এইদিন ওয়েবডেস্ক,সুন্দরবন(দক্ষিণ ২৪ পরগনা),০৫ আগস্ট : মানবতার কল্যাণে প্রচার করতে গিয়ে কট্টরপন্থীদের রোষের মুখে পড়ল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবন এলাকার ‘হেজবুত তওহীদ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা । সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ওই সংগঠনের কাজ উগ্রপন্থা, সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা । কিন্তু অভিযোগ, ‘কাফের’ তকমা দিয়ে সংগঠনের সদস্যদের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে মাটির ঘরটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে আশপাশের গ্রামের বাসিন্দা ‘কট্টরপন্থী’দের দল । শুধু তাইই নয়,’বসতবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, মারধর,মহিলাদের শ্লীলতাহানীর চেষ্টা ও প্রাণনাশের হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কট্টরপন্থীদের বিরুদ্ধে । এদিকে
হামলার আশঙ্কায় ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে সংস্থার সদস্যদের । এনিয়ে স্থানীয় মন্দির বাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে সংস্থার লোকজনদের দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে । শেষে ডালপার সুন্দরবন জেলার পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন সংস্থার কর্মকর্তারা ।
গত ৪ আগস্ট ‘হেযবুত তওহীদ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’-এর সম্পাদিকা রাফিউন্নেশা পাইক সহ ৩৩ জনের নাম সম্বলিত পুলিশ সুপারকে দেওয়া অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে,’আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীগন দক্ষিণ ২৪ পরগনা (সুন্দরবন) জেলার মন্দির বাজার থানার অধীনস্থ বৃন্দাবনপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। আমরা দেশের আইন- শৃঙ্খলা,সংবিধান মান্যকারী, শান্তিপ্রিয় ভারতীয় নাগরিক। নিম্নলিখিত আসামীগণ (যাহাদের তালিকা শেষ পৃষ্ঠায় দেওয়া হইল) তাদের সাঙ্গপাঙ্গ দলীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে গত ২৯.০৭.২০২৩ ইং তারিখে দুপুর প্রায় ১ টার সময় আমাদের বসতবাড়িতে হামলা চালায় । উক্ত হামলায় আমাদের সহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি বাড়িতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ।’
তাঁরা জানান,’আমরা হেযবুত তওহীদ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সদস্য। হেযবুত তওহীদ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন সম্পূর্ণ ধর্মীয় অরাজনৈতিক সংগঠন। এই সংগঠনের কাজ হলা মানবতার কল্যাণে ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের সামনে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষার আলোকে উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, মাদক, নারী নির্যাতন,হুজুগ, গুজব, ধর্ম ব্যবসা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে জনসচেতনা সৃষ্টি করা। আমরা হেযবুত তওহীদ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন উপমহাদেশের প্রখ্যাত জমিদার পন্নী পরিবারের উত্তরসূরী জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে, স্বতস্ফূর্তভাবে সম্পূর্ণ নিজেদের আর্থিক সক্ষমতায় এ মহৎ কাজগুলো করে যাচ্ছি। আমরা মনে করি, ভারতবর্ষের মানুষ তথা হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম ও অন্যান্য জাতি-ধর্ম শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। কিন্তু এক শ্রেণির উগ্র, ধর্মান্ধ, ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী সাধারণ মানুষকে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মিথ্যাচার করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই শ্রেণিটি বিভিন্ন সময় মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে, ঈমানকে পুঁজি করে ভুল খাতে প্রবাহিত করে জাতিবিনাশী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে। তাই আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষের কাছে যদি ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা, উদারতা, মানবতা,সহনশীলতা ইত্যাদি যৌক্তিক উপায়ে তুলে ধরা যায় তবে তারা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে আর ভুল খাতে প্রবাহিত করে জাতি বিনাশী কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারবে না। আমরা এসব কাজ করে যাচ্ছি সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ ভাবে,কোনো বৈষয়িক স্বার্থ ছাড়া শুধুমাত্র দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ধর্মীয় কর্তব্য ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে। আমাদের কোনো রাজনৈতিক বা দলীয় অভিসন্ধি নেই ।’
