প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ জুন : দুই সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে আদালতে মুখ পুড়লো পুলিশের । বালি বোঝাই লরি থেকে পুলিশের টাকা নেওয়ার ছবি ক্যামেরা বন্দি করায় পুলিশ আরামবাগ টিভির কর্ণধার সফিকুল ইসলাম ও তাঁর সহযোগী সাংবাদিক সুরজ আলি খানকে ছিনতাইয়ের মিথ্যা মামলায় ফাঁসায় । সুরজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছিল । ২০১৭ সালে পুলিশের করা সেই মামলায় দুই সাংবাদিককেই শুক্রবার বেকসুর খালাস ঘোষণা করলেন বর্ধমানের সিজেএম চন্দা হাসমত।
সাংবাদিকদের পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ আশিক রসুল বলেন, দুই সাংবাদিককে যে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল তা আদালতের রায়েই প্রমাণ হয়ে গেল। আইনজীবীর কথায়,অভিযোগে বিস্তর অসঙ্গতি ছিল। মামলা সাজাতে গিয়ে নানা ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল এফআইআরে। আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় অভিযোগকারীর বয়ানেও নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এমনকি বিচারক তাঁকে হেফাজতে নেওয়ারও হুমকি দেন। পুলিশের টাকা নেওয়ার ছবি করার জন্যই দু’জনকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল।সেই বিষয়টিই আদালতের সামনে তুলে ধরা হয়। আদালত দু’জনকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে ২০ সেপ্টেম্বর ছিনতাইয়ের কথা জানিয়ে মাধবডিহি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শেখ সাকিল। তাঁর অভিযোগ, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ তিনি নাকি মোটর বাইকে চেপে বর্ধমান-আরামবাগ রোড ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। ওই সময় দিঘিরকোণের কাছাকাছি একটি জায়গায় একটি চারচাকার গাড়ির কাছে দু’জন লোক দাঁড়িয়েছিল। তারা তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে টাকার ব্যাগ বের করে নেয়। ব্যাগে ৬ হাজার ৫০০ টাকা ছিল বলে অভিযোগকারীর দাবি। এছাড়াও তাঁর গলা থেকে দেড় ভরি ওজনের সোনার চেনও নাকি ছিনিয়ে নেয় ওই দু’জন। বাধা দিতে গেলে তারা তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এরপর লোকজন এলে একজন গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। অপরজন গাড়িতে উঠতে গিয়ে পড়ে যায়। তাকে ধরে ফেলা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানতে পারেন, তার নাম সুরজ আলি খান। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সফিকুল ও সুরজের বিরুদ্ধে ছিনতাই ও অস্ত্র আইনের ২৫ ও ২৭ ধারায় মামলা রুজু করে। সুরজকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পেশ করে হেফাজতেও নেয় পুলিশ।যদিও অভিযুক্তদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। তদন্ত সম্পূর্ণ করে পুলিশ ৩৯২ ও ৪১১ ধারায় চার্জশিট পেশ করে।
বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন বারবার সমন দেওয়ার পরও সাক্ষ্য দিতে না আসায় সাকিলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। সাক্ষ্য চলাকালীন অভিযুক্তদের আইনজীবীর জিজ্ঞাসায় কোন তারিখে ঘটনা ঘটেছিল সেটাই বলতে পারেন নি সাকিল।এমন কি বিচারকের কাছে অভিযোগকারী
বয়ান দেয়,পুলিশ তাকে সিজার লিস্টে সই করতে বলেছিল বলেই তিনি তা করেছিলেন। এদিন বিচারক রায় জানানোর পর সফিকুল ও সুরজ জানান,আদালতের প্রতি তাঁদের ভরসা ছিল । শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হল।।