প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৬ এপ্রিল : বিজেপির প্রতীষ্ঠা দিবসের দিন দলের কর্মীদের দেশের প্রত্যেকটা মানুষের হৃদয় জয় করার বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু দেশের মানুষের হৃদয় জয় করাতো দূরের কথা,উল্টে বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনেই বিজেপি পার্টি অফিসের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ দেখায় দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। তা নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশ সেখানে পৌছে উত্তেজনা সামাল দেয় ।বৃহস্পতিবার এমনই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের ঘোরদৌড়চটির জেলা বিজেপি কার্যালয়ে। ফের যাতে কোন অশান্তির ঘটনা না ঘটে তাই প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনে জেলা বিছেপি পার্টি অফিসে মোতায়েত থাকে পুলিশ । আর এইসব নিয়ে তীর্যক কটাক্ষ করেছে শাসক দলের নেতৃত্ব ।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে বিজেপি নেতারা তৃণমূল কংগ্রেস
দলের সমালোচনা করলেও বিজেপি তেও যে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তা এদিন চাক্ষুষ করলেন বর্ধমানবাসী। তবে এই প্রথম বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল এমনটা ।ইতিপূর্বে বছর দেড় দুই আগে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপি পার্টি অফিসে ভাঙচুয় চালানো, এমনকি বিজেপি কর্মীবাহী গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে।আর এদিন যে ক্ষোভ বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে তার সূত্রপাত ঘটে মাস খানেক আগে ।
দলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা-কে ‘অযোগ্য’ বলে অভিযোগ করে গত ২০ মার্চ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি পদ থেকে ও দল ছাড়তে চেয়ে উচ্চ নেতৃত্বকে চিঠি দেন শ্যামল রায়।তার পরিপ্রেক্ষিতে শ্যামল রায়কে শোকজ করার পর দল তাকে বহিস্কার করে। এর পর জেলা বিজেপির কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে। শ্যামলবাবু সামাজিক মাধ্যমে দলের একগুচ্ছ নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যা নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব।এরই মধ্যে বহিষ্কার করা হয় শ্যামলকে। এরপর আরও কয়েকজন নেতা কর্মী এবং পদাধিকারী পদত্যাগ করেন। দলের অন্দরে ক্ষোভের আগুন তখন থেকেই ধিকি ধিকি জ্বলছিল।
এইদিন দুপুরে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ চরম আকার নেয়।শ্যামল রায়কে দলে ফেরানোর দাবিতে কয়েকজন ‘বিক্ষুব্ধ’ দুপুরে বিজেপি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান আন্দোলন শুরু করে। তারপরেই কার্যালয়ের মূল দরজায় চেন দিয়ে তালা মেরে দেওয়া হয়।তার জেরে কার্যালয়ের ভিতরে কয়েকজন আটকে পড়েন। সেখান থেকে অন্যান্য পদাধিকারীদের খবর দেওয়া হয়। অভিযোগ, তাঁরা এসে বিক্ষুব্ধদের মারধর করে সরিয়ে দিয়ে দরজার তালা ভেঙে দেয়।
বিজেপির জেলা যুব মোর্চার সভাপতি পিন্টু সাম এদিন বলেন,শ্যামল তৃণমূলের হাতে তামাক খেয়ে লোকজন পাঠিয়ে পার্টি অফিসে তালা মারা করিয়েছে। এই শ্যামল দলে থেকে ক্ষতি করছিল, সেটা বুঝতে পেরেই দল ওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।দলে থাকতে গেলে দলের নিয়মনীতি মেনেই চলতে হবে। দলই ঠিক করে কে কোন পদে থাকবে। তাই দলবিরোধী কোন কাজ আমরা বরদাস্ত করব না । যদিও দলের বিক্ষুব্ধ রাজু পাত্রের অভিযোগ, অযোগ্য জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা একদম নিষ্ক্রিয়। ফলে দলীয় যে কাজ তা ব্যহত হচ্ছে। আন্দোলন গতি পাচ্ছে না ।
বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীদের কথায়, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের বিজেপির জেলা পার্টি অফিসে ভাংচুর হয়। তৎকালীন জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীকে সরিয়ে বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় অভিজিৎ তাকে। কিন্তু জেলায় বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর জেলা সভাপতি কার্যত হাওয়া হয়ে যান বলে একাংশ কর্মীদের অভিযোগ। যা নিয়ে ক্ষোভ ছিল দলের অন্দর মহলেই। সেই ক্ষোভ দিনে দিনে বিরাট আকার নিচ্ছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই গোষ্ঠী কোন্দল মিটিয়ে কিভাবে সংগঠন মজবুত করে বিজেপি, সেটাই এখন দেখার।
এই নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব । তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন,ওরা নিজেরাই নিজেদের অফিস ভাঙে। নিজেরাই তালা দেয়। ওরা আবার আমাদের সঙ্গে লড়াই করবে।তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার গল্প সয়িয়ে রেখে ওরা আগে নিজেদের ঘর সামলাক। যদিও জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দোপাধ্যায় দাবি করেন, এদিনের ঘটনার পিছনে শাসকদলের হাত আছে।তাদেরই কৌশলে পড়ছে আমাদের কয়েকজন কর্মী।।