🌺 প্রকৃতপক্ষে সুখ ও আনন্দ এক বস্তু নহে । আনন্দই আমাদের সকলের লক্ষ্য, কিন্তু ভয়ানক নির্বুদ্ধিতাবশতঃ আমরা ক্ষণিক সুখ ও তৃপ্তিকেই আনন্দ মনে করি। কেন এরূপ হয় তাহা এখনই প্রদর্শিত হইবে। অন্তিম লক্ষ্য যে সত্যই আনন্দ তাহা আমরা অন্তরে অনুভব করি ; কিন্তু আমাদের ভ্রন্তিবশতঃ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সুখ বা তৃপ্তি ইহার স্থান অধিকার করিয়াছে এবং ঐ সুখই চরম উদ্দেশ্য বলিয়া গণ্য হইয়াছে।
এভাবে আমরা দেখিতে পাই কোন অভাব পূরণ, দৈহিক বা মানসিক কোন ক্লেশ দূরীকরণ – তাহা খুব সামান্যই হউক অথবা অতিশয় তীব্রই হউক,- এবং এসব হইতে আনন্দ প্রাপ্তি, ইহাই আমাদের অন্তিম উদ্দেশ্য । কিন্তু কেন যে আনন্দ পাইতে হইবে এ প্রশ্ন আর আমরা করিতে পারি না ; কারণ ইহার কোন উত্তর দেওয়া যায় না । আমরা যাহা কিছু করি না কেন ব্যবসা করি, অর্থোপার্জন করি, বন্ধুত্বের চেষ্টা করি, বই লিখি, জ্ঞানার্জন করি, রাজ্যশাসন করি, লক্ষ লক্ষ টাকা দান করি, দেশ বিদেশ পর্যটন করি, যশের আকাঙক্ষা করি, দরিদ্রকে সাহায্য করি, বিশ্বপ্রেমিক হই অথবা দেশের জন্য আত্মাহুতি দিয়া শহীদ হই – আনন্দই আমাদের অন্তিম উদ্দেশ্য । এবং ইহাই প্রদর্শিত হইবে যে, আমাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য দৃঢ়ভাবে দৃষ্টিগােচরে রাখিলে, ঈশ্বর অন্বেষণ আমাদের কাছে বাস্তব হইয়া ওঠে। সাধনার লক্ষ লক্ষ ধাপ থাকিতে পারে, মধ্যবর্তী কর্ম ও অভিপ্রায় অসংখ্য হইতে পারে; কিন্তু অন্তিম উদ্দেশ্য – নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ প্রাপ্ত এবং তাহা সুদীর্ঘ কর্মবন্ধনের মধ্য দিয় হইলেও সর্বদা একই থাকিবে ।’
শ্রী শ্রী পরমহংস যোগানন্দ রচিত “ধর্ম-বিজ্ঞান” থেকে সংগৃহীত ।