এইদিন স্পোর্টস নিউজ,০৮ জুলাই : সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা যিনি দিতে পারতেন, তিনিই বললেন বিশ্বরেকর্ডের হাতছানি থাকলেও কেন সেই চেষ্টায় গেলেন না। কেন ব্রায়ান লারার রেকর্ড নিজের করে নেওয়ার চেষ্টা না করে আচমকা ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন? দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ভিয়ান মুল্ডার জানান, তিনি মনে করেন, টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি লারারই থাকা উচিত !
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়ায়ো টেস্টের দ্বিতীয় দিন লাঞ্চ বিরতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেন মুল্ডার। সেই সময় সফরকারীদের রান ছিল ৫ উইকেটে ৬২৬। ৩৬৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন মুল্ডার। রেকর্ডের অনেক পাতায় ছাপ রেখে যাওয়া তার ৩৩৪ বলের ইনিংস গড়া চারটি ছক্কা ও ৪৯টি চারে।
ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে একদমই লড়াই করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ১৭০ রানে গুটিয়ে যায় তারা। ফলো-অনে পড়ে দিনের শেষ বেলায় ১৬ ওভার ব্যাট করতে ১ উইকেট হারিয়েছে তারা।
যে দাপুটে ব্যাটিং করছিলেন মুল্ডার, তাতে তার রেকর্ড গড়া অবশ্যসম্ভাবী মনে হচ্ছিল। কিন্তু আর ব্যাটিংয়েই নামলেন না তিনি। এ নিয়ে সোমবার দিনের খেলার বাকি সময়ে তুমুল চর্চা চলে। দিনের খেলা শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন পেসার ও সঞ্চালক শন পোলকের এক প্রশ্নের উত্তরে আচমকা ইনিংস ঘোষণার ব্যাখ্যা দেন মুল্ডার। বলেন, ভবিষ্যতে কখনও আবার এমন সুযোগ এলে, তখনও একই কাজ করবেন তিনি। তিনি বলেন,’আগে প্রথম ব্যাপারটি বলি, (বোলিংয়ের জন্য) আমরা যথেষ্ট রান পেয়েছি।
ব্রায়ান লারা একজন কিংবদন্তি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ৪০০ বা ৪০১ বা এর আশেপাশে একটা রান করেছিলেন। রেকর্ডটি তার পাশেই মানায়, তিনি বিশেষ একজন। আবার যদি এমনটা করার সুযোগ আমি পাই, তখনও ঠিক এটাই করব। আমি শুকসের (দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান কোচ শুক্রি কনরাড) সঙ্গে কথা বলেছিলাম- এবং তিনিও একইরকম বলেন। ব্রায়ান লারা একজন কিংবদন্তি এবং রেকর্ডটা তার নামের পাশেই থাকা উচিত।’
টানা দুই ম্যাচে নিজের সর্বোচ্চ ইনিংস খেললেন মুল্ডার। ঘটনাচক্রে পাওয়া নেতৃত্বের অভিষেকে যেন তিনি ছাড়িয়ে গেলেন নিজের কল্পনাকেও। টেস্ট ক্রিকেটে প্রায় দেড়শ বছরের ইতিহাসে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে খেললেন তিনশ রানের ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও এখন তার। অকপটেই বললেন, নিজের কাছে এতটা প্রত্যাশা ছিল না তার। “অনুভূতি অবশ্যই বিশেষ। ট্রিপল সেঞ্চুরির কথা তো বাদই, সত্যি বলতে কখনও ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্নও আমি দেখিনি। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে এই ম্যাচে দলকে জয়ের জন্য একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছি।”
আকাশ ছোঁয়ার দিনে তিনি ফিরে তাকালেন জাতীয় দলে খেলার শুরুর দিনগুলোর দিকে। প্রাক্তন ও বর্তমান সতীর্থদের প্রতি জানালেন কৃতজ্ঞতা। “দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা শুরুর দিনগুলোতে আমি মোটেও যথেষ্ট ভালো ছিলাম না। (বর্তমান ও প্রাক্তন) অসাধারন খেলোয়াড়দের কাছ থেকে শেখার সুযোগ পেয়েছি। ইংল্যান্ডে খেলার সুযোগ পেয়ে বুঝেছি আমি কেমন ব্যাটসম্যান হতে চাই এবং আমার দুর্বলতা কোথায়। সেখানে খেলার সময়টায় অনেক কিছু শিখেছি।”
কীভাবে মনসংযোগ ধরে রাখেন, তার ধারণা দিলেন মুল্ডার। প্রথম দিন ২৪৭ রানে ‘বোল্ড হওয়ার’ পর ‘নো’ বলের কল্যাণে বেঁচে যাওয়ার প্রসঙ্গ নিয়েও বললেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
“মনসংযোগ হারিয়ে ২৪৭ রানে বোল্ড হয়ে যাই, তখন নেতিবাচক অনেক কিছুই ঘটছিল। তবে অনেক ইতিবাচক ব্যাপারও ভাবছিলাম। দুই ডেলিভারির মাঝের বিরতিতে নিজের গান গাইছিলাম। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছিলাম। কেবল বর্তমান নিয়ে ভাবার এবং খুব বেশি দূর না তাকানোর চেষ্টা করছিলাম।”
“যখন হাশকে (দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আগের সর্বোচ্চ ৩১১ রান করা হাশিম আমলা) ছাড়িয়ে গেলাম, শুরুতে আমি বুঝতে পারিনি। খুব বিশেষ কিছু। বাংলাদেশে খেলার সময় (যখন টেস্টে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পাই) তখন আফ্রিকান গান গেয়েছিলাম। ইনিংসে যখনই আটকে যাচ্ছিলাম তখনই গান গাইছিলাম, কখনও কখনও নিজেকে বর্তমানে রাখতে শব্দ করেও গান গেয়েছিলাম।”
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুল্ডারের টেস্ট অভিষেক হয় ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। প্রথম দুই বছরে স্রেফ দুটি টেস্ট খেলার সুযোগ পান তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বেশিরভাগ সময় তিনি ব্যাটিং করতেন সাত নম্বরে, কখনও আটে। গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে সাত নম্বরে নেমেই প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পান তিনি। পরের টেস্টে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন নম্বরে তুলে আনা হয় তাকে। এই পজিশনে প্রথম পাঁচ ইনিংসে ভালো করতে না পারলেও, পরের দুই ইনিংসে ১৪৭ ও অপরাজিত ৩৬৭ রান করে নিজেকে রাঙালেন এই অলরাউন্ডার।।