প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩০ মার্চ : কাঁটা তারের বেড়া থেকেও যেন নেই। তাই বোধহয় ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় অবাধে নাম তুলিয়ে ফেলেছে বাংলা দেশের ভোটাররা।এমনই দুই বাংলাদেশী ভূতুড়ে ভোটারের হদিশ উদ্ধার হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে।দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে ভোটার তালিকা ধরে খোঁজখবর চালিয়ে পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় ওই দুই ভূতুড়ে ভোটারের হদিশ উদ্ধার করেছেন।এই নিয়ে তিনজন বাংলাদেশী ভুতুড়ে ভোটারের হাদিশ উদ্ধার করলেন তপন বাবু।এই জানাজানি হতেই বঙ্গের রাজনৈতিক মহলে বেশ শোরগোল পড়ে গিয়েছে।যদিও এমনটা হওয়ার জন্য রাজ্য প্রশাসন ও রাজ্যের শাসক দলকেই দায়ী করেছে বিজেপি নেতৃত্ব।
ভোটার তালিকা ধরে খোঁজখবর চালিয়ে বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় যে দু’জন বাংলাদেশী ভোটারকে চিহ্নিত করেছেন তাদের নাম রিঙ্কু শীল ও অর্জুন রায় ।তপন বাবু জানিয়েছেন,“পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভার পারুলিয়ার সাহাপাড়ার ভোটার তালিকায় ৪৩৩ নম্বর সিরিয়ালে নাম রয়েছে বছর ৪৮ বয়সী অর্জুন রায়ের।এই অর্জুন রায়ের নাম আবার বাংলাদেশের ভোটার তালিকাতে অর্জুন কান্তি নামে উল্লেখিত রয়েছে।তবে অর্জুন পদবি বদল করলেও তাঁর বাবার নাম ও পদবী দুই দেশের ভোটার তালিকার কোনটিতেও বদল করেনি । দুই দেশের ভোটার তালিকাতেই অর্জুনের বাবার নাম চিত্তরঞ্জন রায় বলেই উল্লেখ রয়েছে।এই অর্জুন এখন বাংলাদেশে বসবাস করলেও বাংলায় তার নামে রেশন কার্ডও করিয়ে নিয়েছে।প্রতিমাসে তার নামে রেশনের খাদ্য সামগ্রীও উঠছে।
বাংলাদেশী অপর যে ভোটার কে তপনবাবু চিহ্নিত করেছেন তার নাম রিঙ্কু শীল । তপন বাবুর দাবি’ ’পূর্বস্থলী উত্তরের পারুলিয়ার সাহাপাড়ার ভোটার তালিকার ১৩৯ নম্বর সিরিয়ালে বছর ২৬ বয়সী রিঙ্কু শীলের নাম রয়েছে।বাংলা দেশের ভোটার তালিকায় এই রিঙ্কু শীলের নাম রিঙ্কু শর্মা বলে উল্লেখিত রয়েছে।এমন কি বাংলাদেশের জন্ম শংসাপত্র ও পাসপোর্ট এই রিঙ্কুর পদবী শর্মা হলেও পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় তার পদবী পাল্টে করা হয়েছে রিঙ্কু শীল।পূর্বস্থলীতে বসবাস করা রিঙ্কুর মা ও দিদি এদিন স্বীকার করে নিয়েছেন রিঙ্কুর জন্ম বাংলাদেশে।তঁরা এও স্বীকার করছেন, “পাসপোর্ট তৈরী করে রিঙ্কু ভারতে আসার পর তাঁর পদবী পরিবর্তন করে ফেলে।তবে এখনও বাংলাদেশে থেকেও রিঙ্কু কিভাবে ভারতের ভোটার তালিকায় নাম তুলে ফেললো তার সদুত্তর রিঙ্কুর মা ও দিদি দিতে পারেন নি“।একই ভাবে আর্জুনের নাম বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় থাকার কথা তাঁর স্ত্রী মেনকা রায় স্বীকার করে নিয়েছেন। মেনকার সাফাই ,“তাঁর স্বামী অর্জুন কর্মসূত্রে বাংলাদেশে থাকেন । তাই বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় তাঁর স্বামীর নাম রয়েছে। আর তিনি সহ তাঁর স্বামীর পরিবারের সবাই যেহেতু এখন পূর্বস্থলীতে বসবাস করছেন তাই তাঁর স্বামী অর্জুনের নামও ভারতের ভোটার তালিকাতে স্থান করানো হয়েছে ।
পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় বাংলাদেশী ভোটারের নাম থাকার বিষয়টি বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় এই প্রথম প্রকাশ্যে আনলেন এমনটা নয় ।কয়েক দিন আগে বাংলাদেশী স্কুল শিক্ষক ভৃগুরাম দাসের নাম পূর্বস্থলীর কালেখাঁতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নন্দীগ্রামের ভোটার তালিকায় থাকার বিষয়টি তিনি প্রকাশ্যে আনেন। ভৃগুরামের নাম বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় থাকার কথা তপন বাবুর কাছে স্বীকারও করে নেন নন্দীগ্রামে বসবাস করা ভৃগুরামের পরিবার। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এদিন ফের দুই বাংলাদেশী ভোটারের নাম পশ্চিমবঙ্গের পূর্বস্থলীর ভোটার তালিকায় থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বলে তপন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন।
বাংলাদেশী ভোটারদের নাম ভারতের ভোটার তালিকায় স্থান পাওয়াটা মোটেই সহজসাধ্য ব্যাপার নয়।তাহলে বাংলাদেশী রিঙ্কু,অর্জুন ও ভৃগুরামরা ভারতের ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারলো?এই প্রশ্নের উত্তরে বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় জানান,“এরা পাসপোর্ট করে সপরিবার বাংলাদেশ থেকে ভারতের পূর্বস্থলীতে ঢোকে।তারপর অবৈধ উপায়ে অনলাইনের মাধ্যমে ভারতের ভোটার তালিকায় নাম তুলেছে।কিছু বিএলও এখানে আছে যাঁরা হাজার-হাজার টাকার বিনিময়ে এঁদের ভারতের ভোটার তালিকায় নাম তুলতে সাহায্য করেছে।এর সঙ্গে একটা প্রতারণা চক্রও যুক্ত রয়েছে“।তপনবাবু জানান,“তিনি রিঙ্কু,অর্জুন ও ভৃগুরামের মত ভূতুড়ে ভোটারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও নাম কাটার জন্য বিডিও এবং মহকুমা শাসককে জানিয়েছেন।
ভূতুড়ে ভোটার ধরা নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়কে অবশ্য বাহবা দিতে চায়নি বিজেপি নেতৃত্ব।জেলা বিজেপির (কাটোয়া সাংগঠনিক) সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন,“ ভূতুড়ে ভোটাররা তৃণমূলের সম্পদ । এখন এই ভূতুড়ে ভোটারদের নিয়ে ভোল বদলেছে তৃণমূল। বাংলায় তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। ভোটার লিস্টে নাম তোলা ও সংশোধন করার কাজ তো তৃণমূল সরকারের আধিকারিকরাই করছে।বাংলাদেশী ভোটারের নাম পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় উঠে থাকলে তার দায়ও এই সরকারের।।

