এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভিলওয়ারা,২৫ ডিসেম্বর : দুই পুলিশ কর্মীকে খুনের ঘটনার পর শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়ল রাজস্থানের ভিলওয়ারার কুখ্যাত গ্যাংস্টার রাজু ফৌজি ৷ পুলিশের সাথে এনকাউন্টারের পরে এই দুষ্কৃতিকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছেন । বর্তমানে পুলিশের কঠোর প্রহরায় যোধপুরের এমডিএম হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে । উল্লেখ্য,রাজু ফৌজিকে ধরার জন্য ১ লক্ষ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল পুলিশ ।
রাজু বিষ্ণোই ওরফে রাজু ফৌজির জীবন যে কোনও হিন্দি সিনেমার কাহিনীকে হার মানাবে । সিআরপিএফ জওয়ান থেকে ক্রমে একজন গ্যাং লিডার হয়ে ওঠার পিছনে রয়েছে দীর্ঘ ও রোমাঞ্চকর কাহিনী । যোধপুর সংলগ্ন বারমের জেলার ডলি গ্রামের বাসিন্দা রাজু ছোট থেকেই লম্বা-চওড়া ছিলেন । চেহারার কারনে স্কুলের পড়া শেষ করার পরেই সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সে চাকরি জুটিয়ে ফেলেন । নকশাল অধ্যুষিত এলাকায় তার পোস্টিং হয়েছিল ।
তবে এই কাজ তাঁর বিশেষ পছন্দ হচ্ছিল না । একদিন ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে আসেন । তারপর আর ফিরে যাননি সিআরপিএফ ক্যাম্পে । তখন থেকে গ্রামেই ছিলেন রাজু । এদিকে হাতে যেটুকু পুঁজি ছিল সেটাও ফুরিয়ে এসেছে । তাই উপার্জনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান যোধপুরে । একটি সবজির গাড়ি জোড়ার করে ভগতের কোঠি এলাকায় শব্জি বিক্রি করতে শুরু করেন । তবে রাজু বিষ্ণোই নামে নয়, সিআরপিএফের চাকরির সুত্রে স্থানীয় লোক তাঁকে ‘ফৌজি’ খেতাব দেন । এলাকায় পরিচত হন রাজু ফৌজি হিসাবে । তবে শব্জি বিক্রির পেশাও মনে ধরেনি তাঁর । এরপর সেটা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্মে সে জড়িয়ে পড়ে ।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে,রাজু শব্জির ব্যাবসা করার সময় তাঁর এক শ্যালিকা এক ট্রাক চালকের সঙ্গে পালিয়ে যায় । তাঁরা বিলারায় ভাবি ফটকে গিয়ে বসবাস শুরু করেন । একথা কানে যেতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন রাজু । তিনি সোজা সেখানে চলে গিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে শ্যালিকার প্রেমিককে বেদম পেটায় । তারপর ওই যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় ভরা বাজারের মধ্যে ফেলে রেখে সে পালায় । কিন্তু সব কিছু দেখেও স্থানীয় লোকজন রাজুর চেহারা ও রুদ্র রূপ দেখে টুঁ শব্দ করেনি । আর মানুষের এই ভীতিকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় নিজের গুন্ডা ভাবমূর্তিকে তুলে ধরে রাজু । গঠন করেন দুষ্কৃতিদের একটি দল । শুরু হয় তাঁর অপরাধমূলক কাজকর্ম ।
জানা গেছে,প্রথমেই প্রায় ৩৫ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতিকে নিয়ে বারমের জেলার কল্যাণপুর থানা এলাকার ডলি টোল নাকা লুট করে রাজু ফৌজি । দুষ্কৃতিদের এতবড় দল দেখে টোল নাকার কর্মচারীরা ভয়ে যে যেদিকে পারে ছুটে পালিয়ে যায় । তারপর থেকে সে এলাকার ব্যবসায়ী ও কোম্পানীর মালিকদের ভয় দেখিয়ে তোলাবাজি শুরু করে । ইতিমধ্যে রাজুর সঙ্গে যোগাযোগ হয় আর কুখ্যাত চোরাকারবারী খরতারামের সঙ্গে ।এবার তোলাবাজি ছাড়াও খরতারামের সঙ্গে মাদক পাচারের ব্যাবসা শুরু করে রাজু ফৌজি । কিন্তু রাজু-খরতারাম জুটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি ।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে,বছর দশেক আগে পালির ভিমনা গ্রামের পাহাড়ে খরতরামকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে পুলিশ । পুলিশ ও দুষ্কৃতি দলের তুমুল গুলির লড়াই শুরু হয় । পালানোর রাস্তা সব বন্ধ দেখে খরতরাম নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করে । খরতরামের মৃত্যুর পর স্বভাবতই দলনেতা নির্বাচিত হয় রাজু ফৌজি । ধীরে ধীরে সে বারমেরের বাইরে যোধপুর,নাগৌর,বিকানের,পালি, জয়সালমের, চিত্তোর,ভিলওয়াড়া, জালোর এবং সিরোহিতে মাদক চোরাচালানের জাল বিস্তার করে । বহুবার পুলিশকে বোকা বানিয়েছে রাজু । কিন্তু দূর্নামের ভয়ে সব গোপন করে গেছে পুলিশ ।
জানা গেছে,প্রায় ৯ মাস আগে মাদক চোরাচালানের সময় রাজুর দলের ১২ দুষ্কৃতি মিলে ওঙ্কার রেবারি এবং পবন জাট নামে ভিলওয়ারার দুই পুলিশ কর্মীকে খুন করার পর থেকে রাজুর সাম্রাজ্য পাকাপাকিভাবে খতম করার পরিকল্পনা করে ফেলে পুলিশ । তাকে ধরতে পারলে ১ লক্ষ টাকা পুরষ্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল । সেই সঙ্গে রাজু ফৌজির সন্ধানে চলছিল পুলিশের তল্লাশি অভিযান । কিন্তু তার নেটওয়ার্ক এতটাই শক্তিশালী ছিল যে পুলিশের গতিবিধির আগাম খবর পেয়ে যেত । তবে এবার আগাম খবর পেয়েও আত্মরক্ষা করতে পারেনি রাজু । গভীর রাতে পুলিশের এনকাউন্টারে তাঁর দু’পায়ের গোড়ালিতে গুলি লাগে আর ধরা পড়ে যায় ভিলওয়ারার কুখ্যাত গ্যাংস্টার রাজু ফৌজি ।।