এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৮ জুলাই : মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মের ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে ৷ সংরক্ষণ ইস্যুতে সর্বোচ্চ আদালতের তিরস্কারের মুখেও পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে । তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের কোটা কেটে মুসলিম সম্প্রদায়কে সংরক্ষণ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত মমতা ব্যানার্জি । খোদ সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে “ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ হতে পারে না” । রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের এই প্রচেষ্টাকে “তোষামোদি রাজনীতি” হিসাবে দেখছে বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদীরা । এদিকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অংশ বা ইডবলুএস কোটা নিয়েও মমতা ব্যানার্জি একইভাবে মুসলিমদের পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশিষ্ট বর্ষীয়ান সাংবাদিক প্রসূন মৈত্র ।
গতকাল অনিন্দিতা পাল নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর একটা পোস্টকে তিনি শেয়ার করেছেন । যাতে লেখা হয়েছে, ‘বারবার আত্মদীপের কাছে সপাটে চড় খাচ্ছে,তাও নির্লজ্জ রাজ্য সরকারের তোষন কমেনা! ওবিসি-এ,ওবিসি-বি যখন বাতিল তাহলে EWS এ মুসলিম ঢোকাও! আজ জারী করেছে EWS লিস্ট। আপনি ঘুমান, রাজনীতি করুন, তারপর এলাকায় এই আইনের সুযোগ নিয়ে মুসলিম SP, যখন মহরমের অস্ত্রের আঘাতে আহত শিশুর কেস নেবে না,রামনবমীর শোভাযাত্রার পারমিশন দেবেনা আবার গেল গেল রব তুলে মিডিয়া ঝড় তুলবেন হিন্দু একত্রীকরণের! কিন্তু মমতা ব্যানার্জি এত সহজ নয়,দায় নিয়ে নিয়েছে Prasun Maitra…….পশ্চিমবঙ্গ হিন্দুদের ছিল,আছে,থাকবে। ধার্মিক ভিত্তিতে কারোর নিয়োগ হবেনা।’
EWS কোটা (Economically Weaker Section quota) কি?
ইডলুএস কোটা হল অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল বিভাগের (EWS) জন্য একটি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, যা সরকারি চাকরি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০% আসন সংরক্ষণের সুযোগ দেয়। এটি মূলত সাধারণ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত সেইসব ব্যক্তিদের জন্য যারা আর্থিকভাবে দুর্বল এবং SC/ST/OBC-এর মতো কোনো সংরক্ষণের আওতায় পড়েন না। EWS কোটা সাধারণ বিভাগের প্রার্থীদের জন্য ১০% আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। এই কোটার সুবিধা পেতে হলে, আবেদনকারীর বার্ষিক পারিবারিক আয় ৮ লক্ষ টাকার কম হতে হবে এবং তাকে SC/ST/OBC বা অন্য কোনো সংরক্ষণের আওতায় পড়া চলবে না। EWS কোটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি চাকরিতে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ভারতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অংশ (EWS) বলতে সাধারণ (অসংরক্ষিত) শ্রেণীর সেইসব ব্যক্তিদের বোঝায় যাদের পারিবারিক আয় বার্ষিক ৮ লক্ষ টাকার কম। এই গোষ্ঠীতে ST, SC, অথবা OBC শ্রেণীর ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, কারণ তারা ইতিমধ্যেই অন্যান্য সংরক্ষণ নীতি থেকে উপকৃত হচ্ছেন। এই গোষ্ঠীকে সমর্থন করার জন্য, ভারত সরকার EWS আয়ের মানদণ্ড পূরণকারী সাধারণ শ্রেণীর লোকেদের জন্য ১০% সংরক্ষণ চালু করেছে। EWS নির্দেশিকা অনুসারে যোগ্যতা অর্জন করলে সাধারণ শ্রেণীর প্রার্থীরা এখন এই ১০% সংরক্ষণের সুবিধা পেতে পারেন । ৭ নভেম্বর ২০২২ তারিখে এক ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তি এবং সরকারি চাকরিতে অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর অংশ বা ইডব্লুএস(EWS)-এর জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের বিষয়ে সংবিধান সংশোধন বহাল রেখেছে ।
