এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১২ জুন : শিব মন্দিরের সামনে একটি দোকান ঘরকে কেন্দ্র করে বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবারের মেটিয়াবুরুজের মহেশতলায় হিংসা ছড়িয়েছিল । পুলিশের উপরেও ব্যাপক হামলা চালানো হয় । মন্দিরের সামনে তুলসি মঞ্চ ভাঙার ঘটনাকে ইস্যু করে ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছে বিজেপি । এদিকে এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । মহেশতলার হিংসার ঘটনার সূত্রপাত প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে যে “সরকারি জমিতে অবৈধ নির্মাণ ও বৃক্ষরোপণকে কেন্দ্র করে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে” । এবং পুলিশ “পুলিশ প্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়” । কিন্তু বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ তুলেছেন পুলিশ “সত্য গোপন” করছে ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২:৫৮ নাগাদ রাজ্য পুলিশের এক্স হ্যান্ডেলে মহেশতলায় হিংসার ঘটনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে,’গতকাল বিকেলে রবীন্দ্র নগর থানা এলাকা এবং নাদিয়াল থানা সংলগ্ন এলাকায় সরকারি জমিতে অবৈধ নির্মাণ ও বৃক্ষরোপণকে কেন্দ্র করে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অনুমতি ছাড়াই একটি দোকান প্রতিস্থাপনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের উপর ইটপাটকেল ছোঁড়া হয় এবং আশেপাশের এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ প্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এই ঘটনায় দায়ের করা ৭টি মামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা হিংসায় লিপ্ত তাদের কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য অবৈধ নির্মাণ পরিকল্পিত ছিল কিনা তাও গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি এখন শান্তিপূর্ণ এবং নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শান্তির স্বার্থে রবীন্দ্র নগর থানা এলাকায় ১৬৩ বিএনএসএস-এর অধীনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ১৬৩ বিএনএসএস কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের ওই এলাকায় না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
আরও লেখা হয়েছে,’আমরা সকলকে শান্ত থাকার এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। যারা অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুলিশের ওই পোস্টটি ট্যাগ করে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বক্তব্য জিহাদিদের দ্বারা হিন্দুদের উপর একটি নির্মম সাম্প্রদায়িক আক্রমণকে “দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ” হিসাবে পরিণত করার লজ্জাজনক প্রচেষ্টা। এটি কোনও বিরোধ ছিল না, বরং মহেশতলায় সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর একটি পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণ ছিল। পুলিশ বিভাগের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণ হল পর্যাপ্ত শক্তি প্রয়োগে তাদের অনীহা, কারণ তারা জিহাদিরা প্রতিশোধের শিকার হতে পারত বলে ভয় পেয়েছিল। পরিবর্তে, তারা প্রথমে পাশে দাঁড়িয়েছিল যখন দুর্বৃত্তরা রবীন্দ্র নগর থানায় নির্মমভাবে হিন্দুদের উপর আক্রমণ করেছিল, একটি শিব মন্দির ভাঙচুর করেছিল, বাইক ও যানবাহনে আগুন দিয়েছিল এবং পাথর ছুঁড়েছিল।
পুলিশ অফিসাররা (মহিলা পুলিশ কর্মী সহ) আহত হয়েছেন, পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবুও, পুলিশ এটিকে “অবৈধ নির্মাণ” নিয়ে একটি ছোটখাটো ঝগড়া বলে ছোট করে দেখার সাহস করছে। লজ্জা হচ্ছে।’
তিনি লিখেছেন,’আপনি কেন সত্য গোপন করছেন? পবিত্র তুলসী মঞ্চ, হিন্দু দোকান, বাড়িঘর এবং মন্দির নিজেই শত শত জিহাদি দ্বারা সহিংসভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল। আইসি মুকুল মিয়া এবং এসডিপিও কামরুজ্জামান মোল্লার তত্ত্বাবধানে আপনার স্টেশন থেকে পাথর ছুঁড়ে মারার দূরত্বে এটি ঘটেছিল। আপনার নিষ্ক্রিয়তা কয়েক মাস আগে মুর্শিদাবাদের সহিংসতার প্রতিফলন ঘটায়, যেখানে একই ধরণের সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। হিন্দুদের উপর লক্ষ্যবস্তু হামলার আগুন এখন কলকাতায় পৌঁছেছে।’
সব শেষে বিরোধী দলনেতা লেখেন,’শত শত তাণ্ডব চালানোর সময় ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা যথেষ্ট নয়। আপনার ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহিতা কোথায়? বাংলার মানুষ এই প্রহসন বুঝতে পারছে। “শান্তি বজায় রাখার” আড়ালে অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করুন। এই জঘন্য হামলায় জড়িত প্রতিটি জিহাদির বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, সেইসাথে যারা সিদ্ধান্তমূলকভাবে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে এমন পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও। আমরা আমাদের ধর্মীয় স্থান এবং সম্প্রদায়ের উপর এই আক্রমণকে চাপা দিতে দেব না। ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত সনাতন সম্প্রদায় ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।’।