প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ আগষ্ট : স্ত্রীকে আশাকর্মীর চাকরি করে দেওয়ার ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে এক যুবকের কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠলো এক পঞ্চায়েত সদস্য ও তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে । টাকা নেওয়ার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাবার পরেও স্ত্রীর আশাকর্মীর চাকরি আর হয়নি। এই অবস্থায় হতাশায় মাথা ঠিক রাখতে না পেরে মঙ্গলবার কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন স্বামী রাজকুমার হাজরা। এই ঘটনা জানাজানি হতেই এদিন ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির দুর্গাপুর পঞ্চায়েতের বড়র গ্রামে। কীটনাশক খেয়ে অসুস্থ হয়েপড়া রাজকুমারের চিকিৎসা চলছে মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে । তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করে তদন্তে নেমেছে মেমারি থানার পুলিশ । অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মণিকা রায় ও তৃণমূল কর্মী শুভঙ্কর মজুমদার যদিও দাবি করেছেন, চক্রান্ত’করে তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।
মেমারির বড়র গ্রামেই বাড়ি রাজকুমার হাজরার ।তিনি এদিন অভিযোগে জানান,টোটো চালিয়ে তিনি সংসার চালান । মাটির বাড়িতে কষ্ট করে থাকেন ।দু’বছর আগে তাঁদের এলাকার ১৮ নম্বর সংসদের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মণিকা রায় এক প্রকার জোর করে তাঁকে তৃণমূল পার্টিতে যোগ দেওয়া করান ।এমনকি ওই সদস্য তাঁকে দিয়ে বেশ কিছু ‘অনৈতিক’ কাজও করিয়ে নিয়েছে। এর পর পঞ্চায়েত সদস্য মণিকা রায় ও পঞ্চায়েত কর্মী (ভিআরপি) তথা তৃণমূল কর্মী শুভঙ্কর মজুমদার একদিন তাঁকে ডাকে । তারা তাঁর স্ত্রীকে আশা কর্মীর চাকরি করে দেবে বলে জানায় ।তার জন্য পঞ্চায়েত সদস্যা ও পঞ্চায়েত কর্মী তাঁর কাছে ৭০ হাজার টাকা দাবি করে । এত টাকা তিনি দিতে পারবেন না বলে জানালে,৫৫ হাজার টাকা দিতে হবেই বলে জানিয়েদেন পঞ্চায়েত সদস্যা ও পঞ্চায়েত কর্মী । চিকিৎসাধীন রাজকুমার হাজরা জানান, ধারদেনা করে ৫৫ হাজার টাকা জোগাড় করে তিনি সেই টাকা উনাদের হাতে তুলেদেন । তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও স্ত্রী আশা কর্মীর চাকরি হয় নি । এখন টাকাটাও ফেরৎ দিতে অস্বীকার করছেন পঞ্চায়েত সদস্যা ও পঞ্চায়েত কর্মী । তারই মধ্যে পাওনাদারা টাকা ফেরৎ চেয়ে প্রতিনিয়ত তাগাদা করছে।’ এই অবস্থায় আর মাথা ঠিক রাখতে না পেরে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন বলে রাজকুমার হাজরা জানিয়েছেন ।
রাজকুমারের স্ত্রী সীমাদেবী বলেন,’আমরা খুব গরিব। দশ বছর আগে মাধ্যমিক পাশ করেছিলাম।এলাকার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মণিকা রায় ও তৃণমূল কর্মী শুভঙ্কর মজুমদার আমাকে আশাকর্মীর চাকরি করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় আমার স্বামীকে। সেই কথা স্বামী বিশ্বাস করে নিয়েছিল । তাই পঞ্চায়েত সদস্য ও পঞ্চায়েত কর্মীর দাবি মতো ৫৫ হাজার টাকা জোগারের জন্য তাঁর স্বামী ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা থেকে ওই টাকা ধার করে। ওই টাকা উনাদের হাতে তুলে দেয় । কিন্তু তাঁর চাকরিতো হয়নি। এদিকে ঋণদানকারী সংস্থার তাগাদাও বাড়ছে। এ নিয়ে আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয় । আমি দুই ছেলে নিয়ে বাপেরবাড়ি চলে যাই ।’ বিষয়টি নিয়ে থানাতেও অভিযোগ করেছেন বলে সীমাদেবী জানান ।
এইসব অভিযোগ যদিও মানতে চাননি পঞ্চায়েত সদস্য মণিকা রায় । তিনি বলেন,’কাউকে চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা একজন পঞ্চায়েত সদস্যার কি করে থাকবে !তাছাড়া রাজকুমার অন্য সংসদের বাসিন্দা।আমার সঙ্গে রাজকুমারের কোন সম্পর্ক নেই। রাজনৈতিক চক্রান্ত করে এইসব অভিযোগ এনে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে“। একই ভাবে রাজকুমারের আনা অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে পাশকাটান শুভঙ্কর মজুমদার । তিনি বলেন,“চাকরি দেওয়ার মত যোগত্যাপূর্ণ লোক আমি নই । আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে ।’ এলাকার তৃণমূল নেতা গোলাম রহমান মল্লিকও একই ভাবে পাশে দাঁড়াননি রাজকুমারের । তিনি এদিন দাবি করেন ,“লোকের সঙ্গে প্রতারণা করে রাজকুমারই টাকা তোলে। পুলিশের উচিত রাজকুমারকে গ্রেপ্তার করা ।’এসডিপিও(বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী জানান,’অভিযোগ পাওয়ার পরেই মামলা রুজু হয়েছে।প্রকৃত কি তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে ।’।