এইদিন ওয়েবডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান,২০ ডিসেম্বর : ভারতে নাশকতার ছক কষা পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরালাসহ একাধিক রাজ্যে থেকে ৮ কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীকে গ্রেফতার করেছে আসাম পুলিশের স্পেশাল টার্স্ক ফোর্স (এসটিএফ) । তার মধ্যে এরাজ্যে রয়েছে দু’জন । একজন সন্ত্রাসী হল মুর্শিদাবাদ জেলার মাগুরা গ্রামের বাসিন্দা ইমাজউদ্দিন শেখের ছেলে মিনারুল শেখ(৪০) এবং মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহর পাড়ার বাসিন্দা লেফটেন্যান্ট আরসাদ আলীর ছেলে মহম্মদ আব্বাস আলী (৩৩ বছর) । ধৃত সন্ত্রাসবাদীরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের আল কায়দা ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের শাখা আনসারুল বাংলা টিম(এ কিউ আই এস)-এর সদস্য । মুর্শিদাবাদ জেলার ওই ২ সন্ত্রাসী গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়ায় শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন যে পশ্চিমবঙ্গ জঙ্গিদের জায়গা, জঙ্গিরা রাজ্যসভায় যায় । পাশাপাশি তিনি পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের সতর্ক করে বলেছেন, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কারণে বিভক্ত হবেন না, এক হন । কারণ আজ বাংলাদেশে যা ঘটছে কিছুদিন পর পশ্চিমবঙ্গেও একই জিনিস ঘটবে ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের ব্লকে একটি সভা করেছিল বিজেপি । সভাটি ছিল ‘সমবায় নির্বাচনে জেহাদি হামলার ও বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নারকীয় অত্যাচারের প্রতিবাদে বিজেপির ধিক্কার সভা’ । সবার মুখ্য বক্তা ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে যা হচ্ছে কিছুদিন পরে এখানেও তাই হবে । দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তানের বিভাজন হয়েছিল । পূর্ব পাকিস্তান থেকে যখন বাংলাদেশ গঠিত হয় তখন ৩৩ শতাংশ হিন্দু ছিল সে দেশে । ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, ভারতবর্ষের সৈন্যরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করল । পাকিস্তানের সেনা নায়ক নিয়াজি ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করল ৯৩ হাজার রাজাকারকে সাথে নিয়ে । তখন বাংলাদেশের হিন্দুর সংখ্যা ছিল ২১ শতাংশ । আর আজকে মেরে মেরে তাড়াতে তাড়াতে আমরা মাত্র ৭ শতাংশ নেমে এসেছি ।
একইভাবে পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭১ সালে প্রথম জনগননায় মুসলিমদের সংখ্যা ছিল ১৪ শতাংশ । আর ২০১১ সালের শেষ জনগননায় ২৭ শতাংশ । এবারের জনগণনা শুরু হয়নি, শুরু হবে, তবে ববি হাকিম ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে তারা ৩৩ শতাংশ হয়ে গেছে ৷ ২০২৬ সালের জনগণনার পর দেখবেন পশ্চিমবঙ্গে ৩৫ শতাংশের বেশি মুসলিম হয়ে গেছে । যাবেন কোথায় হিন্দুরা ?’
তিনি হিন্দুদের মধ্যে জাতপাত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের বিভাজন প্রসঙ্গে বলেন,’ ‘ব্রাহ্মণ, ক্ষৈত্র, বৈশ্য,শূদ্র নানাভাবে নিজেদের বিভক্ত করেছেন । এখানেও বিজেপি, সিপিএম, তৃণমূল কংগ্রেস… নানাভাবে বিভক্ত । কেউ ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের অনুগামী, কেউ লোকনাথ ব্রহ্মচারী অনুগামী, কেউ ভারত সেবাশ্রম, কেউ রামকৃষ্ণ মিশন, কেউ ইসকন, কেউ আর্য সমাজ, কেউ বৈষ্ণব সমাজ, নানাভাবে বিরক্ত ।’
এরপর রাজ্যের নগর উন্নয়ন মন্ত্রী দাদা কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ‘সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু’ মন্তব্য প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,আপনারা বিভাজিত বলেই ফিরহাদ হাকিম বলছেন যে ভারতে ১৭…বাংলায় ৩৩…আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে হবে । সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে কি হয় ? সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে সংবিধান চলে না । সেকুলারিজম থাকেনা । বাংলাদেশের মতো তখন ইসলামিক দেশ হবে । মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড চলবে । শরিয়া আইন চলবে । সিপিএমের বিকাশ ভট্টাচার্য আর তৃণমূলের সুবোধ সরকার কলকাতার রাস্তায় দাঁড়িয়ে গোমাংস খান সেকুলারিজমের নামে । কিন্তু সেদিন সেকুলারিজম বলে কোন শব্দ থাকবে না । তাই আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে । এ লড়াই শুধু লড়াই নয়, টিকে থাকার লড়াই নয়, পুজো বা ধর্মকর্ম করার লড়াই নয়, এ লড়াই হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই ।’
সভাশেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুর্শিদাবাদের ২ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হওয়ার প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘এটি একটি বড় চক্র । এই চক্রের জন্য পশ্চিমবঙ্গের জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে । যেই থাকুক তাদেরকে ফেমা’তে গ্রেফতার করা উচিত ।
পশ্চিমবঙ্গ জঙ্গিদের জায়গা । জঙ্গিরা রাজ্যসভায় যায় । হাসান ইমরানকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি । যে ছিল নিষিদ্ধ সংগঠন সিমির লোক । মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণকে সমর্থন করেন । জঙ্গিরাই রাজ্য চালাচ্ছে ।’ এরাজ্যে ইসলামি সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড রুখতে মামলার তদন্তভার এনআইএ এবং ইডির হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন জানান শুভেন্দু অধিকারী ৷।

