প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ আগষ্ট : কথায় আছে ঠেলায় না পড়লে বেড়াল গাছে ওঠে না। এখন যেন ঠিক এরকমটাই অবস্থা হয়েছে বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডলের। বেতাজ বাদশার মতোই বৃহস্পতিবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমানের পালসিট টোলপ্লাজ়ায় দাদাগিরি দেখিয়ে ছিলেন সুনীল মণ্ডল।তিনি টোলপ্লাজার কর্মীর গায়ে হাত তুলতেও কুন্ঠাবোধ করেননি । কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রবল সমালোচনা শুরু হতেই সুনীল যেন একেবারে সুবোধ বালক বনে গিয়েছেন।শুক্রবার তিনি জানালেন,’রাগের মাথায় আমি ধাক্কা মেরেছি,এর জন্য আমি খুবই দুঃখিত। । পালশিট গিয়ে ওই কর্মীকে কাছে টেনে আদর করে দেব ।’
গাড়ি আটকানোয় পালসিট টোল প্লাজায় গাড়ি থেকে নেমে সেখানে কর্তব্যরত কর্মীর ওপর চড়াও হন সাংসদ সুনীল মণ্ডল । তিনি ওই কর্মীর গায়েও হাত তোলেন। টোলপ্লাজার সিসিটিভি ফুটেছে ধরা পড়া এই ঘটনার ভিডিও(যার সত্যতা এইদিন যাচাই করে দেখেনি) বৃহস্পতিবার রাতে ভাইরাল হতেই নানা মহল নিন্দায় সরব হয় । বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শুক্রবার টুইট করে তৃণমূল-সাংসদের আচরণের নিন্দা করেন। ঘটনা জানার পর তৃণমূল নেতৃত্বও সাংসদকে কড়কে দেন । ঘরে বাইরে প্রবল চাপের মুখে পড়ে শেষে টোলপ্লাজার কর্মীর গায়ে হাত তোলার কথা স্বীকার করে নিয়ে সুনীল মণ্ডল দুঃখপ্রকাশ করতে বাধ্য হন।
তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এদিন বলেন,’পালসিটের ঘটনার জন্যে সাংসদকে সতর্ক করা হয়েছে। দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও এবিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট করা হচ্ছে ।’ আর সুনীলের কীর্তি নিয়ে কটাক্ষ করে বিজেপি রাজ্য সভাপতির টুইটে লিখেছেন,’তৃণমূলের ‘ভদ্রলোক’-র আরেকটি উদাহরণ হল সুনীল মণ্ডল। সঠিক কাজ করার জন্যে একজন কর্তব্যপরায়ণ যুবককে মারধর করা হয়েছে। তৃণমূল নেতাদের এ ধরনের আচরণের নিন্দনীয় ।’
প্রকৃত কি ঘটনা ঘটেছিল তা জানতে এদিন পালসিট টোলপ্লাজায় যেতেই কর্মীরা সব উগরে দেন। উজ্জ্বল সিংহ সর্দার নামে যে কর্মীর গায়ে হাত তোলেন সাংসদ সুনীল মণ্ডল সেই কর্মী বলেন,বৃহস্পতিবার দুপুরে একটা গাড়ি চলন্ত অবস্থায় এসে ‘স্টপারে’ ধাক্কা মারে। ‘স্টপার’টা পড়ে যায়। আমি ‘স্টপার’টা তোলার জন্যে পাশ থেকে ছুটে আসি। ‘স্টপারটা যাতে তুলতে পারি তাই বলি, ‘স্যার গাড়িটা একটু ব্যাক করুন। তার পর স্টপারটা সাইডে সরিয়ে নিই’। এর কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই গাড়ির গেট খুলে নেবে সাংসদ সুনীল মণ্ডল আমার উপর চড়াও হয় । সজোরে উনি আমায় ঘাড় দাক্কা দিয়ে বলেন,’জানিস না আমি সাংসদ ।’
এদিকে পালসিট টোলপ্লাজার সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া সাংসদ সুনীল মণ্ডলের এহেন আচরণের ভিডিও ভাইরল হতেই তৃণমূলের অন্দরেই সাংসদের সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। মেমারি-১ ব্লকের সভাপতি নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’সাংসদের এই আচরণ কাম্য নয়। এতে জনমানসে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হল এমন আচরণের জন্যে ভোটারদের কাছে আমাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় ।’ জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল প্রামাণিক বলেন,’সাংসদের এহেন ধরণের আচরণ দলও ভালভাবে দেখছে না ।’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন বলেন,’তৃণমূল ও
বিজেপিতে গেলে প্রাক্তন শিক্ষকেরও কেমন অবনতি হয় সুনীল মণ্ডল তার প্রকৃত উদাহরণ !’
ঘরে বাইরে চাপের মুখে পড়ে সাংসদ সুনীল মণ্ডল এদিন স্বীকার করে নেন,’রাগের মাথায় ধাক্কা মেরেছি । আমার শিক্ষকতা কিংবা রাজনৈতিক জীবনে এই ধরণের ঘটনা এই প্রথম ঘটল । এর জন্যে আমি সত্যি করেই দুঃখিত, মর্মাহত। পালশিট দিয়ে এরপর যেদিন যাবো ওই কর্মীকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করে দেব ।’।