শেখ মিলন,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),২০ নভেম্বর : ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মাকে নিয়ে থাকতেন পেশায় জনমজুর এক ব্যক্তি । তিনদিন ধরে পেটের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। কিন্তু বাড়িতে কানাকড়িও ছিল না। তাই চিকিৎসা করাতে পারেননি। স্থানীয় এক যুবকের উদ্যোগে মঙ্গলবার স্থানীয় চিকিৎসালয়ের নিয়ে যাওয়া হয় বিনোদকে । কিন্তু আজ সন্ধ্যায় বৃদ্ধা মায়ের সাথে গল্প করার সময় হঠাৎ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল ছেলে । এই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের বড়াচৌমাথা সংলগ্ন কোঁড়াপাড়ায় । মৃতের নাম বিনোদ কর্মকার ।
এদিকে ছেলের আচমকা মৃত্যুতে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে বৃদ্ধা গন্ধেশ্বরী কর্মকারের । ছেলের মৃতদেহের পাশে বসে কেঁদে যাচ্ছিলেন অসহায় মা। আর এই দৃশ্য দেখে দেহ সৎকারের উদ্যোগ নিলেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এই মর্মস্পর্শী ঘটনার খবর পেয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ভাতার পূর্ব বর্ধমান ফেসবুক গ্রুপের সদস্যরা । তাদের আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি মৃতের দাহ সৎকারের জন্য স্থানীয় যুবকরা এলাকায় চাঁদা সংগ্রহ করে । সেই অর্থ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে ।
জানা গেছে,বড়াচৌমাথার কাছে আউশগ্রাম থানা ও ভাতার থানা এলাকার সংযোগস্থলের রয়েছে কোঁড়াপাড়া । এই পাড়াতেই রাস্তার ধারে একটি ছিটেবেড়া ঘরে বসবাস করেন গন্ধেশ্বরী কর্মকার নামে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা । বর্ধমানের আলমপুর এলাকায় বাড়ি ছিল বৃদ্ধার। কয়েকবছর আগে ছেলে বিনোদ কর্মকার বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কোঁড়াপাড়ায় এসে ছিটেবেড়া ঘরে বসবাস শুরু করেন । ভাতার পূর্ব বর্ধমান নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্যরা চাঁদা তুলে এবং স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় ওই জায়গায় অ্যাসবেসটস ছাউনি দেওয়া ওই ছিটেবেড়া ঘরটি তৈরি করে দিয়েছিল । বিনোদ প্রথমে একটা কামারশালা চালাতেন বিনোদ । ব্যবসা না চলায় ভিনরাজ্যে কাজে চলে যান । মাস চারেক আগে ফিরে এসে জনমজুরির কাজ শুরু করেন।
প্রতিবেশীরা জানান, সোমবার থেকে অসুস্থ ছিলেন বিনোদ। চিকিৎসা করানোর জন্য কানাকড়িও ছিল না তাঁর কাছে । এক প্রতিবেশী ব্যক্তি খবর পেয়ে তাকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে নিজের খরচে তার চিকিৎসা করান । কিন্তু এদিন বুধবার সন্ধ্যায় মারা যান বিনোদ। এদিকে ছেলের মৃত্যুতে
মাথায় যেন বাজ পড়ে গন্ধেশ্বরীদেবীর। তিনি নিরুপায় হয়ে ছেলের দেহের পাশে বসে কেঁদে যাচ্ছিলেন। তার কান্না শুনে স্থানীয় লোকজন ঘরে ঢুকে বিনোদকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে । এরপর তারা দেহ সৎকারের উদ্যোগ নেন। খবর দেওয়া হয় আলমপুরের বাসিন্দা বিনোদ কর্মকারের পরিবারকে। আজ রাত্রি প্রায় সাড়ে নটা নাগাদ বিনোদের ছেলে সহ ওই এলাকার বেশ কিছু মানুষজন বড়া চৌমাথায় হাজির হন। সৎকারের জন্য সংগ্রীহিত চাঁদার অর্থ বিনোদের ছেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ভাতার পূর্ব বর্ধমান ফেসবুক গ্রুপে অন্যতম সদস্য সৌরভ ঘোষ বলেন, অসহায় বৃদ্ধা ঠাকুরমার দুর্দশার চিত্র দেখে গ্রুপের সদস্যদের সহযোগিতায় বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। ঠাকুরমার ছেলের মৃত্যুর খবরে শোকাহত গ্রুপের সদস্যরা। আগামী দিনে ঠাকুরমা তাঁর পরিবারের সঙ্গে বাকি জীবনটা যদি নির্বিঘ্নে কাটাতে পারেন আমরা সেটাই চাই । আর যদি ঠাকুরমার আমাদের গ্রুপের সদস্যদের তৈরীর বাড়িতে থাকতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন আমরা এবং স্থানীয় মানুষজন মিলে ঠাকুমার যাবতীয় খরচ খরচা বহন করবো।’।

