এইদিন স্পোর্টস নিউজ,২৬ ডিসেম্বর : অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে তার চেয়ে কম বয়সে ইনিংস ওপেন করতে নামেননি কেউই। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) ভারতের বিপক্ষে সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ টেস্টে অভিষেক। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই মোকাবেলা করতে হচ্ছে জাসপ্রিত বুমরাহ’র মতো প্রজন্মের সেরাকে। তবে নার্ভাসনেসের ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না স্যাম কনস্টাসের চেহারায়। অভিষেকেই দারুণ এক অর্ধশতক হাঁকিয়ে বক্সিং ডের সকালটা রাঙালেন। বুমরাহর বলে র্যাম্প শট খেলে বল পাঠালেন বাউন্ডারির বাইরে। মেলবোর্নে দুর্দান্ত সকালে কলঙ্কের দাগ বলতে ধাক্কা কাণ্ড। কিংবদন্তি বিরাট কোহলির কাঁধের ধাক্কার জবাবে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়েছেন কনস্টাসও।
ঘটনাটা এমসিজি টেস্টের দশম ওভারের। মোহাম্মদ সিরাজের ওভারের শেষ বলে সিঙেল নিয়ে ওভার শেষ করে প্রান্ত বদলের জন্য গ্লাভস খুলতে খুলতে অপর প্রান্তের সতীর্থ উসমান খাজার দিকে হাঁটছিলেন কনস্টাস । উল্টো দিক থেকে বল হাতে এগিয়ে আসছিলেন বিরাট কোহলি। হঠাৎ ক্রিজের কাছাকাছি এসে পথ বদল করে অনেকটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই সদ্য অভিষিক্ত কনস্টাসকে কাঁধ দিয়ে ধাক্কা মারেন কোহলি। আর যায় কোথা! ঘুরে দাঁড়িয়ে অজি তরুণ কিছু একটা বলেন কোহলিকে। কোহলিও জবাব দেন। দুজনের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় দেখে এগিয়ে আসেন উসমান খাজা। প্রথমে কনস্টাসের কাঁধে হাত রেখে তাকে শান্ত করেন। এরপর কোহলির দিকে এগিয়ে গিয়ে তার কাঁধেও হাত রেখে কিছু বলে পরিস্থিতি সামাল দেন।
এই ঘটনা যে স্বাভাবিকভাবে নেবেন না ম্যাচ রেফারি সে ব্যাপারে নিশ্চিত ইংল্যামদের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন। ফক্স ক্রিকেটে দেওয়া ধারাভাষ্যে অবশ্য দোষটা কোহলিরই ধরেছেন তিনি, ‘ওই মুহূর্তের কথা ভেবে কোহলি গর্ব অনুভব করবে না। কনস্টাস স্রেফ হেঁটে যাচ্ছিল। কোহলির দিকে তাকান, সে তার পথের দিক বদলেছে। যথেষ্ট অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং সর্বকালের সেরাদের একজন হিসেবে কোহলিকে অবশ্যই কৃতকর্ম নিয়ে ভাবতে হবে।’জরিমানার বিষয়ে নিশ্চিত সুনীল গাভাস্কারও। হটস্টারকে তিনি বলেন, ‘সরে গেলে কেউ ছোট হয়ে যায় না। প্রথমে মনে হয়েছিল, দুজনই নিচে তাকিয়ে হাঁটছিল। এখন দেখার বিষয়, কাকে বেশি জরিমানা গুণতে হয়।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক রিকি পন্টিং অবশ্য একতরফা কোহলিরই দোষ দেখছেন। সেভেন নিউজকে তিনি বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, আম্পায়ার এবং রেফারি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। বেশ কয়েকটি অ্যাঙ্গেল থেকে আমরা ঘটনাটি দেখেছি। আমার মনে হয়, (ওভারের শেষে) ওই পর্যায়ে তাদের (ভারতের ফিল্ডারদের) কোনো অবস্থাতেই ব্যাটসম্যানদের ধারে কাছে যাওয়ার কথা নয়। ব্যাটসম্যানরা ক্রিজের কোথায় একসঙ্গে দাঁড়ায় সেটা প্রতিটা ফিল্ডারই জানে। আমার মনে হয়েছে, কনস্ট্যাস অনেক দেরিতে খেয়াল করেছে। কেউ তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে সেটি সম্ভবত তার ভাবনাতেই ছিল না। কিন্তু তাকে (কোহলি) বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হতে পারে।’
আইসিসির আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, ‘ক্রিকেটে যে কোনো ধরনের শারীরিক সংঘর্ষ নিষিদ্ধ। ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা না বুঝে, সেটা যেভাবেই হোক, আম্পায়ার কিংবা অন্য খেলোয়াড়ের সঙ্গে হেঁটে বা দৌড়ের সময় মুখোমুখি হয়ে পথে বাধা তৈরি করলে তারা আইনটি ভঙ্গ করবে।’ ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট যদি মনে করেন, কোহলি লেভেল টু পর্যায়ের অপরাধ করেছেন, তাহলে বড় শাস্তি অপেক্ষা করছে তার জন্য। সে ক্ষেত্রে নামের পাশে ৩ বা ৪টি ডিমেরিট পয়েন্ট যুক্ত হবে। ৪টি ডিমেরিট পয়েন্ট যুক্ত হলে এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হবেন কোহলি। সে ক্ষেত্রে সিডনিতে সিরিজের শেষ টেস্টটি খেলা হবে না তার।
কনস্টাস অবশ্য এই ঘটনার পর ঝাল ঝেরেছেন বুমরাহর ওপর। এই গটনার পরের ওভারেই বুমরাহকে এক ওভারে দুটি চার ও একটি ছয় মেরেছেন কনস্টাস। ওভারের প্রথম বলেই র্যাম্প শটে চার মারেন। এরপর ওভারের চতুর্থ বলে ফের একই রকম শটে মারেন ছয়। পরের বলে চের চার। সেই ওভারে আসে ১৬ রান। শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্র জাদেজার বলে আউট হওয়ার আগে ৬৫ বলে ৬ চার ও ২ ছয়ে ৬০ রান করেন কনস্টাস।।