এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,০৯ সেপ্টেম্বর : ধর্ম নিন্দার মিথ্যা অভিযোগে খুলনায় থানার ভিতরেই উৎসব মণ্ডল নামে একজন হিন্দু কিশোরকে নৃশংস বর্বরোচিত ভাবে মারধর করে জামাত ইসলামির জঙ্গিরা । বছর পনেরোর রক্তাক্ত নিস্তেজ উৎসবের জঙ্গিদের উল্লাসে ওই অসহায় কিশোর মারা গেছে বলে মনে করে অনেকে । স্থানীয় মসিজিদ থেকে ওই হিন্দু কিশোরের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এও কয়েকদিন ট্রেন্ড করে উৎসব মণ্ডলের উপর কাপুরুষোচিত হামলার ঘটনা । কিন্তু আজ বাংলাদেশি মুক্তমনা ব্লগার আসাদ নূর জানিয়েছেন যে উৎসব জীবিত । কিন্তু তার চোখের অবস্থা ভালো নয় । তিনি লিখেছেন,’উৎসব মন্ডল বেঁচে আছেন,কিন্তু চোখ দুটো…।’ উল্লেখ্য, জঙ্গিরা প্রথমে উৎসব মন্ডলের দুই চোখ খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল । তারপর অসহ্য ব্যাথায় কাতরানো ওই কিশোরকে নির্মমভাবে মারধর করা হয় । প্রীতি গুহ নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন,’চোখ দুইটা ক্ষতিগ্রস্ত। তবে ঈশ্বরের কৃপায় আসতে আসতে সুস্থ হয়ে উঠবে ।’ দীপক বিশ্বাসও একই কথা বলে লিখেছেন,’চোখের অবস্থা ভালো নেই ।’
বাংলাদেশ ও ভারতের বহু মানুষ হিন্দু কিশোর উৎসব মণ্ডল জীবিত থাকার খবরে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন ৷ হরিদাস ঠাকুর শ্রবণ লিখেছেন,’ভগবান উজ্জ্বলকে দ্রুত সুস্থতা দান করুন। যে ধর্মের অপমান সহ্য করেনি কাপুরুষের মতো চুপ করে থাকেনি। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আজ মৃত্যুর মুখে। নিশ্চয়ই সে একজন বড় বীর। কিন্তু এই নবীন যুবকেরা যে বীরত্ব দেখাবে তাদের পিছনে তো দাঁড়াবার মতো কেউ নেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশে তো নেই পার্শ্ববর্তী কোন রাষ্ট্রের কোন রাষ্ট্রপ্রধানও আমাদের এই কষ্টগুলোকে দেখছে না। তাহলে কি আমরা বাংলাদেশে এভাবে ধর্মের অপমান মুখ বুজে সহ্য করব এবং প্রতিবাদ করতে গিয়ে শহীদ হব। ভগবান তুমি আমাদের বলে দাও ।’
আরিয়ান অভি লিখেছেন,এটাকে কি বেঁচে থাকা বলে! সে যে পোস্ট ট্রমাটিক ডিসওর্ডাররে ভুগবে, আজীবন তার মনে থাকবে নিজের দেশের পুলিশ নৌবাহিনী সেনাবাহিনীর সামনে তাকে জনতা পিটিয়েছিলো৷ নিজের দেশে সে যেভাবে নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলো এটাকে কি বেঁচে থাকা বলে! সে তো আজীবন ক্ষোভ আর ঘৃণা নিয়ে বড় হবে৷’
এদিকে একটা অজ্ঞাত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই কিশোরের সাথে বেশ কিছু ছবি পোস্ট করে বাংলাদেশের আইনজীবী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক লিখেছেন,’খুলনায় ধর্ম অবমাননার অযুহাতে উন্মত্ত জনতার হামলায় আহত উৎসব মন্ডলের শারিরীক অবস্থা দেখতে সামরিক হাসপাতালে যান বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট এর মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক ও হিন্দু ছাত্র মহাজোট এর সভাপতি সজিব কুন্ডু তপুর নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। হিন্দু মহাজোট ও হিন্দু ছাত্র মহাজোট নেতৃবৃন্দ উৎসব মন্ডলের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। উৎসব মন্ডলের শারীরিক মানসিক অবস্থা বেশ ভালো। চিকিৎসকরা খুব আন্তরিকতার সাথে চিকিৎসা দিচ্ছেন। সেনাবাহিনী তার এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছেন। ডাক্তারা জানান সে এখন বেশ সুস্থ। রিলিজ দেওয়ার মত। তারপরও তারা ২ দিন পর্যবেক্ষণে রেখে আগাম ২/৩ মধ্যে রিলিজ করবেন। উৎসব মন্ডলের বাবা ও মা সার্বক্ষণিক সাথে আছেন। তারাও বলেছেন উৎসব মন্ডল বর্তমানে বেশ ভালো। তারা দেশবাসীর কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তার ছেলের পক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা ও তার মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা কামনা করেছেন ।’
প্রসঙ্গত,কট্টর ইসলামি রাজনৈতিক দল বিএনপির সমর্থক আইনজীবী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিকের কর্মকাণ্ডে সেদেশের হিন্দুদের কাছেই তিনি একজন কার্যত ‘ঘৃণ্য চরিত্র’ হয়ে উঠেছেন । বিশেষ করে ছাত্র আন্দলোনের নামে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের জঙ্গিরা দেশ ছাড়ার পরে যে হিন্দু নরসংহার চালিয়েছিল তাকে লঘু করে দেখানোর অভিযোগ উঠেছে গোবিন্দের বিরুদ্ধে । যা নিয়ে চরম ক্ষিপ্ত সেদেশের সিংহভাগ হিন্দু । আজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উৎসব মণ্ডলের সঙ্গে গোবিন্দ চন্দ্রর হাসিমুখের ছবি দেখে অনেকে তাকে বিদ্রুপ করেছেন ।
রিপন বিশ্বাস লিখেছেন,’আসাদ দা ওই দালাল কে কেনো ঢুকতে দেওয়া হয়েছে?’ জয়দেব বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া,’টুপি ওয়ালাকে জাতির সাথে বৈইমানীর জন্য কঠোর বয়কট করা হোক।’ রক্তিম বনিক লিখেছেন,’উৎসব মন্ডলের পাশে গোবিন্দ পারমানবিকবোমা -কে দেখে আমি উৎসবের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ।’ রুমা সরকার লিখেছেন,’এই টুপিওয়ালা বলতো হিন্দুদের ওপর কোনো অত্যাচার হচ্ছে না এটা নাকি ইন্ডিয়ার কোন টিভি চ্যানেল থেকে মিথ্যা প্রচার করছে। সেই টুপিওয়ালা আবার উৎসব মন্ডলের করুণ পরিণতি দেখে হাসছে। উৎসব মন্ডলের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। যারা তাকে সেনাবাহিনী নৌবাহিনী ও পুলিশের সামনে নির্মমভাবে মেরেছে তাদের বিচার বাংলাদেশে হবে না। কিন্তু তাদের উপর আল্লাহর গজব পড়বে।’।