প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১১অক্টোবর : রেস্টুরেন্টে চালাতে গেলে প্রতিদিন মদের বোতল দেওয়ার পাশাপাশি দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা তোলা।সদ্য চালুকরা রেস্টুরেন্টের মালিক তৃণমূল আশ্রিত দুস্কৃতিদের এই ফতোয়া যথাযথ ভাবে মানতে না পারেন নি । তারজন্য তৃণমূল আশ্রিত দুস্কৃতিদের ব্যাপক মারধোর হজম করতে হল রেস্টুরেন্ট মালিকের ভাইপোকে।তিন দিন আগে খোদ বর্ধমান শহরের ছোট নীলপুর এলাকায় এমন ঘটনা ঘটলেও দুস্কৃতিদের কেউ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছে,’তোলা চাওয়া দুস্কৃতিরা শাসকদের আশ্রিত বলেই এখনও বুক ফুলিয়ে তারা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ।’যদিও তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব দাবি করেছেন,চদোষী যে দলেরই হোক তার শাস্তি হবেই ।’
দুর্গা পুজো শুরুর প্রাক্কালে বর্ধমান শহরের ছোট নীলপুর এঢ়াকায় নতুন রেস্টুরেন্ট চালু করেন সুজিত চৌধুরী।রেস্টুরেন্ট ভালো চললে সংসারে দুদিন ফিরবে এমনটা প্রত্যাশা ছিল সুজিতবাবুর । কিন্তু এলাকার তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দৌরাত্মের কারণে ব্যবসায়ীর সব প্রত্যাশাই থমকে যায়।অভিযোগ,’এলাকার তৃণমূল আশ্রিত একদল দুস্কৃতি রেস্টুরেন্ট চালানোর জন্য ওই রেস্টুরেন্ট মালিকের কাছে ৫০ হাজার টাকা তোলা চায় । এনকি
রেস্টুরেন্ট চালানোর জন্য প্রতিদিন মদের বোতল দিতে হবে বলেও জানায় ।’
দুস্কৃতিদের এমন হুমকিত ভীত হয়ে ব্যবসায়ী ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে দুস্কৃতিদের মন ভরেনি। দাবি মত পুরো ৫০ হাজার টাকা তোলা না মেলায় গত ৭ অক্টোবর শহর বর্ধমানে দুর্গাপুজোর কার্নিভাল চলার দিন ওই রেস্টুরেন্টে চড়াও হয় দুস্কৃতিরা । তারা রেস্টুরেন্ট মালিকের ভাইপোকে রাস্তায় ফেলে ব্যাপক মারধোর করে । দোকানে কর্মচারিরা জানান,ঘটনার দু’দিন আগে দুস্কৃতিরা রেস্টুরেন্টে এসে মাংস ও ডিম চায় । কিন্তু তাঁরা বিল দিতে অস্বীকার করেন। এরপরেই ওই দুস্কৃতিরা হুমকি দিয়ে চলে যায়। এর দু’দিন পর দুস্কৃতিরা রেস্টুরেন্টে এসে মালিকের ভাইপোকে রাস্তায় ফেলে ব্যাপক মারধর করে পালায় ।এই ঘটনার পর ভয়ে আতঙ্কে ব্যবসায়ী দু’দিন রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখেন ।ঘটনার বিষয়ে ব্যবসায়ী বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের পরেও অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোয় আতঙ্কিত রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ও তার পরিবার।
রেস্টুরেন্ট মালিক সুজিত চৌধুরী মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষ।অনেক কষ্ট করে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করছেন। আমরা শান্তিতে ব্যবসা করতে চাই । কিন্তু রেস্টুরেন্ট খোলার আগে থেকেই কয়েকজন হুমকি দিচ্ছিল,রেস্টুরেন্ট চালাতে গেলে তাঁদের ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। এছাড়া তাঁরা প্রতিদিন মদের বোতল দেবার দাবিও করে ।’ সুজিত বাবু বলেন, ‘সেই হুমকিতে ভয় পেয়ে আমার ছেলে ওদের ৩০ হাজার টাকা দেয় । তার পরেও ওই দুস্কৃতিরা আমার ভাইপোকে ব্যাপক মারধোর করে ।এই ঘটনা দেখে ‘শেফ’ ভয় পেয়ে গিয়ে কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে।’
দেখুন ভিডিও :-
এমন ঘটনা বিষয়ে বিজেপি জেলা যুব মোর্চার সভাপতি পিন্টু সাম বলেন,’শাসকদলের বিধায়ক ও কাউন্সিলরের মদতেই শহর বর্ধমানে দুস্কৃতীদের এত বড়বাড়ন্ত হয়েছে ।’ যদিও এলাকার কাউন্সিলর ও জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি রাসবিহারী হালদার পরিস্কার জানিয়ে দেন,’এমন জঘন্য কাজের জন্য দোষীদের শাস্তি পাওয়া উচিত। প্রশাসন প্রশাসনের মতো কাজ করবে।এমন অন্যায় কাজে যুক্তরা কেউ পার পাবে না ।’ একই ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপত্র দেবু টুডু বলেন,’এসব গর্হিত কাজ। আমাদের দল এসব কাজের তীব্র বিরোধী। পুলিশ আইন মেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে ।’
বর্ধমান দক্ষিনের বিধায়ক খোকন দাস এদিন বলেন,’এমন ঘটনা বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।তবে এমন ঘটনা ঘটলে প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ।’ ঘটনা বিষয়ে বর্ধমান থানার এক অফিসারের বক্তব্য,অভিযুক্তরা সকলেই পলাতক । পুলিশ তাদের সন্ধান চালাচ্ছে ।।