প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০১ জানুয়ারি : তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনেও গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে বিরাম টানলেন না তৃণমূলের নেতারা । রবিবার দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের তৃণমুল বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিকে উদ্দেশ্যে চাঁচাছোলা ভাষায় অক্রমণ শানালেন বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতারা। তাঁরা নিজেদের দলের বিধায়কেই অপদার্থ বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিকে “অত্যাচারী”,”হারমাদ” ও “কামানেওয়ালা” নেতা বলে কটাক্ষ করলেন । যা নিয়ে জামালপুরের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে।পঞ্চায়েত ভোটের আগে জামালপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন নগ্ন চেহারা নেওয়ায় বেজায় উৎফুল্ল বিরোধী শিবির।
এদিন জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি
মেহেমুদ খাঁন তাঁর পার্টি অফিসের সামনে দলের প্রতিষ্ঠা দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেই অনুষ্ঠানে জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক অলক মাঝি সহ অন্য নেতারা উপস্থিত থাকেন। এরই পাল্টা এদিন জামালপুরের জৌগ্রামের আমড়া মোড় এলাকায় পাল্টা দলের প্রতিষ্ঠা দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিরুদ্ধ গোষ্ঠী ।সেই অনুষ্ঠানের জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন কার্যকরী সভাপতি ও দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি শ্রীমন্ত রায়, চকদিঘী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গৌরসুন্দর মণ্ডল সহ অন্য অনেক নেতা ও কর্মী উপস্থিত থাকেন। এখানকার প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই অলক মাঝিকে অপদার্থ বিধায়ক এবং ব্লক তূণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন কে অত্যাচারী হারমাদ বলে কটাক্ষ করেন শ্রীমন্ত রায় । আর গৌরসন্দর মণ্ডল তো কোন রাখঢাক না রেখে দলের ব্লক সভাপতি মেহেমুদ খাঁন কে কামানেওয়ালা নেতা বলে কটাক্ষ করে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে সরাসরি লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন।
শ্রীমন্ত রায় তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিধায়ক অলক মাঝির একটা বিধায়ক কার্যালয় পর্যন্ত জামালপুরে নেই । এটা লজ্জার ব্যাপার। এতবড় অপদার্থ বিধায়ক সারা পশ্চিমবাংলায় আর কেউ নেই । পাশাপাশি বিধায়ক অলক মাঝি ও ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেহেমুদ খাঁনকে উদ্দেশ্য করে শ্রীমন্ত রায় বলেন, বিধায়ক ও ব্লক সভাপতি হারমাদদের নিয়ে নোংরা খেলা শুরু করেছেন।তাদের এই খেলাথেকে সরে আসার কথা বলে শ্রীমন্ত রায় স্মরণ করিয়ে দেন,আগামী দেন এই খেলা আরও ভয়ংকর হবে। দলের ব্লক কমিটি নিয়েও তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি । এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ব্লকের স্কুল গুলির কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটিতে তাঁদের কেই সভাপতি করা হয়েছে, যাঁরা ঠিকাদারি কারার পাশাপাশি ওই স্কুল গুলিতে কাজ করেন তাঁদের কে।জামালপুরের রাস্তাঘাটের কোন উন্নয়ন হয় নি। উন্নয়নের নামে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে শ্রীমন্ত রায় অবিযোগ করেন। তিনি বলেন, দল ক্ষমতায় আসার পর থেকে যাঁরা স্কুল গুলির উন্নতির জন্য কাজ করছিল ,পঞ্চায়েত গুলিকে রক্ষা করার কাজ করছিলেন ,তাঁদের কেই আজ বাদ দেওয়ার প্রবণতা চলছে। তাঁদের জীবন ও সম্পত্তির উপর অত্যার চালানো হচ্ছে। আর ঠিকাদারদেকেই এখন স্কুলের সভাপতি ,অঞ্চলের সভাপতি করা হচ্ছে। মেহেমুদ খাঁন কে হুঁশিয়ারি দিয়ে শ্রীমন্ত রায় এও বলন,’আপনার হারমাদ গিরি এবং আপনার কিছু পোষ্য কুকুর যাঁরা সব সময় ঘেউ করছে, তাদের পিছনে পেট্রোল দিয়ে কি ভাবে তাড়া করতে হয় সেটা আমরা জানি। আপনারা সাবধানে থাকুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ ও নীতি থেকে সরেগিয়ে আপনারা অত্যাচার বাড়াচ্ছেন। লুটের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও শ্রীমন্ত রায় অভিযোগ করেছেন ।’
শ্রীমন্ত রায়ের মন্তব্য প্রসঙ্গে বিধায়ক অলক মাঝি বলেন, “দলের উচ্চ নেতৃত্বকে সব জানিয়েছি । ওনারা এই বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে। একই সঙ্গে অলক মাঝি বলেন,২০২১ শের বিধানসভা ভোটে যিনি নিজের বুথে দলকে জেতাতে পারেন না তিনি এখন বড়বড় কথা বলছেন। দল এবং জামালপুরের মানুষ আমাকে যোগ্য মনে করেছে বলেই বিধায়ক মনোনিত করেছে। জেলা তৃণমূলের যুব সভাপতিও করেছিল।যিনি জামালপুরবাসীর
কাছে গ্রহনযোগ্যতা হারিয়ে বসে আছেন তার কথার কোন গুরুত্ব নেই বলে অলক মাঝি মন্তব্য করেছেন“। জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন,“এমনসব মন্তব্য ঠিক নয় ।বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজ নেব“। যদিও ব্লক তৃণমূলের সভাপতি এদিন সন্ধ্যাতেও বলেন,’কে কি বলেছে জানি না । ভিডিও ফুটেজ পেলে দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানাবো। দল প্রয়োজনীয় যা সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নেবে“। বিজেপির যুবমোর্চার জামালপুরের কনভেনার অজয় ডকাল বলেন, সবেত শুর হল । পঞ্চয়েত ভোটে গোটা রাজ্যবাসীকে হয়তো তৃণমূলীদের রক্তক্ষয়ী লড়াই দেখতে হতে পারে । মনেহয় জামালপুরেও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না ।’।