মার্কিন আদালতে ৩৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আদিল শাহরিয়ারের(Adil Shahryar) মুক্তি আজ পর্যন্ত গোপন রয়ে গেছে । যাকে মার্কিন জেল থেকে মুক্ত করতে ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির আসামি ওয়ারেন অ্যান্ডারসনকে মুক্তি দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী । বিষয়টি ২০১৫ সালে একবার সংসদে উত্থাপন করেছিলেন বিজেপি সাংসদ সুষমা স্বরাজ। সুষমা স্বরাজের বক্তব্যটি একটা সর্বভারতীয় খবরের চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়েছিল । আদিল শাহরিয়ারের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়ার সময় তিনি বহু গোপন তথ্য ফাঁস করেছিলেন । সুষমা স্বরাজ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এবং আদিল শাহরিয়ারের সাথে তার সম্পর্ক সম্পর্কে গোপন তথ্য উন্মোচন করে কার্যত বোমা ফাটান ।ললিত মোদী ইস্যুতে কংগ্রেসের তীব্র প্রতিক্রিয়ায়, সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন যে রাজীব গান্ধীই ইউনিয়ন কার্বাইডের প্রধান ওয়ারেন অ্যান্ডারসনকে দেশ থেকে পালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাবে, সুষমা বলেছিলেন যে রাজীব গান্ধী ওয়ান্ডারসনকে পালাতে সাহায্য করতে রাজি হয়েছিলেন কারন তার বন্ধুর ছেলে, আদিল শাহরিয়ার, যিনি মার্কিন জেলে ৩৫ বছরের সাজা ভোগ করছেন, তাকে মুক্ত করে আনতে হবে।
কিন্তু এও আদিল শাহরিয়ার কে ছিলেন? গান্ধীদের সাথে তা কী সম্পর্ক ছিল ? তাকে কেন এত গুরুত্ব দিতেন রাজীব গান্ধী ? এই সমস্ত প্রশ্ন তখন উঠতে শুরু করে । ততদিনে রাজীব গান্ধী ও আদিল শাহরিয়ারের প্রকৃত সম্পর্কের কথা জেনে গেছে গোটা বিশ্ব । আসলে
ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত তথা জহরলাল নেহেরুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোহাম্মদ ইউনুসের ছেলে ছিলেন আদিল শাহরিয়ার । ইউনুস ও আদিলের উত্থানের কাহিনী মোটামুটি যেটা জানতে পারা গেছে তা সংক্ষিপ্ত আকারে এখানে তুলে ধরা হল :
খান আব্দুল গাফফার খান একদিন তার ভাগ্নে মোহাম্মদ ইউনুসকে জহরলাল নেহরুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন যে সে খুব মেধাবী ছেলে, সে তার গ্রাজুয়েশন শেষ করেনি এবং কয়েকদিন আপনার সাথে থাকলে সে আরও কিছু শিখবে । নেহেরু তাকে তার নিজের বাড়িতে একটি রুম দিয়েছিলেন, মোহাম্মদ ইউনুস নেহরুর বক্তৃতা লিখতেন এবং ইন্দিরা গান্ধীকেও লেখা শিখিয়েছিলেন। নেহরুকে প্রভাবিত করেছিলেন মোহাম্মদ ইউনুস । তারপর খবর এল ইন্দিরা গান্ধীকে এক বছরের জন্য বিদেশে পাঠিয়েছেন নেহেরু ।
