এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২২ নভেম্বর : ৮ দফা দাবিতে আজ শুক্রবার বাংলাদেশের রংপুর মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিল বাংলাদেশের হিন্দুরা । বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আয়োজনে এবং সনাতনী অধিকার আন্দোলন ও বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক নামে দুই গোষ্ঠীর সহযোগিতায় ওই মহাসমাবেশটির আয়োজন করা হয়েছিল রংপুরের মাহিগঞ্জ কলেজ মাঠে । কিন্তু এই সভা বানচাল করার জন্য মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশের ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীর জঙ্গিরা পুরোদমে চেষ্টা করেছিল । আজ যখন বাসে চড়ে হিন্দুরা সভাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছিল সেই সময় তাদের উপর হামলা হয় । প্রচুর হিন্দু আহত হয়েছেন । কিন্তু ক্রমাগত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের অত্যাচার দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া হিন্দুরা রক্তাক্ত আহত অবস্থাতেই সভাস্থলে পৌঁছেছিলেন । রংপুর জেলা স্কুল মাঠ থেকে সমাবেশ তুলনামূলকভাবে অনেক ছোট মাহিগঞ্জ কলেজ মাঠে সভা করতে বাধ্য করা হয় । কিন্তু শত বাধা ও হামলা সত্বেও লক্ষাধিক হিন্দু আজকের রংপুরের সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন । বহু মানুষ কলেজ মাঠ পর্যন্ত পৌঁছতে পর্যন্ত পারেনি । কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে তারা তাদের প্রিয় ইসকন পুন্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র শ্রী চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারীর বক্তব্য মন দিয়ে শুনেছেন ।
সেই বিশাল জনপ্লাবনের ভিডিও এক্স-এ শেয়ার করে বাংলাদেশের হিন্দুদের স্যালুট জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি লিখেছেন,’বাংলাদেশের হিন্দুদের স্যালুট। প্রধান উপদেষ্টা জিওবি মহম্মদ ইউনুস প্রশাসন কর্তৃক সংখ্যালঘু বাংলাদেশী সনাতনী সম্প্রদায়কে ভয় দেখানো, আধিপত্য বিস্তার ও দমন করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, “সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ মঞ্চ” আয়োজিত আজকের রংপুর সমাবেশে বাংলাদেশী হিন্দুদের অটুট চেতনা সম্পূর্ণরূপে প্রদর্শিত হয়েছিল। সমস্ত বাধা অতিক্রম করে, বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের অধিকার ও মর্যাদার জন্য ৮-দফা দাবির সমর্থনে প্রায় এক লাখ হিন্দু রংপুরের মহিমাগঞ্জ কলেজ মাঠে সমবেত হয়েছিল যারা বর্তমান প্রশাসনের দ্বারা ক্রমাগত হয়রানি, হেনস্থা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।’জয় ভবানী’ এবং ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে বাতাস ভরে ওঠে। সীমান্তের ওপার থেকে আমার বোন এবং ভাইয়েরা তোমাদের আরও শক্তি ।’
আজকের এই সভা ছিল হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সংকল্প নেওয়ার লড়াইয়ের শুভ সূচনা । সভাস্থল থেকে শুরু করে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ‘জয় শ্রীরাম’, ‘জয় ভবানী’, ‘হর হর মহাদেব’ প্রভৃতির স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে । চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারীর সঙ্গে ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে’ মহামন্ত্রে গলা মেলার লক্ষাধিক হিন্দু । চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারী বর্তমান তদারকি সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন । তিনি প্রশ্ন তোলেন, এ কেমন স্বাধীনতা? প্রতিদিন সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অমানবিক নিপীড়ন চলছে অথচ তাদের রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে । কিন্তু যারা রাষ্ট্রর গান বাতিল করার দাবি তুলছে বা রাষ্ট্রীয় পতাকার অবমাননা না করছে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না ।’
এদিকে আজ রংপুরে যোগ দিতে যাওয়া হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ । পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ এটা লিখিত বিবৃতি জারি করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত রংপুরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বানচাল করে দেওয়ার অপপ্রয়াসের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিত্রয় উষাতন তালুকদার, ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ। সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে বলা হয়, রংপুর জিলা স্কুল মাঠে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও অজ্ঞাতকারনে শেষমূহুর্তে সেই মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি প্রত্যাহার করা হয় এবং সেখান থেকে চার/পাঁচ মাইল দুরে রংপুর পুরাতন শহর মাহীগঞ্জ কলেজ মাঠে এই সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হয়। গতকাল গভীর রাতে সনাতনী জাগরণ জোটের মূখপাত্র শ্রী প্রভু চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ তার সঙ্গীদের কোন কারন না দেখিয়ে হোটেলে থাকার অনুমতি বাতিল করা হয়। এর পরেও সনাতনী সম্প্রদায় সদলবলে সমাবেশস্থলে আসার পথে নানান জায়গায় তাদের বাধা দেওয়া হয়। কালকিনীতে যোগদানেচ্ছু সনাতনীদের উপর হামলা চালিয়ে অনেককে
আহত করা হয়। ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এহেন ঘটনা বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করবে। তাঁরা ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারী হামলাকারীদের জাতীয়স্বার্থে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি হামলায় আহতদের সুচিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জােিয়ছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার এবং এই অধিকারে হস্তক্ষেপ করা নীতিবিরুদ্ধ ও আইনবিগর্হিত অপরাধের আওতায় পড়ে।’।