মুঘল হানাদার ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অত্যাচার ভুলে আত্মবিস্মৃত হিন্দু আজ “ধর্মনিরপেক্ষ” । ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আজ সিপিএমের বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য তৃণমূলের সুবোধ সরকাররা প্রকাশ্য রাজপথে গোমাংস ভক্ষণ করে,হিন্দু দেবদেবীর প্রকাশ্যে অবমাননা করে । বিকৃত ইতিহাস লিখে হানাদেরদের নিপিড়নকে আড়াল করে তাদের মহিমান্বিত করে গেছে বামপন্থী তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ইতিহাসকাররা । তাদের এই ঘৃণ্য রাজনীতির কারনে শাশ্বত সনাতন ধর্ম সবচেয়ে বিপদের মুখে পড়েছে । যদিও নিজ গুণে সনাতন ধর্ম আজও নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে ।
প্রসঙ্গত,ইংরেজদের সবচেয়ে বড় উৎসব “ক্রিসমাস” বা বড়দিন । খ্রিষ্টানদের পাশাপাশি ভারতের হিন্দুরাও এই উৎসবকে ধুমধাম করে পালন করে । তখন তারা ভুলে যায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সেই অত্যাচারের ইতিহাস । ব্রিটিশদের অত্যাচারের আজও স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে গোয়ার কুখ্যাত ‘হাত কাটারো স্তম্ভ‘ । কি এই স্তম্ভ ? কেন এটি কুখ্যাত ? ভারতের সিংহভাগ হিন্দুদের এর উত্তর অজানা । স্বাধীনতার পরেও জহরলাল নেহেরুরা ব্রিটিশদের ওই নৃশংসতা সুকৌশলে গোপন করে গেছে । তাই নব প্রজন্ম ‘হাত কাটারো স্তম্ভ‘-এর ইতিহাস সম্পর্কে অবগত নয় ।
এই স্তম্ভটির নামকরণ হাত কাটারো করার পিছনে রয়েছে একজন খ্রিস্টান ধর্মকগুরু….ফ্রান্সিস জেভিয়ার । সে স্পেনের নাভারেতে জন্মগ্রহণ করে । ভারতে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের জন্য আনা হয়েছিল তাকে । কিন্তু ধর্ম প্রচারকের আড়ালে সে ছিল একজন নৃশংসতার মূর্ত প্রতীক । যারা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন, তাদের এখানে এনে বেঁধে রেখে দু’হাত কেটে দিত ওই কথিত সাধক । ইতিহাসের অন্য কোথাও আপনি এমন ঘটনার বর্ণনা পাবেন না। তাদের ইতিহাস পড়ুন। পর্তুগিজরা ভারতে এসে গোয়ায় বসতি স্থাপন করার পর, খ্রিস্টান পুরোহিতরা ভারতীয়দের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করতে শুরু করে।
এই নিপীড়ন শুরু করা খ্রিস্টান পুরোহিতের নাম ছিল ফ্রান্সিস জেভিয়ার (৭ এপ্রিল ১৫০৬ – ৩ ডিসেম্বর ১৫৫২)। ফ্রান্সিস জেভিয়ার হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল এবং সে শুরুতে খুব বেশি সাফল্য পায়নি।
ফ্রান্সিস জেভিয়ার দেখতে পেল যে হিন্দু ব্রাহ্মণরা তাঁর এবং যীশু খ্রিস্টের অনুগামীর সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যে সবচেয়ে বড় বাধা। ফ্রান্সিস জেভিয়ারের নিজের ভাষায়, ব্রাহ্মণরা ছিল তার সবচেয়ে বড় শত্রু কারণ তারাই ছিল তাদের ধর্মান্তরিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ফ্রান্সিস জেভিয়ার খ্রিস্টীয় শাসনের আশ্রয় নেয় । ভাইসরয় কর্তৃক পর্তুগিজ শাসনের সীমানা থেকে সমস্ত ব্রাহ্মণকে বহিষ্কার করার আদেশ জারি করা হয়েছিল। গোয়ার যেকোনো স্থানে নতুন মন্দির নির্মাণ বা পুরাতন মন্দির মেরামতের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এর কোনও প্রভাব না পড়া দেখে, পরবর্তী আদেশ কার্যকর করা হয় যে, খ্রিস্টান শাসনের পথে যে কোনও হিন্দু বাধা হয়ে দাঁড়ালে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। যখন এটিও সফল হয়নি, তখন পরবর্তী আদেশটি আরও কঠোরতার সাথে কার্যকর করা হয়েছিল।
রাজ্যের সমস্ত ব্রাহ্মণদের খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার অথবা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। এই আদেশের সাথে সাথে হিন্দুদের উপর, বিশেষ করে ব্রাহ্মণদের উপর ভয়াবহ অত্যাচার শুরু হয়। হিন্দু পণ্ডিত এবং বৈদ্যরা পালকিতে চড়তে পারতেন না। যারা এটা করেছে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।এমনকি তাকে জেলে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। হিন্দুদের খ্রিস্টধর্ম গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছিল। হাজার হাজার হিন্দু খ্রিস্টান হয়েছিলেন কারণ তারা খ্রিস্টান হওয়ার পর রাজকীয় সুরক্ষা পেয়েছিলেন এবং হিন্দু থাকার জন্য তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
হিন্দুদের বিবাহ ইত্যাদি উদযাপন নিষিদ্ধ ছিল। খ্রিস্টান শাসনের অত্যাচারের কারণে, হিন্দুরা বিপুল সংখ্যক দেশান্তরী হতে বাধ্য হয়েছিল। ফ্রান্সিস জেভিয়ারের ভাষায়, ধর্মান্তরিত হিন্দুদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার সময় তাদের উপাসনালয় এবং মূর্তি ধ্বংস করতে দেখে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন। হাজার হাজার হিন্দুকে ভয় দেখিয়ে, অনেককে হত্যা করে, অনেককে জীবন্ত পুড়িয়ে, অনেকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে, অনেককে রাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করে অথবা কারাগারে পুরে, খ্রিস্টধর্ম নিজেকে শান্তিপ্রিয় এবং ন্যায়পরায়ণ প্রমাণ করেছে।
হিন্দুদের উপর সংঘটিত অত্যাচারের কথা বললেই কলম কেঁপে ওঠে। ঘোরি ও গজনীর অত্যাচারী ইতিহাস আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে । পরিহাসের বিষয় হলো, যীশু খ্রিস্টের জন্য অনুগামীর সংখ্যা বৃদ্ধির বিনিময়ে, খ্রিস্টান সম্প্রদায় ফ্রান্সিস জেভিয়ারকে সেন্ট উপাধিতে ভূষিত করেছিল। ফ্রান্সিস জেভিয়ারের দেহ গোয়া রাজ্যের একটি গির্জায় সংরক্ষিত আছে। প্রতি বছর এটি কয়েক দিনের জন্য দেখার জন্য রাখা হয়।
সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা হলো, গোয়ার খ্রিস্টানরা, যাদের পূর্বপুরুষরা একসময় হিন্দু ছিলেন এবং এই একই জেভিয়ার তাদের জোর করে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করেছিলেন, তারা তাকে দেখতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। এখন মনে মনে হয় যে গোয়ায় হিন্দুরা এবং আমাদের পূর্বপুরুষরা যে অত্যাচারের মুখোমুখি হয়েছিল, তা তুলে ধরার জন্য গোয়া ফাইলস প্রয়োজন…!