জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,০৯ মার্চ : গত ৮ ই মার্চ ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে এই দেশের প্রতিটি রাজ্যে যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দিনটি পালিত হয়। পেছিয়ে ছিলনা নারীদের স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত দুর্গাপুরের দুই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘উত্তিষ্ঠত জাগ্রত’ ও ‘জাগো নারী’-র উদ্যোগে এলাকার বুকে পালিত হয় নারী দিবস। প্রসঙ্গত, দুর্গাপুরের বিশিষ্ট ডাক্তার উদয়ন চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত এই দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গত কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় নারীদের স্বার্থে সুনামের সঙ্গে কাজ করে চলেছে।
অজ্ঞতার জন্য গর্ভবতী ও থাইরয়েড গ্রস্ত মহিলাদের, বিশেষ করে গ্রাম এলাকার,একটা ভুল ধারণা থাকে। সময়মত ডাক্তার না দেখানোর জন্য নবাগত শিশুদের নানা ধরনের সমস্যা হয়। বলা ভাল রোগকে সঙ্গী করেই তারা ভূমিষ্ঠ হয়। তাদের স্বার্থে আয়োজন করা হয় এক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের। সকাল থেকেই ডাক্তার চৌধুরী নিজ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিবিরে শতাধিক গর্ভবতী ও থাইরয়েড গ্রস্ত মহিলাকে পরীক্ষা করেন এবং বিনামূল্যে অনেকের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। একইসঙ্গে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয় ।
এরপর তারা কাঁকসা থানার মলানদীঘি এলাকার ডোমপাড়ায় যান। সেখানেও তারা স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করেন। ‘পিরিয়ড’ নারী জীবনের স্বাভাবিক ঘটনা হলেও এখনো গ্রামের নারীরা এটা নিয়ে লজ্জিত হন। এই সময় নারী-শরীরের সঙ্গে বাইরের পরিবেশের সরাসরি যোগাযোগ ঘটে। ভুল ধারণার জন্য নারীরা বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হন। ভুল ধারণা দূর করার জন্য এগিয়ে আসে ডাক্তার চৌধুরীর সংস্হা। এলাকায় স্থানীয় মহিলাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করা হয় । ‘পিরিয়ড’-এর সময় কিভাবে থাকতে হবে এবং স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে হয় সেই বিষয়ে সচেতন করা হয়। হাতে তুলে দেওয়া হয় স্যানিটারি প্যাড। এমনকি স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।
শুধু স্বাস্থ্য শিবির নয়, সন্ধ্যার সময় দুর্গাপুরের বুকে আয়োজন করা হয় পথনাটিকার। সংস্হার মহিলা সদস্যরা নৃত্য নাটিকার মাধ্যমে মহিলাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করে । উদয়নবাবু ও স্বাস্থ্য কর্মীরা ছাড়াও সৌরভ কর , রুমা জেমস, প্রশান্ত সিংহ, ডেভিজিৎ পাল, স্বপ্নময় পাল, শিবানী, পিউ, শ্রাবন্তী, পূর্ণিমা সহ দুই সংস্থার প্রায় সকল সদস্য শিবিরে উপস্থিত ছিলেন । মহিলা সদস্যদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক কিশোরী বলল, ‘পিরিয়ড নিয়ে সত্যিই ভুল ধারণা ছিল । আজ ডাক্তার বাবুর কথা শুনে বুঝতে পারলাম এটা নিয়ে লজ্জা পাবার কিছু নাই । আগামী দিনে ডাক্তার বাবুর পরামর্শ মেনে চলব ।’
উদয়নবাবু বলেন,’শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমি এবং এই দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা কার্যত সারা বছর এলাকার মানুষের পাশে থাকি । কিন্তু আজকের বিশেষ দিনের গুরুত্ব অন্য রকম । চিকিৎসক হিসাবে দেখেছি বর্তমান যুগেও মেয়েরা কয়েকটি স্বাভাবিক নারী রোগ সমস্যা নিয়ে লজ্জিত হয় এবং অজ্ঞতার জন্য পরবর্তীকালে বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় । তাই নারী দিবসে তাদের সচেতন করার উদ্দেশ্যে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী দিনেও আমরা তাদের পাশে থাকব ।’।