দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২৬ সেপ্টেম্বর : সোমবার রাতে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার পালটিয়া রোডের একটি সাইকেল মেরামতির দোকান থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির যন্ত্রপাতি এবং বেশকিছু বোমার মশলাসহ জঙ্গল শেখের বাহিনীর দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের নাম রমজান শেখ (২৯) এবং রফিক শেখ (৫২) । তাদের বাড়ি কাটোয়ার কেশিয়া মাঠপাড়ায় । আর ওই দোকানটি হল রমজান শেখের । পুলিশ জানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে যে তারা জঙ্গল শেখের গ্যাংয়ের সদস্য । এদিকে বাঁকুড়ায় গুলিকাণ্ডের পর থেকেই পুলিশ হন্যে হয়ে জঙ্গলপুত্র সাদ্দাম শেখকে খুঁজছিল । অবশেষে তার হদিশ মেলে দিল্লিতে । সাদ্দাম শেখকে গ্রেফতার করে এরাজ্যে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কাটোয়া থানার পুলিশ ।
পুলিশ সূত্রে খবর, পুলিশ সোর্স মারফত জানতে পারে যে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর জঙ্গল শেখ নিজের সাম্রাজ্য ফিরে পেতে কাটোয়ায় প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি শুরু করেছিল । সেই কারনে অস্ত্রভান্ডার মজুত করতে শুরু করেছিল জঙ্গল ও তার ছেলে সাদ্দাম । সাদ্দামের নির্দেশমতো ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদ পাঠানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল । আর সেই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ধৃত রমজান ও রফিক শেখের ওপরে । পুলিশ জানতে পেরেছে, নদিয়া জেলায় জঙ্গল শেখের ঘনিষ্ঠদের কাছেও ইতিমধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছিল । নদিয়া, কাটোয়া সহ বিভিন্ন এলাকার পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ দুস্কৃতীদের এককাট্টা করে জঙ্গল ও সাদ্দামরা কাটোয়া শহরে ঢোকার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছিল। জঙ্গল শেখের বাহিনী কাটোয়ায় এসে খুন ও লুটপাটের পরিকল্পনা নিয়েছিল বলে দাবি পুলিশের । সেই উদ্দেশ্যে রমজান শেখ এবং রফিক শেখকে কিছুদিন আগে বীরভূমে যেতে বলে জঙ্গল শেখ । জঙ্গল শেখের কথা অনুযায়ী তারা বীরভূম গিয়েছিল। সেখানে কিতাবুল শেখ ওরফে তারকাটা নামে আরও এক জঙ্গলের ঘনিষ্ঠ দুস্কৃতীর সঙ্গে দেখা করে তারা। তারপর পরিকল্পনা অনুযায়ী অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত রাখা শুরু হয়।
জানা গেছে,জঙ্গল শেখ ও তার পুত্রের এই ভয়ংকর পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে জঙ্গলের গ্যাংয়ের উপর কড়া নজরদারি চালাচ্ছিল পুলিশ । সোমবার রাতে পুলিশের কাছে সূত্র মারফত খবর আসে পালটিয়া রোডে রমজান শেখের সাইকেল মেরামতির দোকানে অস্ত্র মজুত করা হচ্ছে । খবর পেতেই সেখানে হানা দেয় পুলিশ । পুলিশ সেখানে গেলে দেখতে পায় যে ইঁটের গাঁথনি এবং অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া রমজান শেখের দোকানের সার্টার বন্ধ রয়েছে । আর ভিতর দেখতে আসছে নিচু গলায় বার্তালাপের শব্দ । পুলিশ সার্টার খোলার কথা বললেও প্রথমে খোলা হয়নি । পরে সার্টার খুললে পুলিশ দোকানের ভিতর রমজান শেখ ও রফিক শেখকে দেখতে পায়। এরপর দুজন স্থানীয় বাসিন্দাকে ডেকে এনে দোকানে তল্লাশি চালাতেই তিনটি পলিথিনের প্যাকেট একটি দেশি পাইপগান, পাইপগান তৈরির একাধিক যন্ত্রাংশ, হাতুড়ি এবং দুইধরনের প্রায় ৫০০ গ্রাম বারুদ উদ্ধার করা হয় । পুলিশ রমজান শেখ ও রফিক শেখকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে ।
আজ মঙ্গলবার ধৃতদের কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হয় । পুলিশ দুজনকে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায় । বিচারক দু’জনকেই পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে ।।