শ্যামসুন্দর ঘোষ,কলকাতা,০৮ মার্চ : বালুরঘাট এক্সপ্রেস ট্রেনে অশালীনভাবে ভিডিও করা নিয়ে বৃদ্ধ সহযাত্রীকে তরুনীর থাপ্পড় মারার ঘটনা এখন রাজনৈতিক রঙ নিয়েছে । একদিকে যখন মুসলিম বৃদ্ধের পাশে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এসে দাঁড়িয়েছে,অন্যদিকে ওই হিন্দু তরুনীকে খোলাখুলি সমর্থন করছে বিজেপি । শুক্রবার ফারাক্কার তোফাপুর গ্রামের বাসিন্দা মাফিকুল ইসলাম নামে ওই বৃদ্ধকে সঙ্গে নিয়ে ফরাক্কা জিআরপিতে অভিযোগ জানাতে যান ফারাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম, মহম্মদ জিম নওয়াজ, তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ সেখ, মালদা জেলা জমিয়তে উলামার সভাপতি হাফেজ নজরুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা । উল্লেখ্য,তার মধ্যে এই মহম্মদ জিম নওয়াজই তরুনীর নাম ও ঠিকানা প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন । ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ তৃণমূল বিধায়ক ওই তরুনীকে অপরাধী সাজিয়ে বিষয়টি সাম্প্রদায়িক ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন ।
অন্যদিকে হিন্দু তরুনীর পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপি । একটা বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও পোস্ট করেছেন বিজেপি নেতা তরুনজ্যোতি তিওয়ারি । যে ভিডিওতে ট্রেনের সেই তরুনীর বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে শোনা গেছে । তরুনজ্যোতি লিখেছেন,’নবদ্বীপ থেকে মালদাগামী ট্রেনে ঘটে যাওয়া লজ্জাজনক ঘটনায় অত্যাচারিত হলো এক হিন্দু কন্যা। লুকিয়ে ভিডিও করা হলো তার , অথচ সমাজের একাংশ ( মমতার দুধ দেওয়া গরু এবং ভাতাজীবি কিছু মানুষ) সেই অপরাধীদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। ধর্মীয় সংহতির মুখোশের আড়ালে কিছু গোষ্ঠী নির্লজ্জভাবে অন্যায়ের সমর্থন জানাচ্ছে, আরএসএস-এর বিরুদ্ধে স্লোগান তুলে অপরাধ ঢাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ভাবুন, আজ যদি সেই মেয়ে হয় শিকার, আগামীকাল হয়তো আপনার বাড়ির মা-বোন-মেয়ের সাথেই ঘটবে এমন ঘটনা। ভোটের আগে হাজার টাকা ভাতা আর প্রকল্পের মোহে ভুলে থাকবেন, নাকি নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য রুখে দাঁড়াবেন? অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন, নতুবা ইতিহাসের পাতায় নিঃশব্দে হারিয়ে যেতে হবে।’
কলকাতা পৌরসভার কাউন্সিলর বিজেপি নেতা সজল ঘোষ শুক্রবার একটি ভিডিও বার্তায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন,’ওই তরুণীর উপর কোন রকম যদি হামলা হয় বা পুলিশ যদি কোন পদক্ষেপ নেয় তাহলে প্রতিবাদের মশাল দাউ দাউ করে জ্বলবে ।’ তিনি ট্রেনের ওই প্রতিবাদী তরুণীতে ‘স্যালুট’ জানিয়েছেন ।
তিনি বলেন,’ওই বাপের বয়সী দাড়িওয়ালা বুড়োকে, যিনি আধ ঘন্টার বেশি ভিডিও করছিলেন, সেই ঘটনার ঘটার সময় অন্য যাত্রীদের ভিডিও থেকে যেটা শুনতে পেয়েছি,আধ ঘন্টা ধরে ভিডিও হচ্ছিল । তাই এই ধরনের পারভ্যাটেড মানুষ,বিকৃত কাম মানুষদের সঙ্গে যা করার ওই ভদ্রমহিলা তাই করেছেন ।’ তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম আজ বিশ্ব নারী দিবসের দিন ওই মহিলাকে নারী শক্তির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হবে কিন্তু বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঘুরতে শুরু করলো । কোথাও রাজনৈতিক বা কোথাও সাম্প্রদায়িক কোন দেওয়া হল । যখন দেখতে পেলাম ফারাক্কার কুখ্যাত বিধায়ক মনিরুল ইসলাম এবং তার সাথে কুখ্যাত জিম নওয়াজ মিলে মাফিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে থানায় অভিযোগ করতে গেলেন । আপনারা ভাবুন আপনারা কোন রাজ্যে বাস করছেন ? আজকে যদি আমি বলি এরা যে মেয়েরা নিরাপদ নয় তার জন্য দায়ী এই সাম্প্রদায়িক এবং জিহাদি তৃণমূল সরকার ।’
সজল ঘোষ একটা নতুন ভিডিও দেখান । যে ভিডিওতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে ফারাক্কার তোফাপুর গ্রামের মাফিকুল ইসলাম নামে ওই বৃদ্ধ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তরুণীর শরীরের ভিডিও রেকর্ডিং করছেন । সজল ঘোষের কথায়,‘ভুল করে ভিডিও রেকর্ডিং হওয়ার কোন চান্স নেই । ইচ্ছা করেই ভিডিও করেছে। এই ধরনের লোকেদের এই ধরনের চরিত্র সেটা আমরা জানি ।’ তিনি বলেন, মেয়েটি হিন্দু বলে, সাধারণ বাড়ির একটি মেয়ে বলে, তৃণমূলের এমএলএ ও তৃণমূলের নেতারা আজকে কতটা জিহাদী হয়ে গেছে যে এই মেয়েটার বিরুদ্ধে থানায় প্রতিবাদ করলো । মেয়েটিকে নারী দিবসের ম্যাসকট না করে তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করছে । এই রাজ্যে অপরাজিতা বিল সত্যিই দরকার। এই রাজ্যে মেয়েদের কোন নিরাপত্তা নেই । আপনি যদি আপনার নিরাপত্তার জন্য প্রতিবাদও করেন তাহলে তার ধর্ম বিচার করে এই রাজ্য সরকার তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে ।’
সবশেষে সজল ঘোষ বলেন,’অভয়ার ক্ষেত্রে সারা পশ্চিমবঙ্গ যেমন পথে নেমেছিল, আর যেন কোথাও অভয়ার সৃষ্টি না হয় । আজকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যার জন্য অপরাজিতা বিল আনতে চায় । যাতে আর অপরাজিতা বিলের প্রয়োজন না হয়, তাই আমি আবেদন করব এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হোক যে যদি এই মহিলার বিরুদ্ধে পুলিশ কোন রকম পদক্ষেপ নিতে চায় বা এই মহিলার উপর যদি কোন আক্রমণ হয় , এই মহিলা যদি কোন ভাবে কোথাও আক্রান্ত হয়, সারা বাংলায় প্রতিবাদের মোমবাতি মিছিল নয় প্রতিবাদের মশাল জ্বালতে হবে । এই অপরাধ এবং অপরাধীকে একদম সমূলে উৎপাটিত করতে হবে। আপনারা সংঘবদ্ধ হন ।’।