সংগঠনের তরফে সুন্দরবন জেলার মন্দির বাজার থানার ভূমি আঁচনা গ্রামের বাসিন্দা কিরবীয়া মোল্লা,বৃন্দাপুর গ্রামের বাসিন্দা মৌলানা আব্দুশ সালাম মল্লিকসহ ১৬ জনের একটি নামের তালিকা দিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ‘আমাদের এই সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ মহতি উদ্যোগে বাধা দিতে উক্ত আসামীগণ যারা এলাকায় বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচিত; তারা বিভিন্ন সময় ইসলাম ধর্মের নামে রাজনীতি করে এবং রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে ধর্মকে ব্যবহার করে থাকে। আমাদের বক্তব্য দ্বারা তাদের কৃত ধর্মীয় অপকর্মের স্বার্থে আঘাত লাগায় আমাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মাঝে মিথ্যা গুজব রটিয়ে বিশেষ করে মুসলমান সম্প্রদায়ের মাঝে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে যে আমরা নাকি ইসলামের শত্রু, ইসলামের ক্ষতি করার জন্য দাঁড়িয়েছি,আমরা নাকি কাফের, নাস্তিক, খৃস্টান ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু সত্যিকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লী, মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ তারা আমাদের সম্পর্কে ভালো জানে এবং আমাদের সমর্থনও করে থাকে। কিন্তু উল্লিখিত চিহ্নিত সন্ত্রাসী, উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি আইন, আদালতের তোয়াক্কা না করে উক্ত ঘটনার দিন আমাদের উপর অতর্কিত হামলা ও আক্রমণ চালায়।’
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য সদস্যারা জানিয়েছেন,’আমরা গত ২৫.৭.২০২৩ তারিখ হুগলী জেলার পাণ্ডুয়ার উৎসব লজে “উগ্রবাদ, ধর্ম ব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতা নিরসনে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষার বিকল্প নেই” শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলাম। স্থানীয় পুলিশ,প্রশাসন ও আইনের অনুমোদন সাপেক্ষেই এই অনুষ্ঠান হয়েছিল। কিন্তু নিম্নলিখিত আসামীগণ হুমকি দিয়ে আমাদের ২৯.৭.২০২৩ তারিখের অনুষ্ঠান করতে দেয়নি বরং আমাদের স্থানীয় বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। বর্তমানে তারা আমাদের বাড়ি ঘেরাও দিয়ে রেখেছে এবং আমাদের রীতিমত হুমকি-ধামকি দিচ্ছে, আমাদের বাড়িঘরে যেতে দিচ্ছে না। এমতাবস্তায়, আমরা অতি কষ্টে অন্যত্র দিনাতিপাত করছি, সর্বদা আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয়। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাদের প্রাণনাশেরও আশঙ্কা রয়েছে।’
তাঁরা পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, ‘আপনার কাছে আবেদন এই যে, উক্ত বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেশে আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, মতামত প্রকাশ করার ন্যায়সঙ্গত অধিকার সাপেক্ষে ও ধর্মীয়, সামাজিক অধিকার সমুন্নত করার জন্য আবেদন করছি পাশাপাশি আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ কল্পে থানা কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে ।’
সংস্থার ডিরেক্টর কাজী আবদুল রউফের অভিযোগ, ‘আমাদের উপর হামলা হল,আমাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর হল অথচ পুলিশ উলটে আমাদের সংস্থার ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করল ।’ তাঁর অভিযোগ,’আমরা মন্দির বাজার থানায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশ আমাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় ।’ সুন্দরবনের মন্দির বাজার থানার পুলিশের ভূমিকায় তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,’পুলিশের যদি এই ভূমিকা হয় তাহলে আমরা কোথায় যাবো ? কিভাবে আমরা ন্যায় বিচার পাবো ?’ যদিও অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ বা অভিযুক্তদের তরফে কোনো মতামত পাওয়া যায়নি।।