এইদিন ওয়েবডেস্ক,২৬ জুন : নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ৪৪ সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য হয়েছেন পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডার বাসিন্দা মরিয়ম নাবাতাঞ্জি । এযাবৎ তিনি জমজ সন্তান জন্ম দিয়েছেন চার বার। একসঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন পাঁচ বার । পাঁচ বার একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন । মাত্র একবার এক সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি । মরিয়মের ছয় সন্তান মারা গেছে । সর্বাধিক সন্তানের জন্মদানের বিশ্ব রেকর্ডধারী মরিয়ম এখন নিজ দেশে ‘মা উগান্ডা’ হিসেবে পরিচিত ।
কিন্তু মরিয়মের অধিক সন্তান জন্মদানের পিছনে রয়েছে দুঃখজনক এক কাহিনী । ছোটবেলায় বাবা-মা তাকে বিক্রি করে দেন । মাত্র ১২ বছর বয়সে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করতে বাধ্য হন তিনি । তারপর কখনও একসঙ্গে দুই,তিন বা চার সন্তানের জন্ম দেন মরিয়ম । বারবার এক সঙ্গে একাধিক সন্তানের জন্মের পর তিনি চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন । বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি অন্য নারীদের মতো নন । চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানান, তার ডিম্বাশয় স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বড়। যা হাইপারোভুলেশন নামের একটি প্রজনন সমস্যা। এই রোগের চিকিৎসা থাকলেও উগান্ডার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন ।
উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার মুলাগো হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্ট চার্লস কিগগুন্ডু বলেন, মরিয়মের সমস্যাটি বংশগত । এটি একটি জেনেটিক সমস্যা। এই সমস্যার কারণে একজন নারীর ডিম্বাশয়ে এক চক্রে একাধিক ডিম্বাণু ছড়িয়ে যায়। যা উল্লেখযোগ্যভাবে একাধিক সন্তান জন্মের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে ।’
মরিয়ম বলেন,’চিকিৎসকরা বলেছিলেন আমার ডিম্বাশয়ে উর্বরতার মাত্রা হ্রাস করার জন্য সন্তান জন্মদান অব্যাহত রাখতে হবে । আমার ক্ষেত্রে কোনও পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিই নাকি কাজ করবে না। চিকিৎসকরা বলেছিলেন শরীর স্বাভাবিক রাখার একমাত্র উপায় সন্তানের জন্মদান অব্যাহত রাখা ।’ মার্কিন বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা মায়ো ক্লিনিকের মতে,গুরুতর ওভারিয়ান হাইপারস্টিমুলেশন উপসর্গ একেবারে অস্বাভাবিক। এটি জীবনের জন্য হুমকি হয়েও উঠতে পারে ।’
কিন্তু নিজের জীবন বাঁচাতে গিয়ে সন্তানের জন্মদান অব্যাহত রাখতে গিয়ে বর্তমানে চরম বিপাকে পড়েছে মরিয়ম নাবাতাঞ্জি । কারন ক্রম বর্ধমান পরিবারের দায়দায়িত্ব সামলাতে না পেরে বাড়িতে যেটুকু সঞ্চয় ছিল সব নিয়ে চম্পট দিয়েছে মরিয়মের স্বামী । হাতেই ২০ ছেলে এবং ১৮ মেয়েকে লালন-পালনের দায়িত্ব এখন মরিয়মের কাঁধে । তা সত্ত্বেও এটাকে দূর্ভাগ্য নয়,বরঞ্চ ভগবানের আশীর্বাদ হিসাবে মেনে নিয়েছেন তিনি । মরিয়ম বলেন, ‘এটি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ যে তিনি আমাকে এত বেশি সন্তান দিয়েছেন ।’।