা অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করে। মুসলমানদেরকে ‘হিজর’-এর জন্য মসজিদে রীতিমতো প্রশিক্ষণ পর্যন্ত দেওয়া হয় বলে জানা গেছে । সৌদি আরব মুসলিমদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করে না । কিন্তু অমুসলিম দেশে মুসলিম শরণার্থীদের বসতি স্থাপনের জন্য জাতিসংঘ তহবিল সরবরাহ করে !
ইসলামের দ্বিতীয় নীতি হল সমগ্র বিশ্বের মানুষকে দুই ভাগে বিভক্ত করা, একটি ইসলামে বিশ্বাসীকে ‘মোমিন’ বলা হয় এবং অন্যটি অন্য ধর্ম নির্বিশেষে ‘কাফের’। “একজন কাফের হত্যার যোগ্য” এবং এটি প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য বলে মনে করা হয় ! তৃতীয় একটি নীতি ইসলামের যাকে বলা হয় ‘দারুল উলূম ইসলাম’ অর্থাৎ পাকিস্তান এবং ‘দারুল উলূম হারব’ অর্থাৎ ভারত। ভারত বিভক্তিও এই ইসলামী নীতির ভিত্তিতেই হয়েছিল।
এখন আসা যাক সিএএ এর কথায় । এই আইনের আওতায় কোন মুসলিম শরণার্থীকে নাগরিকত্ব না দেওয়া শুধু কারণ নয়, এর পিছনে আছে একটা ধর্মীয় কারণও । প্রসঙ্গত, সিএএ হল বিশ্বের প্রথম আইন, যা একটি ইসলামিক দেশে নিপীড়িত সংখ্যালঘু হিন্দু, খ্রিস্টান, পার্সি, জৈন, বৌদ্ধ এবং এই সমস্ত কাফেরদের রক্ষা করে এবং এই কারণেই ইসলামের অনুসারীরা এই আইনের তীব্র বিরোধিতা করছে ! তারা বলে এই আইন ইসলামের পক্ষে নয়, আমরা তা বাস্তবায়ন হতে দেব না ! ইসলামের নীতির পরিপন্থী কোনো কিছুতেই আমরা বিশ্বাস করি না! ভারতের মুসলিমরা কোনো ভাবেই সিএএ কে মেনে নিতে চায় না । কারণ তারা মনে করে যে “সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসি” ইসলামী রীতির পরিপন্থী ! ইসলাম সত্যিই বিপদে এবং এর জন্য দায়ী একমাত্র নরেন্দ্র মোদী ! তাই প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির এত বিরোধিতা । আর এতে তারা সঙ্গ পেয়ে যাচ্ছে তথাকথিত সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলির ।।
তথ্যসূত্র : সৌজন্যে মডিফায়েড হিন্দু ৪ ।