প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ নভেম্বর : বিরোধীরা নয়।নাগরিক পরিষেবা দানে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন খোদ তৃণমূলেরই কাউন্সিলাররা। আর তা নিয়েই ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহরের রাজনৈতিক মহলে। বিদ্রোহী কাউন্সিলারদের অভিযোগ,’কালনা পুরসভার পুরপ্রধান পুরসভা চালাতে পুরোপুরি ব্যর্থ।তার কারণে শিকেয় উঠেছে নাগরিক পরিষেবা’।এমন পুরপ্রধানের অপসারণ চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃণমূল কাউন্সিলররা জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে চিঠিও পাঠিয়েছে।চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা না হলে সব কাউন্সিলর অপসারণ করবেন এমন হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিদ্রোহীরা। এ নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ ,
তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের আসল স্বরুপ প্রকাশ্যে এনে দিয়েছেন তৃণমূলেরই কাউন্সিলররা।
কালনা শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা কাউন্সিলর রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান,কালনা পুরসভার পুরপ্রধানের পদ থেকে আনন্দ দত্তকে সরাতে কাউন্সিলরদের সই করা একটি চিঠি পুরসভায় জমা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চিঠির প্রতিলিপি পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক,কালনার মহকুমাশাসক ও উপপুরপ্রধানকেও পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে সই করা কাউন্সিলর সুনীল চৌধুরীর দাবি,’পুরপ্রধান হিসেবে আনন্দ দত্ত পুরোপুরি ব্যর্থ।ওনার ব্যর্থতার কারণে কালনা শহরে নাগরিক পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।তার মাশুল গুণতে হচ্ছে শহরের নাগরিকদের ।’
একই দাবি করেছেন দলেরই শহর সভাপতি তথা কাউন্সিলর রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর আরও অভিযোগ, পুরসভায় কাজের গতিটা হারিয়ে গেছে।কোনো কাউন্সিলর কাজ করতে পারছেন না।মানুষ আমাদের সমালোচনা করছেন।পৌরপতি ঠিক পুরসভায় সময়ে আসতে পারেন না।আমি পুরসভায় আছি ঠিক কথা।কিন্তু আমি তো দলের টাউন প্রেসিডেন্ট।আমার কাছে কালনার মানুষ অভিযোগ জানাচ্ছেন।দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা চলছে।এই কারণে আমরা ১৪ জন কাউন্সিলর অনিল দত্তর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে চিঠি পাঠিয়েছি ।
বিদ্রোহী কাউন্সিলররা চিঠিতে পুরপিতার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ এনেছেন সেগুলিও যথেষ্ট চাঞ্চল্যকর । অভিযোগ করা হয়েছে,পুরপ্রধান কাউন্সিলরদের সঙ্গে সহযোগিতা করেন না।উল্টে দুর্ব্যবহার করেন।কর্মীদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন।পুরপ্রধানের নির্দেশেই নাগরিকদের কাছে দ্বিগুণ মিউটেশন ফি নেওয়া হচ্ছে।একবার ’ফিজ’ নেওয়া হচ্ছে , আবার নেওয়া হচ্ছে ’ডোনেশন’।
যদিও এই সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়ে পুরপ্রধান আনন্দ দত্ত বলেন,’আমার কাছে এখনও কোনো চিঠি এসে পৌঁছায়নি।এরকম চিঠি পেলে বিষয়টি উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে পাঠাব।দল যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব আমি পালন করছি।দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে।’ অন্যদিকে এদিন কালনা পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর
অনিল বোস কার্যত পুরপিতার পাশে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরক অভিযোগপত্র পুরসভায় জমা দিয়েছেন
।অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন,’পুরপিতার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থাপত্রে আমি স্বাক্ষর করেন নি । অনাস্থাপত্রে আমার নাম দিয়ে যে স্বাক্ষর রয়েছে সেটি কেউ জালকরে করেছে ।’
এদিকে পুরপতির বিরুদ্ধে ১৪ কাউন্সিলরের আনা অনাস্থা চিঠির বৃহস্পতিবারও পুরসভাসভায় রিসিভ করাতে পারেন নি কাউন্সিলারা। পুরপতির নিষেধ রয়েছে, তাই ওই চিঠি অফিস শিল মোহর দিয়ে রিসিভ করা যাবে না বলে এদিন পৌরকর্মী ব কাউন্সিলরদের জানিয়ে দেন। এরপরেই সাংবাদিক সম্মেলন করে বর্শিয়ান কাউন্সিলর সুনীল চৌধুরী বলেন, বুধবার আমরা ওই চিঠি ইমেইল করে মহকুমা শাসক,জেলাশাষক এবং কালনা পৌরসভা কে পাঠিয়েছি।এদিন কালনা পৌরসভায় ’হার্ড কপি’ জমা দিতে গেলে, পৌরপতি আনন্দ দত্তের নিষেধের কারণে তা নেওয়া হয়নি। বিদ্রোহী কাউন্সিলর সুনীল বাবু এদিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন,তাঁদের দাবি মানা না হলে তাঁরা সব কাউন্সিলররা পদত্যাগ করবেন।।