এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,১৫ ডিসেম্বর : গৃহবধূ ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা । ইদানিং তাঁর বারবার অজ্ঞান হওয়ার উপসর্গ দেখা যাচ্ছিল । তাই স্থানীয় ওঝার দ্বারস্থ হয়েছিল পরিবার । বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় ওঝার কেরামতি । নিম পাতা আর মন্ত্রপূত জলের ঝাপটা দিয়ে ঝাড়ফুঁক শুরু করেন ওঝা । যদিও তাঁর ঝাড়ফুঁক সম্পন্ন হওয়ার আগেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয় পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক । তাঁরা বধুকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন । পাশাপাশি পুলিশ আটক করেছে ওই ওঝাকে । ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার ভুতনি থানার বাললিটোলা গ্রামে । শ্যামলী মন্ডল নামে ওই অন্তঃসত্ত্বা বধু বর্তমানে মালদা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রক্তাল্পতার কারনেই ওই বধূ বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,বাললিটোলা গ্রামের বাসিন্দা শ্যামলীদেবীর স্বামী শ্যামল মন্ডল জনমজুরির কাজ করেন । শ্যামলীদেবীর সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা । বুধবার সকালে গিয়ে দেখা গেল অচেতন অবস্থায় বাড়ির উঠনে পড়ে রয়েছেন ওই বধূ । তাঁর মাথাটা রয়েছে দুই মহিলার কোলের উপর । তাঁদের ঠিক সামনেই বসে রয়েছেন জামা-প্যান্ট পরিহিত জনৈক এক ব্যক্তি । ওই ব্যক্তির ডান পাশে রাখা নিম গাছের ছোট একটি ডাল । বাম হাতে ধরা পিতলের ছোট কলস । তিনি কলস থেকে অল্প অল্প করে জল নিজের ডান হাতে ঢেলে সেই জল বধূর মুখে ছুড়ছেন আর মন্ত্রচ্চারন করছেন । তার সঙ্গে মাঝে মাঝে নিম ডালের পাতা দিয়ে ঝেড়ে দিচ্ছেন বধুর শরীর ৷ তাঁদের চারিদিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে বধূকে ঝাড়ফুঁকের এই দৃশ্য দেখছেন প্রতিবেশীরা । যদিও বেশ কিছুক্ষন এই কেরামতি চলার পরেও বধুর সম্বিৎ ফিরতে দেখা যায়নি । ইতিমধ্যে জনৈক এক প্রতিবেশী ভুতনি থানায় ফোন করে ঘটনার কথা আদ্যপান্ত জানিয়ে দেয় । খবর পেতেই ঘটনাস্থলে আসে পুলিশবাহিনী ।
জানা গেছে,পুলিশ ওই বধূকে উদ্ধার করে প্রথমে ভুতনি দিয়ারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করে। পরে তাঁকে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় । পাশাপাশি ওই ওঝাকে আটক করেছে পুলিশ । পুলিশ জানিয়েছে,আটক ব্যক্তির নাম সঞ্চয় ভগত ।
কিন্তু স্থাস্থ্যকেন্দ্রে না নিয়ে গিয়ে কেন ওঝার দ্বারস্থ হলেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে শ্যামলীদেবীর বাবা নিখিল মন্ডল বলেন, ‘মেয়েকে একাধিকবার চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করিয়েছি । কিন্তু তাতে কোনও লাভ হচ্ছিল না । তাই ওঝাকে ডেকেছিলাম ৷’ ঝাড়ফুঁক করা হলে মেয়ের শরী সুস্থ থাকছে বলে তিনি দাবি করেন ।
ভুতনি দিয়ারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ডঃ রাজেশ কুমার সাহা বলেন, ‘ঘটনার কথা শোনার পরেই বুঝেছিলাম ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা রক্তাল্পতায় ভুগছেন । তাই উনি বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন । হাসপাতালে আনার পর পরীক্ষা করতেই তা ধরা পড়ে । ভুতনিতে রেখেও চিকিৎসা করা যেত ৷ কিন্তু আরও উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য রোগিনীকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে ৷’ পাশাপাশি তিনি আফসোস করে বলেন,’আমরা এত পরিষেবা দেওয়ার পরেও মানুষ কুসংস্কারে জড়িয়ে পড়ছেন,এটাই দুঃখের বিষয় । কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরাও একে সমর্থন করছেন । এভাবে ঝাড়ফুঁক করতে গিয়ে হঠাৎ করে যদি কোনও অঘটন ঘটে যায় তাহলে সেটা আমাদের ব্যার্থতা । সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত করতে মানুষের এগিয়ে আসা উচিত । আমরা তাঁদের পাশে থেকে সহযোগিতা করবো ।’ এনিয়ে এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হবে বলে জানিয়েছেন ডঃ রাজেশ কুমার সাহা ।।