তারপর খবর আসে যে মোহাম্মদ ইউনূস, যিনি এমনকি স্নাতকও ছিলেন না এবং ভারতীয় ফরেন সার্ভিসের অফিসারও ছিলেন না, নেহরু তাঁর বিশেষ প্রভাবের মাধ্যমে ভারতীয় বিদেশ পরিষেবায় পার্শ্বীয় প্রবেশের মাধ্যমে তাকে মিশর, স্পেনে এবং লিবিয়া রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করেছেন । তারপর একদিন খবর পাওয়া গেল মোহাম্মদ ইউনুসের ছেলে আদিল শাহরিয়ার তার মাসির কাছে বড় হচ্ছে। এই খবর শুনে সারা বিশ্ব হতবাক হয়ে যায় । কারন মোহাম্মদ ইউনূসের তখন বিয়েও হয়নি, তাহলে তার ছেলে কোথা থেকে এল ? এটা অনুসন্ধান করতে আপনাদের বিশেষ মেধার প্রয়োজন হবে না যে কেন মোহাম্মদ ইউনূসকে ল্যাটারাল এন্ট্রির মাধ্যমে ভারতীয় বিদেশ পরিষেবা অফিসার হওয়ার জন্য বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল ? ভারত থেকে দূরে কেন অনেক দেশে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ? কেন জহরলাল নেহেরু মোহাম্মদ ইউনূসকে ভারতে রাখতে চাননি এবং মোহাম্মদ ইউনূসও মুখ খুলতে চাননি।
অনেক পরে মোহাম্মদ ইউনূসের স্ত্রী থেকে মাত্র দুটি কন্যা সন্তান ছিল, কিন্তু এখনো আদিল শাহরিয়ারের মা কে তা গোপনই রয়ে গেল । তবে আদিল শাহরিয়ারের মা কে ছিলেন তা পরে জানতে পেরেছে গোটা বিশ্ব।
এদিকে আদিল শাহরিয়ার তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকার কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং সে অনেক বড় ড্রাগস কার্টেলের অংশ হয়ে গিয়েছিল।একদিন আমেরিকান পুলিশ মিয়ামিতে তার বাংলোতে অভিযান চালালে ৮০ কেজি কোকেন পায় । সেই সময় এটি একটি বিশাল ঘটনা ছিল এবং আমেরিকান আদালত আদিল শাহরিয়াকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড দেয় । এবং ফ্লোরিডায় একটা কারাগারে ১০ বছর জেলের সাজাও কাটিয়ে ফেলে আদিল ।
ইতিমধ্যে ভারতে ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি ঘটে। বহু মানুষ হতাহত হয় । ইউনিয়ন কার্বাইডের মালিক মার্কিন নাগরিক অ্যান্ডারসন এবং ইউনিয়ন কার্বাইডের আটজন সিনিয়র আমেরিকান কর্মকর্তা ভোপালে ছিলেন। রোনাল্ড রেগন এবং রাজীব গান্ধীর মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির আওতায় রাজীব গান্ধী অ্যান্ডারসন ও ইউনিয়ন কার্বাইডের অন্যান্য লোকজনকে ভোপাল থেকে দিল্লিতে ডেকে সরকারি বিমানে দিল্লি থেকে আমেরিকায় পাঠান এবং অন্যদিকে আমেরিকায় খবর প্রকাশিত হয় যে রোনাল্ড রেগন তার বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে আদিল শাহরিয়ারকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেন। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ছেলেবেলার বন্ধু বলা হয়েছিল আদিল শাহরিয়ারকে ।
এদিকে মুক্তি পাওয়ার পর, আদিল শাহিয়ার দিল্লিতে থেকে যান, যেখানে তিনি “প্রিয়দর্শিনী ইনস্টিটিউট সেন্টার” নামে একটি কোম্পানি গঠন করেন এবং তিনি ভারত সরকারের সমস্ত বিভাগ থেকে প্রচুর কাজও পেয়ে যান। প্রসঙ্গত, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্দিরা গান্ধীর নাম ছিল ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী ৷ আসলে, গান্ধী-নেহেরু পরিবার দেশবাসীকে আড়ালে রাখলেও আদিল শাহিয়ার তার মা কে তা জেনে গিয়েছিলেন ৷ আদিল শাহিয়ার ১৯৯০ সালে মারা যান এবং তাকে খুব গোপনে কবরস্থ করা হয় ।।