দিব্যেন্দু রায়,পূর্বস্থলী(পূর্ব বর্ধমান),২৫ ফেব্রুয়ারী : মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের বেসমেন্টের ঠিক নিচেই রয়েছে সংকীর্ণ বাঙ্কার । ছাদে একটি মাত্র বৈদ্যুতিক বাতি । সেটা দিবারাত্র টিমটিম করে জ্বলছে । ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই ওই বাঙ্কারই নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে পাঁচ শতাধিক মেডিকেল পড়ুয়ার । শোয়া তো দূর,পা ছড়িয়ে বসার উপায় নেই । খাবারের অভাব । এমনকি অক্সিজেনের ঘাটতির কারনে শ্বাস নিতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে । কিন্তু বাঙ্কারের বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই । কারন মুহুর্মুহু হচ্ছে বোমা বর্ষণ । তার সঙ্গে মাঝে মাঝেই রাশিয়ান সেনাবাহিনীর ভারি বুটের আওয়াজ ।
ইউক্রেনের খারকিভ শহরের মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের গোপন বাঙ্কার থেকে ফোনে এমনই হাড় হিম করা অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন তৃতীয় বর্ষের মেডিকেল পড়ুয়া পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলীর আকিব খান । আতঙ্কিত আকিব বলেন, ‘আমাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি ভারতীয় দুতাবাসে চারবার ইমেল করেছি । কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি ৷ এদিকে এটিএমগুলোও বন্ধ হয়ে গিয়েছে । তার উপর ইউক্রেন থেকে ফ্লাইটের ভাড়া যেখানে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাগতো, এখন তা বেড়ে ৪০-৫০ হাজার টাকা হয়ে গেছে । ফলে আতঙ্কের প্রহর গোনা ছাড়া আমাদের বিকল্প রাস্তা নেই ।’
পূর্বস্থলী-২ চুপির কালীতলায় বাড়ি আকিব খানের । বাবা আমজাদ খান পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে কর্মরত । মা সুলতানা বেগম গৃহবধুর । তাঁদের দুই সন্তানের মধ্যে ছোট আকিব । তিনি ২০১৮ সালে ইউক্রেনের খারকিভ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন । বর্তমানে তৃতীয় বর্ষ চলছে । আকিব জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার তখন ভারতীয় সময় রাত্রি দশটার আশপাশ হবে । সেই সময় হোস্টেলের আশপাশে প্রবল জোরে বিস্ফোরণ হয় । পরে জানা যায় ওটা রাশিয়ান মিশাইল ছিল । তাই কোনও প্রচার ঝুঁকি না নিয়ে মেডিকেল কলেজের পাঁচ শতাধিক পড়ুয়াকে বেসমেন্টের নিচে গোপন বাঙ্কারে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় । তিনি বলেন, ‘আমরা সঙ্গে করে বিস্কুট আর ছোলা নিয়ে এসেছিলাম । তাই খেয়েই কাটছে । তবে শুক্রবার কোনও বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাইনি । তবে এই আতঙ্কের পরিবেশের মাঝেই আমাদের অফ লাইন ক্লাস চলছে । তবে আমাদের বাঙ্কারের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না ।’
আকিবের মা সুলতানা বেগম বলেন, ‘আমরা প্রচন্ড আতঙ্কের মধ্যে আছি । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে আটটা নাগাদ ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল । প্রচন্ড ভয়ে আছে । দেশে ফিরে আসতে চাইছে । তাই সরকারের কাছে বিনীত নিবেদন আমার ছেলেসহ সমস্ত ভারতীয় পড়ুয়াদের অবিলম্বে দেশে ফেরানোর ব্যাবস্থা করা হোক ।’ একই দাবি করেছেন আকিবের বাবাও ।।