এইদিন ওয়েবডেস্ক,নন্দীগ্রাম(পূর্ব মেদিনীপুর),১০ নভেম্বর : “একজন পরিবারবাদী, দুর্নীতিগ্রস্ত, বেকারদের সর্বনাশকারী, হিন্দু নিধনকারী এবং প্রতিহিংসা পরায়নকারীকে মুখ্যমন্ত্রী করে ভুল করেছি” বলে মন্তব্য করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । আজ সোমবার “নন্দীগ্রাম ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির শহীদ শ্রদ্ধাঞ্জলি ও শহীদ স্মরণ” সভার শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আমরা ভুল করেছি একজন পরিবারবাদী, দুর্নীতিগ্রস্ত, বেকারদের সর্বনাশকারী, হিন্দু নিধনকারী এবং উত্তর কোরিয়ার প্রশাসকের মতো প্রতিহিংসা পরায়নকারীকে এখানে মুখ্যমন্ত্রী করার ক্ষেত্রে আমাদের অবদান ছিল । আমরা স্বীকার করি যে আমরা ভুল করেছি । জনগণকে নিয়ে আমরা আসল পরিবর্তন আনব । এরাজ্যে বোতলের পরিবর্তন হয়েছে মদের পরিবর্তন হয়নি ।’
আজ সোমবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামের “নন্দীগ্রাম ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির শহীদ শ্রদ্ধাঞ্জলি ও শহীদ স্মরণ” সভার আয়োজন করা হয়েছিল গোকুলনগর করপল্লীর পেট্রাল পাম্পের সামনে ৷ সেই সভাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামের মানুষের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের একগুচ্ছ অভিযোগ তোলেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি মমতাকে নিশানা করে বলেন,’আপনি দুটো ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছেন । প্রথমতঃ, আন্দোলনের নেতা যারা তাদেরকে যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল আপনি ত্রুটি যুক্ত মামলা প্রত্যাহার করেছেন বলে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ খারিজ করে দিয়েছে৷ আপনি ও আপনার সরকার কেন ত্রুটিযুক্ত মামলা প্রত্যাহার করলেন ? ক্ষমা করা যাবে ? বহু লোক ওই মামলার আসামি আছে, আমার কয়েকজন সাথীও আছে। আপনার সরকারের ভুলের জন্য নন্দীগ্রামের ১১৭ জন আন্দোলনকারী ৯টা জামিন অযোগ্য ধারার(খুন) মামলায় জেলে যাবে না বাড়িতে থাকবে সেই চিন্তায় তাদের ঘুম হয় না । এর জন্য দায়ী কে ? তাই আমি নয়, আপনি । সরকার আপনি চালিয়েছেন । আপনার ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল ।’
শুভেন্দু বলেন,’আর দ্বিতীয় কি করেছেন ? ২০০৭ সালের ১০ই নভেম্বর আদিত্য বেরা সত্যেন গোল থেকে শুরু করে যে ১১ জন অপহৃত হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৭ জন ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য আপনার দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে৷ কিন্তু আপনার সরকার সেই সার্টিফিকেট দেয়নি । ভারতীয় সংবিধানের নিয়ম আছে যে ৭ বছর হয়ে গেলে যদি খোঁজ না পাওয়া যায় তাহলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয় । সাত বছর পরে পঞ্চায়েতের ডেথ সার্টিফিকেট দিতে কোন অসুবিধা ছিল না ।’
এরপর উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,’শুনে রাখুন আপনারা, আদিত্য বেরার মেয়ে সাক্ষী এখানে, আমি হাইকোর্ট করে নিজের খরচে এদেরকে সোনাঝুড়া এবং গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ডেট সার্টিফিকেট পাইয়ে যাওয়ার কাজ করেছি । যে কাজ মমতা ব্যানার্জির করা উচিত ছিল, সেই কাজটা শুভেন্দু অধিকারী করেছে ।’
