প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ জুন : ঠাকুর তলায় হারমোনিয়াম ও খোল করতাল বাজিয়ে হয়িনাম সংকীর্তন হতে সবাই দেখেছেন।কিন্তু হরমোনিয়াম ও খোল করতাল সহযোগে হরিনাম গেয়ে কোন রাজনৈতিক দল মিছিল করছে এমনটা বোধহয় সবার কল্পনারও অতীত।কিন্তু না,কোন গল্পকথা নয়।বাস্তবেই রবিবার বিকালে হরিনাম সংকীর্তনের মধ্য দিয়েই পূর্ব বর্ধমানের রায়না ২ ব্লকের উচালন অঞ্চলে হল কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল। যা দেখে কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যান এলাকার বাসিন্দারা । অভিনব এই মিছিলের একেবারে সামনে থাকা হরিনাম সংকীর্তন দলের দুই কাণ্ডারীর কারুর কাছেই ছিল না হারমোনিয়াম বা খোল করতাল। হারমোনিয়ামের পরিবর্তে তাঁদের একজন হারোনিয়ানের মতো করে গলার ঝুলিয়ে নিয়েছিলেন রান্নার গ্যাসের ওভেন । আর অপরজন খোল করতালের পরিবর্তে ফাঁকা গ্যাস সিলিন্ডার কে খোল করতালের মতো করে ঝুলিয়ে নিয়েছিলেন গলায় । এই ভাবেই নাচের তালে তালে ওনারা হরিনামের গান গেয়ে চললেন ।আর তাঁদের পিছন পিছন হরিনামের গানের তালেই প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলালেন তৃণমূলের নেতা ও কর্মী সমর্থকরা ।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষনা
মতো ১০০ দিনের কাজের টাকার দাবী সহ ওষুধ,রান্নার গ্যাস ও পেট্রোল ডিজেলের অস্বাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রবিবার রাজ্যের সর্বত্র পথে নামে তৃণমূল কর্মীরা ।একই ভাবে রায়না ২ ব্লকের উচালন অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি আনিসুর রহমান খাঁন এদিন প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেন । যে অভিনব প্রতিবাদ মিছিল দেখার জন্য উচালনের বহু বাসিন্দা জড়ো হয়ে ছিলেন পথের দু’ধারে । মিছিলের কায়দা কানুন দেখে বাসিন্দাদের কেউ কেউ হরিনামে মেতে উঠলেন ।আবার কেউ কীর্তনীয়াদের মতো করে নেচেও উঠলেন । সবার মুখে মুখে শুধু ঘুরে বেড়ালো একটাই কথা ,“এই মিছিল চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ভাবনাকেও যেন হার মানিয়ে দিল।’
এমন প্রতিবাদ মিছিল আয়োজনের উদ্দেশ্য
প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আনিসুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন ,বিজেপি দলটার চেয়ে এখন হরিনাম সংকীর্তন দলকে বাংলার মানুষ বেশী বিশ্বাস করে । ভক্তিও করে ।এর কারণটা হল নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার । নানা ভাবে তারা বাংলা সহ গোটা দেশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। বাংলার মানুষকে বিকাপে ফেলার জন্যে কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না । এছাড়াও রান্নার গ্যাসের দাম এখন হাজার পার করে দিয়েছে । পেট্রোল,ডিজেল ও জীবনদায়ী ওষুধের দামও অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে । গ্রামের মানুজন যাঁরা এতদিন গ্যাসের ওভেনে রান্না করতেন তাঁরা আর গ্যাস কেনার টাকা যোগাড় করতে পারছেন না। বাড়ির খাবার রান্নার জন্য পূর্বের মতো কাঠের জ্বালানিতে ফিরে যেতেই তারা বাধ্য হয়েছেন।গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারে গ্যাস সিলিন্ডার ও ওভেন এখন শুধু পুরানো হারমোনিয়াম ও খোল করতালের মতোই শোভা বর্ধন করে। এই সবেরই প্রতিবাদ স্বরুপ কীর্তন গানের দলের লোকজনেকে সঙ্গে নিয়ে এদিন এমন প্রতিবাদ মিছিল সংঘটিত করেছেনে বলে আনিসুর রহমান জানিয়েছেন।
জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ,’মিথ্যা প্রচারে তৃণমূলের জুড়ি নেই । কেন্দ্রের প্রকল্প গুলির নাম বদলে দিয়ে বাংলার প্রকল্প বলে এই রাজ্যের সরকার চালায় । তার পরেও প্রকল্প কাজের অর্থ খরচের হিসাব তারা যথা সময়ে যথাযথ ভাবে দেয় না । সৌম্যরাজ বাবু দাবী করেন,এইসব চালাকি করে বাংলার মানুষকে বেশিদিন তৃণমূল বোকা বানিয়ে রাখতে পারবে না ।বাংলার মানুষ ঠিক সময়ে তৃণমূলকে যোগ্য জবাব দিয়ে দেবে ।’।