যদিও এক কোটার বিষয়ে রাজ্যের সিংহভাগ হিন্দু সচেতন নয় এবং তাদের সচেতন করার বিষয়ে সেভাবে তেমন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীকে । এনিয়ে রাজ্য বিজেপির “হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা”কে বারবার তুলোধুনো করেন সাংবাদিক প্রসূন মৈত্র ।
আজ নিজের ফেসবুক পেজে প্রসূন মৈত্র লিখেছেন, ‘এটাকে বলে উদ্যোগ। হিন্দুরা যখন ৫০ বছর আগের জরুরী অবস্থা বা তুলসী মঞ্চ নিয়ে ব্যস্ত তখন মুসলমানদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে কলকাতা হাইকোর্টের বেঞ্চমার্ক সার্ভের সুপারিশের উপর স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে গণহারে পাঠানো হচ্ছে মেইল। না, এতে প্রধান বিচারপতি প্রভাবিত হননা কিন্তু সমাজ তার কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকে।’
তিনি এই পোস্টের সঙ্গে একটা স্ক্রীন শর্টও শেয়ার করেছেন । যেটি মূলত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে একটি গন স্মারকলিপি । ওই “গণমেল”-এ লেখা হয়েছে,’হাইকোর্টের রায়ের কিছু বিশেষ জায়গা নিয়ে আপত্তি, একই পদ্ধতি মেনে প্রচলিত হওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু ওবিসি ক্লাসের এক্সক্লুসন, SLST তে ওবিসি দের প্রতি বঞ্চনা ও আরো কয়েকটি সূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে CJI কে মেইল করা হচ্ছে। মেল এর ভিতরে তারিখ টা শুধু পাল্টে দেবেন।নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে মেইল করে দেওয়ার আবেদন রইল।’ অ্যাপের লিঙ্ক দিয়ে লেখা হয়েছে,’সবাই মেল করবেন কিন্তু মুসলিম ওবিসি ছাড়া অন্য কারোর কাছে যেন না পৌঁছায় ।’
আগের দিন প্রসূন মৈত্র নিজের সংগঠনের লোগো পোস্ট করে রাজ্যের হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশানা করে লিখেছিলেন,’আত্মদীপ এর লোগোটা দেখেছেন? ভাল করে দেখুন, সেখানে একইসাথে কর্তব্য আর অধিকার- দুটোই লেখা আছে। অধিকার তখনই কেউ পেতে পারে যখন সে তার কর্তব্য পালন করে। Duties & rights একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। নিজেদের কর্তব্য পালনের বেলায় গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে অধিকারের দাবী করা অনুচিত। যে সমাজ নিজের কর্তব্য সম্পর্কে উদাসীন তার অধিকার সবসময় রাষ্ট্রক্ষমতার উপর নির্ভরশীল। ওবিসি আর EWS নিয়ে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে আমি যত প্রশ্ন পাই তার এক শতাংশও গতকালের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যায়নি। একটি মেস থেকে আসা একজন ভাই জানালো যে যদিও তাদের মেসের চাকরিপ্রার্থীরা বিগত এক বছর ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ তবুও তারা ইংল্যান্ডের মাটিতে শুভমন গিলের নেতৃত্বে ভারতের প্রথম জয় দেখার জন্যে অনুষ্ঠানে আসেনি। ভাবতে পারেন তাদের প্রায়রিটির নমুনা? এরপরেও আশা করেন কোন দল তাদের হয়ে সোচ্চার হবে?’
প্রসঙ্গত,রাজ্যের হিন্দুদের অধিকার রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রসূন মৈত্র । “আত্মদীপ” নামে একটা সংগঠন গড়ে সংরক্ষণ ও ইডবলুএস কোটা নিয়ে তিনি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি । পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে রাজ্যের হিন্দুদের বারবার সতর্ক করে দেন প্রসূনবাবু ।।

