জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,১৪ এপ্রিল : আজ দক্ষিণ ২৪ পরগণার কোনো এক প্রত্যন্ত গ্রাম তো আগামীকাল উত্তরবঙ্গ। রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তের চিত্তরঞ্জন থেকে পরের দিন পূর্ব প্রান্তের নদীয়ার কোনো এক গ্রামে। এইভাবেই প্রায় গত ছ’মাস ধরে পরিবারের সদস্যদের দূরে সরিয়ে, নিজেদের মনের যন্ত্রণা বুকে চেপে রেখে রাতের পর রাত যাত্রা মঞ্চ মাতিয়ে হাজার হাজার মানুষের মনোরঞ্জন করে চলেছেন ওরা। নিজেদের সঙ্গে সঙ্গে পরোক্ষভাবে কয়েক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করছে। ওদের পরিচয় ওরা যাত্রা শিল্পী। শত কষ্টের মাঝেও সমাজের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতার কথা ভোলেননি ওরা। শনিবার সংগ্রামী যাত্রা প্রহরীর উদ্যোগে এবং পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা সম্মেলন ও কলকাতা যাত্রা কর্মী ইউনিয়নের সক্রিয় সহযোগিতায় বাগবাজারের ফণীভূষণ বিদ্যাবিনোদ যাত্রামঞ্চে একটি স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের পাশাপাশি বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হয়।
কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক শাখার সহযোগিতায় শিবির থেকে মোট চল্লিশ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত রক্ত সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সমস্ত রক্তদাতা যাত্রা জগতের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরে উপস্থিত ব্যক্তিদের সুগার ও রক্তচাপ পরীক্ষার পাশাপাশি ইসিজি করা হয়। রক্তদাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য শিবিরে উপস্থিত ছিলেন যাত্রা জগতের ‘লিভিং লিজেন্ড’ রুমা দাশগুপ্তা, বিশিষ্ট পালাকার তথা অভিনেতা মঞ্জিল ব্যানার্জ্জী, অমিতকান্তি ঘোষ, মিতালি চক্রবর্তী প্রমুখ।
বিশিষ্ট শিল্পী তথা অন্যতম রক্তদাতা রুম্পা ভদ্র বললেন,’সেভাবে প্রচারের আলোতে না এলেও আমরা শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকি। রক্তদান তো এক মহতী কর্ম। এই কাজে যুক্ত থাকতে পেরে খুবই গর্ব অনুভব করছি। আগামী দিনেও আমরা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার চেষ্টা করব।’
শত ব্যস্ততার মধ্যেও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার জন্য উদ্যোক্তা ও শিল্পীদের ভূয়সী প্রশংসা করে ওয়েষ্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স সোসাইটির অন্যতম সদস্য তথা একাধিক রক্তদান শিবিরের আয়োজক সৌগত গুপ্ত বললেন,’রাতের পর রাত জেগে ও দীর্ঘপথ অতিক্রম করা জনিত ক্লান্তিকে দূরে সরিয়ে রেখে যেভাবে শিল্পীরা রক্তদান করতে এগিয়ে এসেছেন তাতে কোনো প্রশংসায় যথেষ্ট নয়। আজও সমাজে শিল্পীদের একটা আলাদা প্রভাব আছে। আমার বিশ্বাস উনাদের দেখে আরও বহু মানুষ রক্তদান করতে এগিয়ে আসবেন। এরফলে বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংকে রক্তের ঘাটতি কিছুটা মিটবে।’।