জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,দূর্গাপুর(পশ্চিম বর্ধমান),২২ মে : দুর্গাপুর মানেই বিধানচন্দ্র রায়ের স্বপ্নের শিল্প শহর। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ডিএসপি সহ একের পর এক বড় বড় শিল্প কারখানা। তিনবেলা কারখানার সাইরেনের আওয়াজ। কর্মীদের ব্যস্ততা। হয়তো আজ অনেক কিছু নাই, এর বাইরে অন্য কিছু ভাবনা সাধারণ মানুষের মনে আসেনা ।
অথচ এর বাইরেও ‘গোকুলে বাড়ছে’-র মত আর এক শিল্প বেড়ে চলছিল সেটা হয়তো অনেকের নজরে আসেনি। শিল্পের আড়ালে শিল্প শহর দুর্গাপুর গত কয়েক বছর ধরেই কাব্য-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগতে বারবার নিজের উজ্জ্বল উপস্থিতির ছাপ রেখে চলেছে। সৌজন্যে একগুচ্ছ সুপরিচিত কবি-সাহিত্যিক তথা সঙ্গীত শিল্পী, বাচিক শিল্পী ও নৃত্য শিল্পী। অন্যান্য শিল্প চর্চাও এখানে নিয়মিত হয়। এরকমই একজন সুপরিচিত সাহিত্যিক হলেন প্রবীণ শিবদাস রুদ্র।
গত ২১ শে মে এলাকার পঞ্চাশের অধিক কবি সাহিত্যিকের উপস্থিতিতে দুর্গাপুরের বিধাননগরের নিজ বাসভবনে প্রকাশিত হলো সাহিত্যিক শিবদাস রুদ্রের ষষ্ঠ উপন্যাস ‘বনাঞ্চল রাজকাহিনী’। ইতিহাসের মর্যাদা নুন্যতম ক্ষুণ্ন না করে সাহিত্যের প্রয়োজনে ও পাঠকের মনে কাব্যরস সৃষ্টির জন্য কিছুটা কল্পনা মিশিয়ে ১৫০০ বছরের ইতিহাস ধরা আছে এই উপন্যাসে। এএক অসাধারণ উপন্যাস।
প্রসঙ্গত, আর পাঁচটা বাঙালির মত সাহিত্যিক শিবদাস রুদ্র সাহিত্য চর্চা শুরু হয় শৈশব থেকেই। শুরুতেই পেয়েছেন অভিভাবকদের উৎসাহ। অবসরের পর সবাই যখন নিশ্চিত বিশ্রামের দিকে ঝুঁকে পড়েন তখন ৭৪ বছর বয়সে পৌঁছে তার কলম বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। শিবদাস বাবু হয়ে ওঠেন দুর্গাপুরের সাহিত্য জগতের বড় অনুপ্রেরণা। ৮০-র দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও সমান উৎসাহে তিনি লিখে চলেছেন। একের পর এক সৃষ্টি করে চলেছেন জনপ্রিয় সব উপন্যাস। কাব্যে ও ইতিহাসে উপেক্ষিতা নারীদের নিয়ে ‘ওগো মোর প্রিয় নারী’-তে আছে অসাধারণ ত্রিশটি কবিতা। পাঠকদের জন্য তিনি তার লেখাগুলি পুস্তক আকারে প্রকাশও করছেন। এমনকি শহরের অন্য সাহিত্যিকদের সঙ্গে নিয়মিত সাহিত্য বিষয়ক আলোচনার জন্য নিজের বাসভবনে তৈরি করে ফেলেছেন আস্ত এক হলঘর।
বই প্রকাশকে কেন্দ্র করে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সেখানে বাংলা সাহিত্য নিয়ে একটি মননশীল আলোচনা হয়। এছাড়া পাঁচ ঘণ্টা ব্যাপী অনুষ্ঠানে ছিল কবিতা পাঠ, সংগীত, নৃত্য, শ্রুতিনাটক,গল্প ইত্যাদি। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে কবি-সাহিত্যিক ও শিল্পীরা বাংলা সাহিত্যচর্চার সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আক্ষেপ করেন। তাদের মূল বক্তব্য- বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে পুরোপুরি কলকাতা কেন্দ্রিক করে রাখার জন্য রাজ্যব্যাপী প্রত্যাশিত বিকাশ ঘটছেনা। দুর্গাপুরে সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য কাব্য প্রতিভা থাকা সত্বেও সাহিত্যচর্চা করার জন্য স্বল্পমূল্যে সরকারী সভাগৃহ নেই। ফলে সমস্যা হয়। তাদের দাবি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সাহিত্যচর্চার জন্য সরকার এগিয়ে আসুক। এতে বাংলা সাহিত্য জগত উপকৃত হবে। নবীন প্রতিভারা উৎসাহ পাবে।
পুস্তক প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক সৌম্যশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কালীপ্রসাদ দত্ত, দুর্গাপুর রোটারি ক্লাবের সভাপতি অনুপ মুখার্জ্জী, বিশিষ্ট সমাজসেবী অমিতাভ ব্যানার্জ্জী, বাচিক শিল্পী গৌতম চক্রবর্তী, স্নেহাশীষ মুখোপাধ্যায় , ইলা পাল, তরুণ সাহা, বাচিক শিল্পী হৃদয় সাঁই, শুভ্রা পাল, অর্চনা সিংহরায়, মধুসূদন রায় সহ আন্তরিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা তথা কবি অন্তরা সিংহরায় সহ আরও অনেকেই ।
উপস্থিত কবি-সাহিত্যিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শিবদাস বাবু বললেন – বাংলা কাব্য-সাহিত্যের বিকাশ ঘটাতে হলে নবীন প্রতিভাদের এগিয়ে আসতে হবে । সমস্ত দ্বিধা দূর করে প্রকৃত অভিভাবকদের মত তাদের হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে প্রবীণদের। সমালোচনার পরিবর্তে দরকার উৎসাহ। শুধু তাই নয় বই পড়ার জন্য নিজ নিজ সন্তানদের উৎসাহ দিতে হবে। তবেই বাংলা সাহিত্য জগত বাঁচবে ।।