এইদিন ওয়েবডেস্ক,চট্টগ্রাম(বাংলাদেশ),১৭ এপ্রিল : বাপের বাড়ি থেকে অতিরিক্ত পনের টাকা আনতে পারেনি তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী । আর সেই অপরাধে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে প্রথম বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাইকে চাপিয়ে নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় স্বামী । তারপর সে স্ত্রীর চোখ খুঁচিয়ে অন্ধ করার পর দু’হাত পা মুচড়ে ভেঙে দেয় । পাথর দিয়ে থেঁতলে দেয় স্ত্রীর মাথা । তাতেও মৃত্যু না হলে স্ত্রীর বুকের উপর মোটরসাইকেলের তপ্ত সাইলেন্সার চেপে ধরে । ঘটনার মোড় ঘোরাতে নিজেই স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে বেপাত্তা হয়ে যায় । ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির দাঁতমারা এলাকায় । এদিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় এই নির্যাতন সহ্য করার পরেও ২৬ দিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছিলেন মণি আক্তার নামে বছর বাইশের ওই গৃহবধু । কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি । শেষে মৃতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনি স্বামী মোহম্মদ সুমনকে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীতে র্যাব-৭ এর জওয়ানরা । শনিবার ভোরে নগরীর বায়োজীদ থানার অন্তর্গত চন্দ্রনগর এলাকার কলাবাগানের জেড-এ আবাসিক এলাকা থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয় ।
জানা গেছে,ভুজপুর থানার বাদুরখিল এলাকার বোছা মিয়ার বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে মোহম্মদ সুমন । রবিবার সকালে র্যা ব-৭ হাটহাজারী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত এসপি মোহম্মদ মাহফুজুর রহমান এনিয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন । তিনি জানান,বছর আটেক আগে প্রথম বিয়ে সুমনের । বছর দুয়েক আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে সে । কিন্তু সুমন তাদের উপর প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল । এসব তথ্য গোপন করে সুমন বছর দেড়েক আগে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে মণি আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে তাকে বিয়ে করে । যদিও বছর না ঘুরতেই যথারীতি শুরু হয় পনের দাবিতে অত্যাচার । প্রতিনিয়ত এই অত্যাচার দেখে মণির পরিবারের লোকজন সুমনকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেয় এবং ৫০ হাজার টাকা দেয়। এ ছাড়া স্বামীর যৌতুকের চাহিদা মেটানোর জন্য মণি নিজেও চা বাগানে চাকরি করতে শুরু করে ।
মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় সুমন যৌতুকের জন্য মণি আক্তারের বাবার কর্মস্থলে আসে এবং অতিরিক্ত পনের জন্য চাপ দেয় । কিন্তু মণির দরিদ্র পিতা টাকা দিতে না পারায় সুমন ক্ষিপ্ত হয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে বন্ধু টিপুর মোটরসাইকেলে চড়ে সেখান থেকে চলে যায় ।বাবার কাছ থেকে টাকা না আনতে পারায় মোটর সাইকেলে বসেই সুমন তার স্ত্রী মণিকে গালাগালি করতে থাকে । তারপর ভুজপুর থানার কালিকুঞ্জ এলাকায় একটি নির্জন জায়গায় এসে সুমন তার স্ত্রীর বাম চোখ নষ্ট করে ফেলে ও দুই হাত দুই পা মুচড়ে ভেঙে দেয় । এরপর ইট দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দেয় । মণি আক্তার রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মোটর সাইকেলের তপ্ত সাইলেন্সার পাইপের সঙ্গে বুক চেপে ধরে পুড়িয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করার চেষ্টা করে । তারপর ঘটনাটির মোড় ঘোরানোর উদ্দেশ্যে মণিকে প্রথমে নাজিরহাট সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় । কিন্তু তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয় । সুমন তার স্ত্রীকে সেখানে ভর্তি করে দিয়েই বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিল ।’
জানা গেছে,এই ঘটনায় নিহত বধুর দাদা মোহম্মদ আব্বাস ভুজপুর থানায় মোহম্মদ সুমনের বিরুদ্ধে একটি খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে তাকে গ্রেফতার করে হাটহাজারীর র্যাব-৭ এর তদন্তকারী দল । এদিন ধৃতকে ভুজপুর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ।।