এইদিন ওয়েবডেস্ক,ওয়াশিংটন,১৬ সেপ্টেম্বর : ইরানি কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে ২৪ জনের বেশি ইরানি কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি কয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানগুলি মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ দমনে হিংসায় জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন । এদিকে এই পরিস্থিতির মাঝেই আগামী সপ্তাহে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের কথা রয়েছে।
আজ শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩) মাহসার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিক্ষোভের আশঙ্কায় ইরানজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাপক জোরদার করা হয়েছে ।
হিজাব আইন না মেনে চলায় গত বছর সেপ্টেম্বরে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন ২২ বছরের কুর্দি তরুনী মাহসা আমিনি । মাহসাকে হেফাজতে নিয়ে নির্মমভাবে পেটায় পুলিশ । অসুস্থ হয়ে পড়লে তরুনীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল । কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় । এরপর মাহসার মৃত্যু ঘিরে গোটা ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ । কট্টর মৌলবাদী সরকারের পতনের দাবিতে ওঠে আওয়াজ । ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু আলি খোমেইনির মৃত্যু কামনা করে কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয় । ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরানের সরকারের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিরোধী আন্দোলনের মুখে পড়ে শাসক । কয়েক মাস ধরে দেশকে কাঁপানো বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষের যোগ দিয়েছিল । কিন্তু এর পরেই শুরু হয় অবর্ণনীয় নিপীড়ন । হামলা, গণগ্রেফতার, পুলিশি বর্বরতা, হুমকি এবং মৃত্যুদন্ড সব কিছুই প্রয়োগ করা হয় বিক্ষোভ দমন করার জন্য । বিক্ষোভ চলাকালীন ৫০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে এবং কয়েক হাজারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকে এখনও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শারীরিক ও মানসিক আঘাত সহ্য করে বেঁচে আছেন ।
বিক্ষোভ দমন করতে ইরান সরকার মানবিধিকারের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে । যেকারণে ইরানকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয় । মাহসার মৃত্যুবর্ষিকীকে কেন্দ্র করে ফের একবার বেশকিছু ইরানি কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যম আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে । এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মাহাশা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ সহিংসভাবে দমনের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ । শুক্রবার জারি করা ওই নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে । কানাডা এবং যুক্তরাজ্যসহ বেশকিছু পশ্চিমা দেশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে ওয়াশিংটন। এছাড়া এদিন মাহসা আমিনির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এরমধ্যে আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের কথা রয়েছে। ইরানে বন্দি থাকা পাঁচ মার্কিন নাগরিকের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দি থাকা পাঁচ ইরানিকে মুক্তি দেবে ওয়াশিংটন। এছাড়া চুক্তির আওতায় দক্ষিণ কোরিয়ায় আটকে থাকা ইরানের প্রায় ছয়শ’ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়ের কথা রয়েছে। যদিও ইরানের মানবতা বিরোধী শাসকের সঙ্গে বন্দি বিনিময়ের চুক্তিকে ঘিরে বাইডেন প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা ।।