এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২২ আগস্ট : বিজেপির শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ‘বাঙলার অস্মিতা রক্ষা’র নামে সরব হচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি, তার দল এবং শাসকদল আশ্রিত কিছু সংগঠন । তবে মমতার আসল উদ্দেশ্য যে ২০২৬ সালের বিধানসভার ভোটের আগে বাঙালি সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগানো, সেটা সকলেই উপলব্ধি করছেন । আজ কলকাতায় সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে এসে মমতা ব্যানার্জির বাঙালি অস্মিতা রক্ষার পাল্টা জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, ‘বিজেপি সরকার সগর্বে বাংলা ভাষা আর বাংলা সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরাই বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছি।’ তাঁর কথায়, ‘বিকশিত বাংলা, মোদির গ্যারান্টি।’ আজ একটা নতুন স্লোগানে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেছেন, ‘বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই!’
আজ শুক্রবার কলকাতায় যশোর রোড মেট্রো স্টেশনে ১৮৪১ কোটি টাকা দিয়ে শিয়ালদহ- হাওড়া-কলকাতা এয়ারপোর্ট মেট্রো প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী । পরে দমদমের জেল ময়দানে দলের “পরিবর্তন সংকল্প সভা”য় যোগ দেন তিনি । সভাতে প্রধানমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন । তিনি বলেছেন, ‘জনসংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্যের মধ্যে অন্যতম । তাই পশ্চিমবঙ্গ যদি না এগিয়ে যায় তাহলে বিকশিত ভারতের স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে । বিজেপি মনে করে বাংলা উদয় হলেই বিকশিত ভারতের জয় হবে । সেই কারণে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিগত ১১ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ কে লাগাতার সাহায্য করে গেছে । ন্যাশনাল হাইওয়ের জন্য বিগত কংগ্রেস সরকার দশ বছরে যা দিয়েছে তার থেকে তিনগুণ বেশি দিয়েছে বর্তমান সরকার । রেলের বাজেটও পশ্চিমবঙ্গের জন্য তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়নের সামনে একটা বড় বাধা আছে । আর সেই বাধা হলো, কেন্দ্র যত টাকা উন্নয়নের জন্য রাজ্যে পাঠায় তার অধিকাংশ টাকা লুট করে নেওয়া হয় ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে টাকা ভারত সরকার পাঠায় তা আপনাদের জন্য খরচা হয় না । সেই টাকা আমার মহিলাদের জীবন সহজ করার জন্য খরচ করা হয় না । ওই টাকা তৃণমূলের ক্যাডারদের জন্য খরচ করা হয় । এই কারণে গরিব কল্যাণের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকে পিছিয়ে আছে ।’ তিনি বলেন,
‘একই অবস্থা কয়েক বছর আগে আসামেও ছিল । ত্রিপুরারও একই দশা ছিল । কিন্তু যখন থেকে আসলাম এবং ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার এসেছে তখন থেকে গরিব কল্যাণ যোজনার ফায়দা সাধারণ মানুষ পাচ্ছে । আজ এই দুই রাজ্যে ঘর ঘর জল সরবরাহের কাজ দ্রুত চলছে । আয়ুষ্মান যোজনায় ৫ লাখ পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা প্রতিটা গরিব মানুষ পাচ্ছে । গরিবদের পাকা ঘর নির্মাণ হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত প্রকল্পের সুবিধার সাধন মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গেলে এখানে বিজেপিকে আসা খুব জরুরী ।’
প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মাটি ভারতবর্ষকে সময় সময় নতুন চেতনা দিয়েছে । এই মাটি পুনর্জাগরণের কেন্দ্র ছিল । এই ভুমি সেই অমর বাণীর কেন্দ্র : ‘জাগো ওঠো নবজীবনের গানে, নব আলোক জাগাও প্রাণে প্রাণে’ । কিন্তু আজ পশ্চিমবঙ্গের নতুন আলোর দরকার । বাস্তবিক পরিবর্তন দরকার । স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গ প্রথমে কংগ্রেস এবং পরে বামপন্থীদের লম্বা জমানা দেখেছিল । এরপর ১৫ বছর আগে আপনারা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং মা- মাটি-মানুষের উপর ভরসা করেছিলেন । কিন্তু পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেছে৷ নিয়োগ দুর্নীতির কারণে নব প্রজন্মের জীবন খারাপ হয়ে গেছে । মেয়ে বোনেদের উপর অত্যাচার বেড়েছে । দুর্বৃত্তায়ন আর ভ্রষ্টাচার তৃণমূল সরকারের পরিচিতি হয়ে গেছে । এটা নিশ্চিত যে যতদিন তৃণমূল সরকার আছে ততদিন পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন অবরুদ্ধ থাকবে। এই কারণে আজ পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটা মানুষ বলছে যে তৃণমূল গেলে তবেই আসল পরিবর্তন হবে৷’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১ শতাব্দীর মধ্যে ২৫ বছর তো চলেই গেছে । আগামী সময় বাংলার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ । তাই আমাদের এ সময় হেলায় যেতে দিলে হবে না । বাংলায় দরকার আসল পরিবর্তন । এমন পরিবর্তন যা স্লোগানে নয়, কাজে প্রমাণ পাওয়া যাবে । পরিবর্তন হলো শিল্পায়নের । প্রতিটা বাড়ির ছেলে মেয়ে ঘরে বসে চাকরি পাবে । পরিবর্তন যা মেয়েদের সুরক্ষা দেবে । বাড়ি এবং দোকানকে আগুনে পোড়ার হাত থেকে বাঁচাবে । পরিবর্তন যা কৃষকদের সুবিধা দেবে । কৃষকদের সম্মান দেবে । ফসলের ন্যায্য মূল্য দেবে । পরিবর্তন অপরাধী এবং দুর্নীতিগ্রস্তরা সরকারে নয় জেলে থাকবে । এমন একটা পরিবর্তন যেখানে সুশাসন আসবে । গরিবরা সম্মানের জীবন যাপন করবে । আর এই সাচ্চা পরিবর্তন একমাত্র বিজেপি আনতে পারে ।
তিনি বলেন,’তাই বাংলার প্রতিটি ঘরে প্রতিটা কোনায় একটাই আওয়াজ উঠুক : “বাঁচতে চাই বিজেপি তাই” । এটাই বাংলার আসল ডাক । এটাই বাংলার ভবিষ্যৎ ।’।