তৃণমূলের নেতাদের “পরিযায়ী” হিসাবে উল্লেখ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’খত কাটবো আমরা আর দই খাবে না আপনি ? ভাইপো কোথায় ছিল তখন ? হেলিকপ্টারে করে ঘোরে । তিনি আপনার কোম্পানির মালিক হয়েছেন । বড় বড় কথা বলেন । পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলেন যে “তোর বাপকে ডাক” । কোথাও ছিল না । আপনি দুটো অন্যায় করেছেন । এই অন্যায়ের ক্ষমা নন্দীগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মা করবে না । হিন্দু হতে পারে অথবা মুসলিম হতে পারে ।’ তিনি বলেন,’রাধারানী বাড়িসহ গোকুলনগর এর মালপাড়া, অধিকারী পাড়া, গাদুপাড়া,৩০০ বাড়ি আক্রান্ত হয়েছে। মায়ের সামনে মেয়ে এবং মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণ করা হয়েছে৷ ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ সকাল ৮ টার সময়… এরা আপনাকে ক্ষমা করবে না ।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামের মানুষদের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলদ শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’২০১২ সালের ১৪ ই মার্চ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে কৃষক দিবস উপলক্ষে নন্দীগ্রাম সীতানন্দ কলেজের মাঠে সভা করে আপনি করেছিলেন, সাংসদ হিসেবে আমি ছিলাম,, ঘোষণা করেছিলেন সরকারি অর্থে নন্দীগ্রামে একটা বড় শহীদ বেদী বানাবো । বানাননি । আপনি বলেছিলেন গোকুলনগর অঞ্চলে ক্লাস ওয়ান থেকে টুয়েলভ রেসিডেন্সিয়াল বিদ্যালয় বানাবো । গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকবে, খাবে পড়বে এবং দ্বাদশ শ্রেণী পাস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য বেরিয়ে যাবে । জমি দেওয়ার পরেও আপনি করেননি । সোনাঝুরাতে আইটিআই কলেজ তৈরি কথা ছিল আপনার । কিন্তু আইটিআই আপনি করেননি । সুব্রত মুখার্জিকে ধরে মোদীজি সরকারের গ্যারান্টি নিয়ে আমি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে এসেছিলাম। ওখানে আপনার টাকা নেই, ভারত সরকারের টাকা । পাঁচ শতাংশ সুদের এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ঋণ ।’ তিনি বলেন,’নন্দীগ্রামের প্রত্যেকটা বাড়িতে মাতা পিসি ৭০ লিটার করে জল প্রতিদিন যাবে…. পাইপগুলো পড়ে আছে জং ধরছে । কিন্তু প্রতিহিংসাতে আপনি জল দেননি ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’টাটা কে তাড়ানোর সময় চকলেট বা ক্যাডবেরি খাওয়া অনশনে আমি যাইনি,কোথাও দেখতে পাবেন না আমায়। টাটা বেকার যুবকদের চাকরি দিতে এসেছিল কিন্তু তাদের তাড়ানো হয়েছে । আসল পরিবর্তনের এপিসেন্টার হলো নন্দীগ্রাম । ১৪ ই মার্চ না হলে দিদি থেকে দিদিমা হতেন মুখ্যমন্ত্রী কোনদিন হতে পারছেন না । আপনি নিজেকে নন্দীগ্রামের মালিক ভেবেছিলেন ? আমি ওখান থেকে এখানে ছুটে এসেছেন আমাকে হারানোর জন্য । কিন্তু নন্দীগ্রামের হিন্দুরা আমাকে জিতিয়ে আপনাকে ব্যাক টু দাতা প্যাভিলিয়ন করে দিয়েছে ।’ সব শেষে নন্দীগ্রামের মানুষদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন,’তাই আপনাদের কাছে আমি বলব শুভেন্দু অধিকারী যদি কোনদিন সুযোগ পায় আপনাদের ঋণ শোধ করবে । আমার শরীরের চামড়া কেটে যদি আপনাদের পায়ের জুতো বানিয়ে দি তাহলে আপনাদের ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না ।’
এদিন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকেও একহাত নিয়েছেন বিরোধী দলনেতা । তাঁর কথায়,সিপিএমের সময়েও পুলিশ গর্তে ঢুকে ছিল৷ এখন যেমন পুলিশ গড়তে ঢুকে থাকে৷ তৃণমূল বললে গর্তে থেকে বেরোয়৷ তখনো পুলিশ গর্তে ঢুকে ছিল৷ পরিবর্তন কিছুই হয়নি৷ বোতল বদল হয়েছে মদটা পুরনোই আছে। কোন পরিবর্তন হয়নি৷’ তিনি বলেন,’যে কারণে এখনো আরজি করের অভয়া বিচার পায় না । দুর্গাপুরের আই কিউসিতে এমবিবিএস-এর ছাত্রী বিচার পায় না । প্রত্যেকদিন ছোট ছোট বাচ্চা মেয়ে ধর্ষণ হয়, খুন হয়। কিন্তু এদের দেখা পাওয়া যাবে না । এদের দেখা পাওয়া যায় তৃণমূলের মিটিংয়ে জলের বোতল গুণতে৷ ওদের দেখা পাওয়া যায় কৃষ্ণনগরের মহুয়া মিত্রের বিয়ের অনুষ্ঠানে, কেউ দু’বার খাচ্ছে নাকি তার হিসাব রাখতে ।’।

