প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধামান,০৩ মার্চ : সেন যুগের কাহিনী এখন শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতাতেই জানান দেয়।তবে ‘অজয় নদ’ যেন আজও সেই ’সেন যুগের’ আধ্যাত্মিক ইতিহাসকে আঁকড়েই রয়ে আছে।তাই হয়তো পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের বাসিন্দার মাঝে মধ্যেই অজয় নদ থেকে সেন যুগের আরাধ্য দেব দেবীর মূর্তির সন্ধান পাচ্ছেন। এবায় অজয় নদে মাছ ধরতে গিয়ে মঙ্গলকোটের আঁতকুল গ্রামের বাসিন্দারা পেলেন সেন যুগের বিষ্ণু মূর্তি। তিন ফুট উচ্চতার কালো পাথরের দন্ডায়মান বিষ্ণু মূর্তিটিকে গ্রামের শিব মন্দিরে রেখে তার পুজোপাঠ করছেন বাসিন্দারা । বিষ্ণুদেবের পুজো অর্চনা ঘিরেই এখন মাতোয়ারা । আঁতকুল গ্রাম। মূর্তি একবার সচক্ষো দেখতে বহু মানুষও সেখানো ভিড় জমাচ্ছেন ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,আঁতকুল গ্রামের বাসিন্দা চন্দন মাঝি, অক্ষয় মাঝি ও লক্ষ্মন মাঝিরা সোমবার অজয় নদে মাছ ধরতে যান। নদিতে জাল ফেলতেই তাঁদের পায়ে ভারী কিছু একটা ঠেকে। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা সেটিকে উদ্ধারে তৎপর হন। কাদা মাখা অবস্থায় থাকা বস্তুটি নদী থেকে পাড়ে তুলে নিয়ে এসেই চন্দন,অক্ষয়, লক্ষণরা বুঝতে পারেন তাঁদের উদ্ধার করা বস্তুটি আসলে দেবতার মূর্তি।এর পর তাঁরা মূর্তিটি নদীর জলে ভাল করে ধুয়ে পরিস্কার করেন। ট্র্যাক্টরে চাপিয়ে মূর্তিটিকে তাঁরা গ্রামের শিবমন্দিরে নিয়ে গিয়ে রাখেন। তখন দেখাযায় মূর্তিটির ডান চোখ ও একটি হাতে ক্ষত রয়েছে।এছাড়াও মূর্তিটির দুই পাশে খোঁদাই করা নারী মূর্তিও দেখা যায় ।তবে মূর্তিটি যে ’বিষ্ণুমূর্তি’ তা গ্রামবাসীদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি। ওই দিন সন্ধ্যেয় মূর্তিটির সামনে কীর্তনের আসর বসান গ্রামবাসীরা।
আঁতকুল গ্রামের বাসিন্দা সত্যহরি ঘোষ, দেবনাথ ঘোষরা বলেন, “আমাদের আঁতকুল গ্রামে একটি শিব মন্দিরেই আপাতত মূর্তিটি রাখা হয়েছে।গ্রামে আলাদা মন্দির গড়ে তুলে সেখানে বিষ্ণু মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে।সেইমত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সত্যহরি ঘোষ, দেবনাথ ঘোষরা এও জানান,’মূর্তিটি নদী থেকে গ্রামে নিয়ে আসার পর পুলিশ গ্রামে আসে । গ্রামবাসীরা সবাই পুলিশকে জানিয়ে দেয় মূর্তিটি গ্রামের মন্দিরে রেখেই তার পুজোপাঠ হবে । মূর্তিটি গ্রামেই যাতে নিরাপদে থাকে তার ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনও গ্রামবাসীরা পুলিশের কাছে রেখেছে’। গ্রামের পূজারী রমাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বুধবার বলেন, “বিষ্ণু মূর্তিটিকে ঘিরে গ্রামের বাসিন্দারা শ্রদ্ধা ও আবেগে মগ্ন রয়েছেন। তারা ভক্তিভরে মূর্তিটির নিয়মিত পুজো পাঠের আয়োজনও করছেন ।
কাটোয়ার ইতিহাস গবেষক স্বপন ঠাকুর উদ্ধার হওয়া মূর্তিটি প্রসঙ্গে জানন,অনুমান করা হচ্ছে মূর্তিটি সেন যুগের শেষের দিকে বিষ্ণু মূর্তি ।মূর্তিটির চালিতে দেখতে পাওয়া যাওয়া ’সর্পছত্র’ অনুযায়ী মূর্তিটি লোকেশ্বর বিষ্ণু বা অনন্ত বিষ্ণু বলে মনে হচ্ছে।এ নিয়ে সরকারী উদ্যোগে গোটা মঙ্গলকোট এলাকা নিয়ে ’গবেষনার’ প্রয়োজন রয়েছে বলে স্বপন ঠাকুর জানিয়েছেন।।