প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১০ জুলাই : ফের পুলিশকে বোকা বানিয়ে চম্পট দিল চোর । মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বারাসাত আদালত থেকে বর্ধমান জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কুখ্যাত চোর বাসুদেব মণ্ডলকে।পথে জাতীয় সড়কে পূর্ব বর্ধমানেষ শক্তিগড়ের আমড়া এলাকায় শৌচকর্ম করতে যাবার অছিলায় পুলিশকে বোকা বানিয়ে পালিয়ে যায়। চুরির মামলায় বাগুইহাটি থানার পুলিশ ওইদিন বসুদেবকে বারাসাত আদালতে পেশ করেছিল । দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন থানার পুলিশের ঘুম কেড়ে নেওয়া চোর বাসুদেব ফের পুলিশের কবল থেকে পগার পাড় হতেই পুলিশের কর্ম তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। মান বাঁচাতে পুলিশ হন্যে হয়ে বাসুদেবের খোঁজ শুরু করেছে । যদিও বুধবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ ধুরন্ধর চোর বাসুদেবের নাগাল পায়নি ।
জেলা পুলিশ সুপার আমন দীপ জানান, চুরির মামলায় বাসুদেব মণ্ডলকে সকালে বাগুইহাটি থানার পুলিশ নিয়ে জেলা সংশোধনাগার থেকে।বারাসাত আদালতে পেশের পর বিকেলে তাকে ফের বর্ধমান জেলে নিয়ে যাচ্ছিল।কিন্তু বাসুদেব মণ্ডল বাথরুম যাবার নাম করে পালিয়ে যায়। পুলিশ তাকে খুজছে।
প্রেয়সীদের বাসনা পূরণের জন্যে অহরহ প্রয়োজন হত অর্থের। সেই অর্থ জোগাড় করতে ’চুরিতে’ হাত পাকায় যুবক বাসুদেব মণ্ডল।সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাসুদেব হয়ে ওঠে দক্ষিণবঙ্গের এক কুখ্যাত তস্কর । যে কলকাতার নিউটাউন ও বাগুইহাটি থানা থেকে শুরু করে পূর্ব বর্ধমান ও হুগলী জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়।তবে অবশ্য বেশিদিন পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে থাকতে পারেনি কুখ্যাত এই দুস্কৃতি । বিভিন্ন চুরির ঘটনায় জড়িত বাসুদেব পুলিশের জালে বন্দি হয়।একাধিক থানা তাঁকে হেপাজতে নিয়ে তাঁর চুরিকরা সরঞ্জাম উদ্ধার করছিল ।
সোমবার পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পুলিশও বাসুদেব মণ্ডলকে হেপাজতে নেয়। তাঁকে জেরা করে পুলিশ জামালপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক চুরির ঘটনায় তাঁর জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়।এরপর বাসুদেবকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে উদ্ধার করে বহু চোরাই সামগ্রী।যার তালিকায় মোটর বাইক থেকে শুরু করে ল্যাপটপ,আইফোন এবং গুটকা থেকে প্রচুর সিগারেটও রয়েছে।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও পুলিশকে ধোকা দিয়ে বাসুদেব পালিয়ে যায়। জামালপুর থানা এলাকায় হওয়া বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনায় তদন্ত নেমে পুলিশ নিশ্চিৎ হয় ওইসব জড়িত বাগুইহাটি থানার পুলিশের কাস্টডি থেকে পালানো কুখ্যাত চোর বাসুদেব মণ্ডল।সে ধরা পড়ার পর নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে জামালপুর থানা বাসুদেব মণ্ডলকে পাঁচ দিনের পুলিশী হেফাজতে নেয়।তাকে জেরা করে পুলিশ একাধিক চুরির কিনারা করে।বাসুদের চুরি করা ৭টি মোটর বাইক ,১টি আইফোন, ১টি ল্যাপটপ ,১ কার্টুন সিগারেট,১ কার্টুন রজনী তুলসী নামের গুটকা , ছাতা ২৫ টি এবং নগদ ২৪১০ টাকা উদ্ধার হয়েছে।এইসব চুরিতে জড়িত থাকার কথা ধৃত বাসুদেব মণ্ডল স্বীকারও করেছে । হেপাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাসুদেবকে সোমবার বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয় ।
বাসুদেব মণ্ডল অত্যন্ত ধুরন্ধর। চুরির কাজ দ্রুত সেরে পালানোর ব্যাপারেরও অত্যন্ত পটু এই যুবক।হুগলীর বলাগড় থানা এলাকার বাসিন্দা হলেও বাসুদের তাঁর চৌর্যবৃত্তি হুগলী জেলাতেই সীমাবদ্ধ রাখে নি।বরং সে তাঁর চৌর্যবৃত্তির প্রভাব কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও বিস্তার করেছে। তদন্তে পুলিশ জেনেছে বাসুদেব মণ্ডলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে একাধিক মহিলার।বিভিন্ন ড্যান্স বারেও তাঁর যাতায়াত ছিল। বাসুদেব তাঁর প্রেয়সীদের বাসনা পূরণের জন্যে অর্থ জোগাড় করতে চুরিতে হাত পাকায়।তবে হঠাৎ করে কোন এলাকায় গিয়ে চুরি করতো না বাসুদেব।
চুরির ঘটনা ঘাটানোর আগে ধুরন্ধর বাসুদেব ওই সব এলাকার অলি গলি সব বুঝে নিতে চাইতে।এরজন্যে সে বিশেষ পন্থা কাজে লাগাতো।কখনো সবজি বিক্রেতা আবার কখনো কল সারানোর মিস্ত্রি বা রাজমিস্ত্রি সেজে বাসুদেব ওইসব এলাকায় রেইকি করতো। এইভাবেই সে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চুরিতে আধিপত্য বাড়ায়।কলকাতার নিউটাউন,বাগুইহাটি ছাড়াও হুগলী জেলার বলাগড় ,সিঙ্গুর ,গুড়াপ,হরিপাল ,ধনিয়াখালি,তারকেশ্বর থানার পুলিশের রাতের ঘুম কেড়ে নেয় কুখ্যাত চোর বাসুদেব।
পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে বাসুদেব ফের চুরিতে নেমে পড়ে।বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ হুগলীর রিষড়া থেকে পাকড়াও করে বাসুদেব মণ্ডলকে। তারপর তার ঠাই হয় দমদম সেন্ট্রাল জেলে । এর পর নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে জামালপুর থানার পুলিশও তাকে হেপাজতে নিয়ে একের পর এক চুরির কিনারা করে ।পুলিশ জানায় মঙ্গলবার পালানোর সময় বাসুদেব মণ্ডলের পড়নে ছিল হলুদ গেঞ্জি ও হাফ প্যাণ্ট।।