শেখ মিলন,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৬ ডিসেম্বর : মানুষের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ২০১৬ সালের ৮ জুলাই ‘সেফ ড্রাইভ সেফ লাইফ’ প্রকল্প চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । শুরুর প্রথম দিকে রাজ্য পুলিশ রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচারের পাশাপাশি বিনা হেলমেটের বাইক আরোহী এবং বেপরোয়া গতির যানবাহন চালকদের ফাইন করছিল ৷ কিন্তু কয়েক বছর পরে কোনো এক অজ্ঞাত কারনে অন্তরালে চলে যায় মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রকল্পটি । ফের নতুন করে প্রকল্পটি সামনে এনে যানবাহন চালকদের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার পুলিশ । আজ শুক্রবার ভাতার থানার পুলিশের উদ্যোগে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচিকে সামনে রেখে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা এবং সচেতনতা বাড়াতে ভাতার বাজারে র্যালিও বের করা হয় । এলাকার মানুষ পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ভাতার বাজারে টোটো যন্ত্রণা থেকে মুক্তি কবে পাবে মানুষ ?’
প্রসঙ্গত,বিগত প্রায় দেড় দশক ধরে এরাজ্যে শিল্পায়ন থমকে আছে । কৃষিকাজেও তেমন মুনাফা পাচ্ছেন না কৃষকরা । যেকারণে হুহু করে বাড়ছে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা । ফলে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসাবে অল্প পুঁজিতে টোটো ও মোটরভ্যান কিনে ভাড়া খাটানোর দিকে ঝুঁকছে তারা । এতে তাদের কর্মসংস্থান হলেও ট্রাফিক ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে । বিনা লাইসেন্সের ওই সমস্ত যানবাহনের দ্রুত বৃদ্ধির কারনে শহর বা আধা শহর এলাকাগুলিতে পথচারীদের জন্য যাতায়ত বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে ।
তার মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজার হল আধা শহর এলাকা । রয়েছে বিডিও অফিস, পঞ্চায়েত সমিতি,পশু হাসপাতাল,পোস্ট অফিস বিদ্যুৎ অফিসসহ বেশ কিছু অফিস স্কুল ও ব্যাঙ্ক । ভাতার বাজারের বুক চিড়ে বেড়িয়ে গেছে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়ক । এই সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে মালডাঙ্গা-ভাতার এবং কামারপাড়া-ভাতার রোড । বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের সাথে মালডাঙ্গা- ভাতার সড়কপথের মিলনস্থল ‘নাসিগ্রাম মোড়’ এবং কামারপাড়া-ভাতার সড়ক পথের মিলনস্থল ‘কামারপাড়া’ মোড় নামে পরিচিত ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ,পিক আওয়ার্সে যখন প্রচুর মানুষের ভিড় হয় তখন ওই দুই গুরুত্বপূর্ণ মোড় দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করা বিপজ্জনক হয়ে পড়ে ৷ কারন টোটো আর অটো ফুটপাত দখল করে রাখায় পথচারীদের মূল সড়কপথ দিয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হয় । একই চিত্র ভাতার বাসস্ট্যান্ডেও । স্থানীয়দের আরও অভিযোগ যে বিশেষ করে টোটোগুলি ট্রাফিক নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করে না । যাত্রীর আশায় কখনো তারা আচমকা টোটোর গতি আস্তে করে দেয় । কখনো রাস্তার উপরেই টোটো রেখে যাত্রীদের তোলা নামানোর কাজ করে । এছাড়া ফুটপাতে সারিবদ্ধ করে রাখার জন্য টোটোগুলিকে মূল সড়কপথের উপরে উঠে টোটো আগে পিছু করে । যেকারণে পথচারী,সাইকেল ও বাইক আরোহীদের বিপাকে পড়তে হয় । ভাতারের বাজারে মাঝে মধ্যে যে যানজট হয়, তার সিংহভাগ মূলত টোটোদের কারনেই হয় বলে অভিযোগ তাদের । জানা গেছে,কয়েক’শ মিটারের মধ্যেই রয়েছে ভাতার থানা । কিন্তু টোটোর দৌরাত্ম্য রুখতে পুলিশকে সেভাবে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ । স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ভাতার বাজারের ফুটপাত টোটোমুক্ত করা হোক এবং টোটোর দৌরাত্ম্য রোধে সতর্ক নজর রাখুক পুলিশ ।
এদিকে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ভাতারের একজন বাইক আরোহী যুবকের মৃত্যু হয়েছে । বছর ২৮ এর ওই যুবকের নাম ভোলানাথ দাস । তার বাড়ি ভাতারের শ্রীপুর এলাকায় । তিনি যখন নিজের বাইকে চড়ে বর্ধমান-কাটোয়া সড়কপথ ধরে কাটোয়া থেকে ফিরছিলেন, বড়োপোশলা সংলগ্ন এলাকায় আসতেই একটা বেপরোয়া গতির গাড়ি তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায় । স্থানীয় মানুষজন গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে তাঁর অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়৷ এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকস্তব্ধ পরিবার পরিজন।।