এইদিন ওয়েবডেস্ক,হুগলি,০৪ সেপ্টেম্বর : বুধবার হুগলি জেলার বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার ডাকে “বিজয় সংকল্প যাত্রা”য় অংশ নিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারী । বিকেলে খানাকুল বিধানসভার রাজহাটী মধ্যাড়ঙ্গ প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা পদযাত্রা করেন তিনি । সন্ধ্যায় একটা সভায় ভাষণ দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা ৷ সব জায়গায়তেই ছিল প্রচুর ভিড় । উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো যে শুভেন্দুর সভাতে মহিলাদের ব্যাপক উপস্থিতি । তবে গতকাল শুধু আরামবাগেই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে শুভেন্দু অধিকারী যেখানেই সভা করছেন সেখানেই দেখা যাচ্ছে প্রবল ভিড় । অনেকে প্রশ্ন তুলছেন যে শুভেন্দু অধিকারীর সভায় জনপ্লাবন প্রতিষ্ঠান বিরোধী হওয়ার পূর্বাভাস নয় তো ? গতকাল খানাকুলের সভাতে ‘সফল কর্মসূচি’ করার জন্য তিনি উপস্থিত জনতা ও দলের কার্যকর্তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, “ভোট শেষ মমতা ব্যানার্জিও শেষ, ভোকাট্টা” ।
খানাকুলের সভায় তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের দুর্নীতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে কার্যত তুলোধুনো করেন বিরোধী দলনেতা । তুমি তৃণমূলকে “সর্বভুক” আখ্যা দিয়ে বলেছেন,’তৃণমূল সব খায় । তৃণমূল সর্বভুক । পাথর খায়, বালি খায়, কয়লা খায়, দেশি মদের বোতলে আড়াই টাকা করে ভাইপো নেয়,গরু পাচার করে । তৃণমূল এমন জিনিস নেই খায় না ।’
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে তিনটে রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগে চাকরি গেছে । বাম সরকারের সময় ত্রিপুরা, কংগ্রেস জমানায় হরিয়ানা এবং তৃতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের জমানায় পশ্চিমবঙ্গ । দু জায়গাতেই সরকার দুর্নীতির কথা স্বীকার করেনি । এই প্রথম কোন নির্বাচিত সরকার ১৮০৬ জনের তালিকা প্রকাশ করতে বাধ্য হল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে । বলল এগুলোকে আমরা অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ করেছি । কি করল কে ? মমতা ব্যানার্জি । স্বীকার করলো কে ? মমতা ব্যানার্জি। মমতা স্বীকার করেনি । সুপ্রিম কোর্ট বাধ্য করিয়েছে। আমি বলছি এটা অসম্পূর্ণ তালিকা । আমি তালিকা প্রকাশ করে দেবো -১৯৫৮ জন । খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইজির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে ।’
প্রতি বছর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় মমতা ব্যানার্জির ভূমিকাকে “তু খিঁচ মেরি ফটো” বলে অবিহিত করে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘প্রতিবছর জলে ভাসাবে আর ডিভিসি-এর ঘাড়ে দোষ চাপাবে । এ বছর জুন মাস থেকে তিনটে অঞ্চল এখনো পর্যন্ত পাঁচবার ভেসেছে । ভাদ্র মাসে আর একটা যোগ আছে, অপেক্ষা করছি ক্ষতি হয় কিনা । চোদ্দ বছর চার মাস ধরে কি করলেন ?’ তিনি বলেন,’তু খিঁচ মেরি ফটো । গাড়ি করে আসবে, পুলিশ দিয়ে সাজানো থাকবে । ক’দিন আগে আরামবাগে এসেছিল । আমি ছবি ছেড়েছিলাম । মমতা ব্যানার্জির ছবি তুলছে -তু খিঁচ মেরি ফটো । পাশের তরকারি বাড়িয়ে দিচ্ছে হুদা খান । হুদা কে? হুদা এই চত্বরের অন্যতম বড় বালি মাফিয়া । একটা ঘাটের টেন্ডার হলে ৫০ টা থেকে বালি তুলছে । গোটা নদী ধ্বংস করে দিয়েছে ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আজকে পুলিশকে সামনে রেখে বলছি, যারা গোটা এলাকায় বালি চুরি করল, নদীগুলোকে শেষ করে দিল, যারা নরেন্দ্র মোদিজীর পাঠানো স্বচ্ছ ভারতের শৌচালয় লুট করেছে, যারা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা কোন প্রকৃত উপভোক্তাকে দেয়নি,যারা জল জীবন মিশনে কোন বাড়িতে নলের সাহায্যে জল পৌঁছে দিতে পারল না, যারা চৌদ্দ বছর চার মাসে একটাও চাকরি দিতে পারেনি । মুখ্যমন্ত্রী বিগত নির্বাচনে কি বলেছিল ? বলেছিল ডবল ডবল চাকরি দেবো । আর এখন তো ডবল ডবল চাকরি যাচ্ছে । ২৬ হাজার গেছে আর ৩২ হাজার ঝুলছে ।’ তিনি বলেন,’বলছে পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসো ৫০০০ করে টাকা দেব। পরিযায়ী শ্রমিকরা উত্তর দিয়েছে তামিলনাড়ু থেকে রাজস্থান থেকে…. মাননীয়া শুভ নন্দন, আমরা এখানে ৫০০০০ টাকা কামাই, ওখানে যাব না, আপনার এই ঢপের চপ খাবোনা । আপনি এই টাকাটা দেবেন এপ্রিল মাস পর্যন্ত । ভোট শেষ মমতা ব্যানার্জিও শেষ,ভোকাট্টা।’
এরপর খানাকুলের বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে বিরোধী দলনেতা আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা খানাকুল, আরামবাগ, পুড়শুড়া, গোঘাট বিজিপিকে দিয়েছেন৷ নন্দীগ্রামে আমি মমতা ব্যানার্জিকে হারিয়েছি । আমরা ৭৭ টা আসন পেয়েছি । আমাদের ১৪৮ টা আসন দিন । গুনে গুনে ১৪৮ টা আসন দিন । আমরা এক বছর টাইম নেব । ভারত সরকারের জলশক্তি দপ্তরের সাহায্য নিয়ে আমরা এই এলাকায় “বন্যা” নামক শব্দটিকে চিরতরে মুছে ফেলব । কথা দিয়ে গেলাম ।’
বিরোধী দলনেতা বলেন,’কেন পরিবর্তন বাংলায় দরকার ? কৃষক যুবক ছাত্রদের স্বার্থে, সর্বোপরি আমাদের কন্যা-বোন-দিদি নারীদের স্বার্থে, ভারতীয় রাষ্ট্রবাসীদের স্বার্থে, হিন্দুদের স্বার্থে, তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতিদের স্বার্থে, রাষ্ট্রবাদী মুসলিমদের স্বার্থে পরিবর্তন করা দরকার ।’।