এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩১ আগস্ট : সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকা প্রকাশ করতে বাধ্য হল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। আর ঘোষিত সেই ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকা যেন তৃণমূলের ‘চাঁদের হাট’ । মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ,নেতা,নেতার বউ ও মেয়ে, কাউন্সিলার… কে নেই ! স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। শনিবার কমিশনের ওয়েবসাইটে ১৮০৪ জন ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে । “দাগি” প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ থেকে শুরু করে কাউন্সিলর,খোদ তৃণমূলের নেতা ও নেতার মেয়ে-বউয়ের নাম রয়েছে তালিকায় ! তবে এই তালিকা ঘিরে রয়েছে অনেক প্রশ্ন ও ধোঁয়াশা । কারন ৩৩ পাতা জুড়ে দাগি শিক্ষকদের শুধু নাম আর রোল নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। আর কোনও তথ্য নেই। এই শিক্ষকরা কোন এলাকায় কোন স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন জানা যায়নি, নবম দশম না একাদশ দ্বাদশ কোন শ্রেণির শিক্ষক সেই তথ্যও নেই। পাশাপাশি অযোগ্য শিক্ষাকর্মীদের তালিকা প্রকাশ এখনও হয়নি।
যাই হোক,তালিকায় রোল নম্বর ধরে যে নাম দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকে তৃণমূলের পরিচিত মুখ । তৃণমূল কাউন্সিলর কুহেলি ঘোষ, প্রিয়াঙ্কা মণ্ডলের নাম উঠে এসেছে । সোনারপুরের চৌহাটি হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষিকা ছিলেন কুহেলি ঘোষ । তিনি আবার রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার তিনবারের তৃণমূল কাউন্সিলর৷ এছাড়া পিংলার জলচক পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি অজয় মাঝির নামও রয়েছে এই তালিকায়। নাম রয়েছে পিংলার বিধায়কের এক আত্মীয়েরও। রয়েছেন হুগলির খানাকুলের দাপুটে তৃণমূল নেতা ও জেলা পরিষদের সদস্য বিভাস মালিক৷ বিভাসের স্ত্রী সন্তোষি মালিকও ছিলেন ‘দাগি’ শিক্ষিকা। রয়েছেন খানাকুলের তৃণমূল নেতা নইমুল হকের স্ত্রী নমিতা আদক । হুগলির জেলা পরিষদের সদস্যা সাহিনা সুলতানার নাম ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকায় জলজল করছে । উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল নেত্রী কবিতা বর্মণের নাম রয়েছে তালিকায় । পিংলা থানার অন্তর্গত জলচক অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি অজয় মাঝিও ‘দাগি’ শিক্ষক । রয়েছে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার মাস্টারমাইন্ড জেলে যাওয়া প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের নাম । এনারা প্রত্যেকেই চিহ্নিত অযোগ্য। চাকরি পেয়েছেন ঘুরপথে।
ফলে, এই তালিকা নিয়ে যে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হতে চলেছে সেটা দিনের আলোর মত স্পষ্ট । সেই সাথে যে ফের মামলা হতে চলেছে তারও ইঙ্গিত মিলছে । এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের ‘সন্দেহজনক’ ভূমিকা অনেক প্রশ্ন খাড়া করে দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত,বেলাগাম দুর্নীতির অভিযোগে এসএসসি-র ২০১৬ সালের নিয়োগের গোটা প্যানেলটাই বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। গত ৩ এপ্রিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ এই রায় দেন। তাতে চাকরি যায় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে প্রায় ২৫,৭৩৫ জনের। আদালত জানিয়েছিল, সঠিক তথ্য না থাকায় যোগ্য এবং অযোগ্যদের পৃথক করা সম্ভব হয়নি। তাই পুরো প্যানেল বাতিল করতে হয়েছে। নতুন করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে বলা হয় কমিশনকে। ‘দাগি’ হিসাবে যাঁদের চিহ্নিত করা গিয়েছে, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশও দেয় আদালত। যদিও রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায়। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আগামী ৭ ও ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। সুপ্রিম কোর্ট এসএসসি-কে জানিয়েছে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নজর রাখা হচ্ছে। কোনও ভুল-ত্রুটি হলেই হস্তক্ষেপ করা হবে। অযোগ্যরা পরীক্ষায় বসলে ফল ভুগতে হবে। কিন্তু শোনা যাচ্ছে যে নতুন শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসার জন্য ‘দাগি অযোগ্য’রা আবেদন করছেন ।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই ২ সেপ্টেম্বরে রাত্রি ১২ টার মধ্যে অযোগ্য দাগি চাকরিপ্রাপকদের নামের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার আগেই শনিবার বিকেলে ১৮০৪ জন ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকা প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। যদিও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন দাগী অযোগ্যদের সংখ্যা ৬০০০-এর অধিক । এছাড়া ঘোষিত অযোগ্য প্রার্থীর তালিকার মধ্যে ভেজাল মেশানো হয়েছে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ।।

