এইদিন ওয়েবডেস্ক,ওয়াশিংটন,১৪ নভেম্বর : প্রথম মার্কিন হিন্দু সাংসদ তুলসি গ্যাবার্ডকে (Tulsi Gabbard) ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের (ডিএনআই) পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প । মার্কিন সরকারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ ডিএনআই । পদটি সরাসরি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত । তুলসিকে এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করায় ভারত খুশি হলেও বাংলাদেশের মুসলিমরা স্পষ্টতই আতঙ্কিত । কারন তুলসি গ্যাবার্ড একজন কট্টর হিন্দু এবং আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) এর একজন শিষ্যা । যেটা বাংলাদেশের জিহাদিদের চিন্তার কারন । বাংলাদেশি জিহাদিরা ইসকনকে নিজের দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে । এমনকি ইসকনকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ তকমা পর্যন্ত দিয়েছে । তবে বাংলাদেশের জিহাদিরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হলেই ‘ইসকন’ একটা আদ্যপ্রান্ত আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সংগঠন । ‘মেরেছ কলসির কানা তাই বলে কি প্রেম দেব না’…এই আদর্শে বিশ্বাসী ইসকনের কাজ শুধু জগতে প্রেম ও শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেওয়া ।
এমতাবস্থায় তুলসি গ্যাবার্ডের নতুন একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । সেই ভিডিওতে তুলসিকে গিটার বাজিয়ে ‘হরেকৃষ্ণ হরেরাম’ মহামন্ত্র গাইতে শোনা গেছে । তার সঙ্গে গলা মেলাতে দেখা গেছে ইসকনের শিষ্যশিষ্যাদের । গান গাওয়ার আগে ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা যোগী অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে তুলসী বলেন,’ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ কি জয়’ ।
ভিডিওটি এক্স-এ শেয়ার করেছেন বাংলাদেশি ইংরাজি পত্রিকা ব্লিটজের সম্পাদক সালহা উদ্দিন সোয়েব চৌধুরী । ভিডিও শেয়ারের পাশাপাশি প্রথমেই তিনি জিজ্ঞসসা করেছেন,’কৃষ্ণ ও রাম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ?’
এরপর তিনি লেখেন,’সম্মানিত কংগ্রেসওম্যান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুলসি গ্যাবার্ড, যখন আমি আপনাকে সত্যিকারের ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্ত্রিসভায় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি, আমি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের সাথে জানাতে চাই, ভগবান রাম এবং ভগবান কৃষ্ণের অনুসারীদেরকে “সন্ত্রাসবাদী” হিসাবে দেখা হচ্ছে “আজকের বাংলাদেশে, যা ট্রাম্প-বিদ্বেষী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি বিপ্লবী ইসলামপন্থী শাসন দ্বারা শাসিত। প্রেসিডেন্ট (নির্বাচিত) ট্রাম্প কঠোর ব্যবস্থা না নিলে হিন্দুরা চলমান গণহত্যার শিকার হতেই থাকবে। আপনি কি দয়া করে এই বিষয়টি ট্রাম্পের কাছে তুলে ধরবেন এবং বাংলাদেশে হিন্দুদের বাঁচাতে পারবেন?’
তুলসি গ্যাবার্ডের জন্ম ১৯৮১ সালের ১২ এপ্রিল । ৪৩ বছর বয়সী, গ্যাবার্ড আমেরিকান সামোয়াতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ফিলিপাইনে একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের সাথে হাওয়াইতে বেড়ে ওঠেন। হাওয়াইয়ের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে ২১-এ তার রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু হয়, ইরাকে তার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন বাধাগ্রস্ত হয় । হাউসের প্রথম হিন্দু সদস্য হিসাবে, তিনি “ভগবদগীতা” হাতে নিয়ে শপথ নেন। তিনি কংগ্রেসে প্রথম আমেরিকান সামোয়ান হওয়ার গৌরবও অর্জন করেন।
তুলসীর স্বামী সিনেমাটোগ্রাফার আব্রাহাম উইলিয়ামস এবং তার বাবা মাইক গ্যাবার্ড, একজন রাষ্ট্রীয় সিনেটর যিনি রিপাবলিকান থেকে ডেমোক্র্যাটে রূপান্তরিত হয়েছেন । তুলসী গ্যাবার্ডের সামরিক কর্মজীবন ইরাক এবং কুয়েতে মোতায়েন সহ আর্মি ন্যাশনাল গার্ডে বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত। হাওয়াই ন্যাশনাল গার্ড দ্বারা নিশ্চিত করা অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম ৩ চলাকালীন পরিষেবার জন্য ২০০৫ সালে তিনি একটি কমব্যাট মেডিকেল ব্যাজ সহ স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।২০১৩ থেকে ২০২১ পর্যন্ত, গাবার্ড ডেমোক্র্যাট হিসাবে হাওয়াইয়ের দ্বিতীয় কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। কংগ্রেসে থাকাকালীন, তিনি হাউস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটিতে দুই বছর দায়িত্ব পালন করে জাতীয় নিরাপত্তা এবং নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি তার অঙ্গীকারের জন্য স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন। গোয়েন্দা বিষয়ে তার আপেক্ষিক অনভিজ্ঞতা সত্ত্বেও, সামরিক বিষয়ে তার প্রেক্ষাপট এবং প্রতিরক্ষা ও স্বদেশের নিরাপত্তা নীতি নির্ধারণে তার সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডিএনআই ভূমিকায় তার নিয়োগের মূল দিক।।