দিব্যেন্দু রায়,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),১১ জুলাই : প্রতিবেশীর বাড়ি নির্মান নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে অশান্তি চলছিল । কিন্তু শাসকদলের নেতা বা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ । তার জেরে হতাশাগ্রস্থ হয়ে ঈদের দিনে ফেসবুক লাইভে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের এক সাংবাদিক ও তাঁর মা । আব্বাস আলি নামে ওই সাংবাদিক এবং তাঁর মা নাসু বিবি বর্তমানে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ।
জানা গেছে,আউশগ্রামের কয়রাপুর গ্রামে বাড়ি আব্বাস আলির । বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা বিধবা মা, স্ত্রী, এক মেয়ে,ভাই ও ভাইয়ের পরিবার । একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সাংবাদিকতা করেন আব্বাস । পাশাপাশি ইলেকট্রিক ওয়ারিংয়ের কাজও করেন তিনি । সম্প্রতি তাঁদের প্রতিবেশী শেখ বাদশারা একটি পাকা বাড়ি নির্মানের কাজ শুরু করেছেন । নির্মিয়মান বাড়ির কার্নিশ নিয়েই মূলত বিবাদের সুত্রপাত । আব্বাস আলির আশঙ্কা,কার্নিসটি নির্মান হলে যাতায়াতের রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যাবে । মাঠ থেকে ধানের গাড়ি খামারে আনা যাবে না । এনিয়ে পুলিশ থেকে শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে বারবার দরবার করেছিলেন আব্বাস । জারি হয়েছিল ১৪৪ ধারাও । তবুও মেটেনি সমস্যা ।
রবিবার ইদের দিন রাতে আব্বাস আলি ও তাঁর মা নাসু বিবিকে ফেসবুক লাইভে দেখা যায় । তাঁদের সামনেই নামানো ছিল জলের বোতল, কীটনাশক ও ঘুমের ওষুধ । প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে লাইভ করেন । তবে তা খাওয়ার আগে আব্বাস আলি ও তাঁর মা বলেন, ‘একই পাড়ার বাসিন্দা শেখ বাদশা,রহিত শেখ , শকুন্তলা বিবিরা যে বাড়ি নির্মাণ করছেন ওই নির্মিয়মান বাড়িতে জোর করে রাস্তার জায়গা অবরোধ করে কার্নিশ তৈরি করছেন। কার্নিশ বাড়ানোয় যাতায়াতের রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে গরুর গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে । এনিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে বারবার বলেছি,পুলিশকে জানিয়েছি,এমনকি ১৪৪ ধারা জারি হয়েছিল একবার । কিন্তু যথারীতি নির্মানের কাজ চলে যাচ্ছে ।’
এরপর শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে আব্বাস বলেন, ‘ওই প্রতিবেশী পরিবারটি ধনী ও প্রভাবশালী হওয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় কর্মী শেখ হীরা, বিপ্লব শেখ, শেখ নাসিররা তাদের পক্ষ নিয়ে উলটে আমাদের হুমকি দিচ্ছে । আমরাও তৃণমূলের সমর্থক । কিন্তু এখন দেখছি যার টাকা আছে নেতারা তাদের পাশেই আছে । তাই আমাদের বেঁচে থেকে লাভ নেই । আমরা বিষ খেতে বাধ্য হচ্ছি ।’এরপর তাঁরা কীটনাশক ও ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেন ।
জানা গেছে,রাতে আব্বাস আলিদের ফেসবুক লাইভ নজরে পড়ে যায় আউশগ্রামের করোটিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্বাসের এক সহকর্মী কুন্তল চট্টোপাধ্যায়ের । তিনিই ফোন করে বিষয়টি গুসকরা পুলিশ ফাঁড়িতে জানান । এরপর পুলিশ গিয়ে মা ও ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে । মা নাসু বিবির অবস্থা স্থিতিশীল হলেও আব্বাস আলির অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে ।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় । চাপে পড়ে গেছে শাসকদল । যদিও বিল্বগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি ফাল্গুনী গোষ্বামী জানিয়েছেন,ওই বাড়িটি যথাযথ নিয়ম মেনেই নির্মান করা হচ্ছে । তবুও একাধিকবার এনিয়ে আলোচনায় বসা হয়েছিল । সাংবাদিক সুস্থ হয়ে ফেরার পরে ফের একবার আলোচনায় বসা হবে । তবে এভাবে বিষপানের বিরোধিতা করেছেন ফাল্গুনীবাবু । তিনি বলেন, ‘আব্বাস আলি আবেগপ্রবণ হয়ে বিষপান করে ঠিক কাজ করেনি ।’।