এইদিন ওয়েবডেস্ক, হরিশ্চন্দ্রপুর (মালদা) ,০১ অক্টোবরে : এক ব্যক্তির নামে একাধিক ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে বন্যাত্রাণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল মালদহ জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই তৃণমূল সদস্যের বিরুদ্ধে । এদিকে বণ্যাত্রাণের টাকা তছরুপের মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে । ফলে যাদের নামে ভূয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল এখন সেই সমস্ত গ্রামবাসীদের বাড়িতে প্রায়ই হানা দিচ্ছে পুলিশ । যার জেরে গ্রেফতারির আতঙ্কে আতঙ্কিত ওই সমস্ত গ্রামবাসী ব্লক ও পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন । হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু জানিয়েছেন,ঘটনায় তদন্ত চলছে ।
২০১৭ সালের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকা । ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বাসিন্দারাও । সাধারণ মানুষের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য সরকার । ২০১৯ সালে ওই ক্ষতিপূরণের টাকা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছিল । অভিযোগ,তখন এক ব্যক্তির নামে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য এনামুল হক,পম্পা রায়সহ একাধিক সদস্য ।
বরুই গ্রামের বাসিন্দা হরি দাসের অভিযোগ, ‘আমার একটাই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট । ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩৩০০ টাকা আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল । ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের তালিকায় ১১৭ নম্বরে আমার নাম ছিল । কিন্তু পরে জানতে পারি ওই তালিকায় ৩০১,৩০২,৯১৬,১০০৭ ও ১০০৮ নম্বরেও আমার নাম আছে । কিন্তু টাকা পাওয়া তো দুরের কথা ওই সমস্ত অ্যাকাউন্টগুলি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না ।’ পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, ‘এমনকি ক্ষতিপূরণের টাকা পাইয়ে দেওয়ার নামে আমাদের গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী আমার কাছ থেকে ৫০০ টাকা কাটমানি পর্যন্ত নিয়েছিলেন ।’
প্রসঙ্গত,হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে বণ্যাত্রাণের লক্ষ লক্ষ টাকা তছরুপের ঘটনায় পরবর্তীকালে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয় । আদালতের নির্দেশে বরুই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সোনা মনি সাহা, হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাসসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন বিডিও । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ।
চৌপাল গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম,বরুই গ্রামবাসী লক্ষী দাসরা বলেন, ‘আমাদের আগে থেকেই একটা করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল । তারপর বণ্যা ত্রাণের টাকা পাওয়ার জন্য আমাদের কাছ থেকে ভোটার কার্ড,আধার কার্ডের প্রতিলিপি নেওয়া হয়েছিল । সেগুলো দেখিয়ে আমাদের নামে আরও একটা করে অ্যাকাউন্ট খোলা হয় । আমাদের আসল অ্যাকাউন্টে একবার ৩৩০০ টাকা করে ঢুকেছিল । পরে জানতে পারি ভূয়ো অ্যাকাউন্টেও নাকি টাকা ঢুকেছিল । সেই টাকা কেউ তুলেও নিয়েছে । এখন ওই ভূয়ো অ্যাকাউন্টের কারনে পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করার জন্য প্রায়ই বাড়িতে হানা দিচ্ছে । কোনও অপরাধ না করেও গ্রেফতারির ভয়ে কাজকর্ম ফেলে আমাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে ৷ তাই বিডিওর কাছে এর বিহিত চাইতে এসেছি ।’
বৃহস্পতিবার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত চৌপাল ও বরুই গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা শুক্রবার বিডিওর কাছে গন অভিযোগ দায়ের করেন । তাঁরা দুই গ্রামের পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য ও সদস্যা যথাক্রমে এনামুল হক ও পম্পা রায়ের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবি জানান । যদিও অভিযুক্ত এনামুল হকের দাবি, ‘২০১৭ সালের বণ্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছিলেন তৎকালীন সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য । উনি জীবিত না মৃত লোকের তালিকা তৈরি করেছিলেন কিনা আমাদের জানা নেই । আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে ।’
অন্যদিকে এনিয়ে বিজেপির মালদা জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘২০১৭ সালের বণ্যাত্রাণের টাকা তছরুপ করেছেন বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, এনামুল হকসহ বাকি সদস্যরা । সেটা প্রমানিত সত্য । এলাকার মানুষ তৃণমূলের দূর্নীতি দেখে বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেছে । আমার দাবি এই দূর্নীতিতে জড়িত এনামুল হকসহ তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনত ব্যাবস্থা নেওয়া হোক । আইন মোতাবেক দোষীদের শাস্তি হোক ।’।