এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৩ মার্চ : ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী বলেছেন,’কে কী চেয়ারে বসবে, সেটা তো আমরা ঠিক করে দেব। শেষে সিদ্ধান্ত আমরা নেব, কে চেয়ারে বসবে।’ এদিকে বাংলার একজন ইসলামি ধর্মগুরুর মুখে এহেন বক্তব্যকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না রাজ্য বিজেপির যুবনেতা ও হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি । তিনি ত্বহা সিদ্দিকীর এই মন্তব্যকে বাংলার হিন্দুদের জন্য সতর্কবার্তা হিসাবে দেখছেন । পাশাপাশি তিনি ‘পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সমাজের মানুষদের চোখ খুলে’ এবং ‘সন্তানের ভবিষ্যৎ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আজই ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘সময় কম !’
এই বিষয়ে তরুনজ্যোতি তিওয়ারি আজ এক্স-এ লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সমাজের উদ্দেশ্যে—আপনাদের চোখ খুলুন, সময় কম!’ তিনি লিখেছেন, ‘সম্প্রতি ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ত্বহা সিদ্দিকী একটি মন্তব্য করেছেন, যা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে। তিনি বলেছেন,“আসল মাল তো আমরা। ওরা দু’জনে কে কী চেয়ারে বসবে, সেটা তো আমরা ঠিক করে দেব। শেষে সিদ্ধান্ত আমরা নেব, কে চেয়ারে বসবে।”
আরও স্পষ্ট করে কয়েকদিন আগে ত্বহা সিদ্দিকী বলেছেন, “আমার মনে হচ্ছে নওশাদকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শুনতে হবে। যা বলবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই শুনতে হবে। আর যদি না শোনে, আমার মনে হচ্ছে পীর সাহেব পরিবারের কোনও একজনকে ভাঙড়েই দাঁড় করাবেন উনি।”
তরুনজ্যোতির কথায়,’এই বক্তব্য কোনো সাধারণ মন্তব্য নয়। আজ পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৯০টিরও বেশি বিধানসভা কেন্দ্রে একটাই ভোটব্যাংক মুখ্য—সংখ্যালঘু ভোট। আর সেই ভোটব্যাংক ধরে রাখতেই হিন্দু সমাজকে উপেক্ষা করা হচ্ছে: মহরমের জন্য দুর্গাপুজোর বিসর্জন বন্ধ, সংখ্যালঘুদের অনুরোধে স্কুলে সরস্বতী পুজো বন্ধ,অনেক এলাকায় হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে গেলে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন, কিন্তু সংখ্যালঘুদের জন্য সব নিয়ম শিথিল।’
তিনি লিখেছেন,’ত্বহা সিদ্দিকীর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, ক্ষমতার ভাগ বসানো ঠিক করছেন কিছু নির্দিষ্ট স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। আরও একটি গুরুতর বিষয়, যা অধিকাংশ মানুষ এড়িয়ে যান—পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান জনসংখ্যা এখন প্রায় ৩৭ শতাংশ। যদি এটি ৫০ শতাংশ ছুঁয়ে ফেলে, তখন কি হবে? বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্থার দিকে তাকান। ভাষা এক, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান হওয়ায় সেখানে হিন্দুরা আজ প্রান্তিক, তাদের অধিকার হরণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আপনাদের অবস্থা তখন অনেকটাই সেইরকম হতে পারে, যদি এখনই সতর্ক না হন।’
বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের এরাজ্যে আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তিনি লিখেছেন, ‘এখানেই শেষ নয়। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকছে। তাদেরকে তৃণমূল সরকার সাহায্য করছে—ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড সব করে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, তাদের ভোটার তালিকায় নাম তোলার ব্যবস্থা করছে, ফলে হিন্দুদের ভোটের ওজন ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এই কার্ড করার নামে ভারতীয় নাগরিকদের অধিকার খর্ব করে, আপনার ট্যাক্সের টাকায় এই অবৈধ অনুপ্রবেশ কারীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’
ইসলামি রাষ্ট্রগুলির দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তরুনজ্যোতি তিওয়ারি লিখেছেন,’কিছু মনে রাখুন—ভারতবর্ষ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, কারণ এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব। কোনও এমন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ দেখাতে পারবেন কি, যেখানে ক্ষমতায় অন্য ধর্মের লোকেরা আছে? উত্তর জানা।এই ধর্মনিরপেক্ষতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল সরকার আজ একতরফাভাবে হিন্দুদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে।’ সব শেষে তিনি এরাজ্যে হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন,’২০২৬ সালের নির্বাচন আপনার অধিকার রক্ষার শেষ সুযোগ হতে পারে।আপনার অধিকার, সন্তানের ভবিষ্যৎ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আজই ঐক্যবদ্ধ হোন। নিজের ভবিষ্যৎ নিজে ঠিক করুন। এই রাজ্য সব মানুষের, কিন্তু পক্ষপাতমূলক নীতির বিরুদ্ধে আপনাকেই প্রতিবাদ জানাতে হবে।’
প্রসঙ্গত,গত কয়েক দিন ধরেই ত্বহা সিদ্দিকীর একের পর এক মন্তব্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে । বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের সাম্প্রতিক বাকযুদ্ধ প্রসঙ্গে তাদেএ নাম নিয়ে ত্বহা সিদ্দিকী বলেন,’হুমায়ুন কবীর ও শুভেন্দু অধিকারী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁরা কে কী বলছেন, তাঁদের ছেঁড়াছেঁড়ি করতে দিন। আসল মাল তো আমরা। ওরা দু’জনে কে কী চেয়ারে বসবে, সেটা তো আমরা ঠিক করে দেব। শেষে সিদ্ধান্ত আমরা নেব, কে চেয়ারে বসবে। আমরা ভাল মানুষ বেছে নেব। একটা জিনিস আমি বলি, শুভেন্দু অধিকারী কী করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করছেন, অধীর চৌধুরী কী করছেন, এটা বাংলার মানুষ দেখবেন না।’ তিনি আরও বলেন,’আমাদের যে কোটি কোটি ভক্ত রয়েছে, তাঁদের একটা নির্দেশ দিচ্ছি, যারা মানুষের পাশে থাকবে, যারা উন্নয়ন করবে, যারা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠবে, তাদের পাশে আমরা ছিলাম, থাকব।’ অর্থাৎ তিনি মুসলিম ভোটকে এককাট্টা হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে ।
যদিও বিজেপি জানিয়েছে যে তারা মুসলিম ভোটের প্রত্যাশী নয় এবং হিন্দু ভোটেই এরাজ্যে ক্ষমতায় আসবে । কিন্তু ২০২৬ সালে এরাজ্যের মুসলিম ভোট ব্যাংক নিজেদের দিকে টানতে কোনো কসুর করছে না রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । কয়েকদিন আগেই ফুরফুরা শরিফে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । ইফতারে মমতার পাশে দেখা গিয়েছিল ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী ও কাশেম সিদ্দিকীকে। পরের দিন পরদিন পার্ক সার্কাসেও ইফতারে মমতার পাশে ছিলেন কাশেম। বিজেপির অভিযোগ যে মুসলিদের ভোট টানতেই মমতা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ৷।