এইদিন ওয়েবডেস্ক,নদীয়া,০৩ ডিসেম্বর : একদিকে বাংলাদেশের পাবনার ঈশ্বরদীতে নামাজে বিঘ্ন ঘটানোর বাহানায় নিশি রহমান(৩৮) নামে এক মহিলা যখন আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়ে হত্যা করল,পাশাপাশি অন্যদিকে নদীয়া জেলার নবদ্বীপে রাস্তার পাশে ফেলে যাওয়া মানব শিশুকে রাতভর আগলে রেখে প্রাণ বাঁচালো পথ কুকুরের দল । যদিও ঘাতক নিশি রহমানকে আজ বুধবার (০৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঈশ্বরদী থানা থেকে পাবনার আমলী আদালত-২ এ তোলা হলে বিচারক তরিকুল ইসলাম তাকে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন । কিন্তু নবদ্বীপের ওই পথকুকুর দলের এই প্রকার মমত্ববোধকে পাবনার ওই মহিলার পাশবিকতার উপর সজোরে চপেটাঘাত বলে মনে করছেন অনেকে ।
জানা গেছে,পথকুকুর। সোমবার (১ ডিসেম্বর) ভোরের দিকে নবদ্বীপের রেলওয়ে কর্মীদের একটি কলোনির বাথরুমের সামনে রক্তমাখা অবস্থায় এক নবজাতক মানব শিশুকে ঘিরে থাকতে দেখা যায় একদল পথ কুকুরকে । সেসময় আশেপাশে কোনো মানুষের অস্তিত্বও ছিল না। তবে কলোনির বাসিন্দারা জানান, একদল পথকুকুর শিশুটিকে ঘিরে নিখুঁত একটি বৃত্ত তৈরি করে সারারাত দাঁড়িয়ে ছিল। কোনো শব্দ নয়, কোনো আগ্রাসন নয়, শুধু সতর্ক পাহারা।
শিশুটিকে প্রথম দেখতে পান কলোনির বাসিন্দা শুক্লা মণ্ডল। তিনি বলেন, ঘুম ভেঙে এমন দৃশ্য দেখবো ভাবিনি। কুকুরগুলো আক্রমণাত্মক ছিল না, বরং তারা খুবই সতর্ক অবস্থায় বৃত্তাকার দাঁড়িয়ে ছিল। যেন তারা বুঝতে পারছিল যে শিশুটি বাঁচার জন্য লড়াই করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শুভাশ পাল জানান, ভোরের দিকে হঠাৎ হালকা কান্নার শব্দ শুনে তিনি ভেবেছিলেন কোনো পরিবারের অসুস্থ শিশু। ভাবতেই পারিনি বাইরে এক নবজাতক পড়ে আছে, আর কুকুরগুলো তাকে পাহারা দিচ্ছে।
আলো ফুটতেই শুক্লা মণ্ডল ধীরস্বরে ডেকে এগিয়ে গেলে কুকুরগুলো আস্তে আস্তে সরে গিয়ে পথ করে দেয়। তিনি নিজের ওড়না দিয়ে শিশুটিকে জড়িয়ে নেন ও প্রতিবেশীদের সাহায্যে তাকে মহেশগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে শিশুটিকে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকদের কথায়, শিশুটির দেহে কোনো আঘাত নেই। মাথায় রক্ত থাকলেও তা জন্মের সময়ের, যা প্রমাণ করে জন্মের কিছুক্ষণ পরই তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
নবদ্বীপ পুলিশ মনে করছে, স্থানীয় কেউ রাতের অন্ধকারেই শিশুটিকে ফেলে রেখে গেছেন। পুলিশ ও চাইল্ড হেল্পলাইন শিশুটির দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এক রেলকর্মী বলেন, যাদের আমরা প্রতিদিন তাড়াই, তারাই সেই শিশুটির প্রাণ বাঁচালো।
অন্যদিকে, একই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে বলে। নয় বছর আগে কলকাতায় চারটি কুকুর একটি নবজাতক শিশুকন্যাকে ঘিরে কাক তাড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ পাহারা দিয়েছিল, সেই স্মৃতিও আবার ফিরে এসেছে মানুষের মনে। নবদ্বীপের এই শিশুটিকে উদ্ধারের পর সন্ধ্যায় রেল কলোনির শিশুদের ওই পথকুকুরগুলোবে বিস্কুট খাওয়াতে দেখা যায়। এক কিশোর হাত বুলিয়ে বলছিল, ওরাই তো বাচ্চাটাকে বাঁচিয়েছে । সবশেষে শহরের মানুষরা বলছেন, এই রাতটি তারা ভুলবেন না, যে রাতে রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেছিল পথের কুকুর, আর মানবিকতার পাঠ তারা শিখলো ওই অবলা প্রাণীগুলোর কাছ থেকে ।।

