এইদিন ওয়েবডেস্ক,পশ্চিম বর্ধমান,১৭ আগস্ট : পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক তথা তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে । ভিডিওতে একজন সরকারি আধিকারিককে আঙুল উঁচিয়ে ধমক দিতে দেখা গেছে তাকে ৷ শুক্রবার দুর্গাপুরের ফরিদপুর ব্লকের বাঁশগোড়া এলাকায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ঘটনাটি ঘটেছে। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’সরকারি আধিকারিকদের সাথে প্রকাশ্যে অপমানজনক আচরণ করা যেন তৃণমূলীদের জন্মগত অধিকার।’
জানা গেছে,দুর্গাপুর বন দপ্তর প্রায় ২১ হেক্টর জমিতে ৩৩ হাজার বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা নিয়েছে । স্বাধীনতা দিবসের দিন ফরিদপুর ব্লকের হেতেডোবা শিল্পতালুকের পাশে বাঁশগোড়ায় বৃক্ষরোপণের সূচনা হয় । অনুষ্ঠানে পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক এস পন্নমবলম, পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় দপ্তরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক, আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান কবি দত্ত, দুর্গাপুরের ডিএফও অনুপম খাঁসহ অন্য আধিকারিকরা ।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজনের বিষয়ে আগাম না জানানোয় নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়েন । জেলাশাসকের সামনেই তিনি আঙুল উঁচিয়ে ডিএফও অনুপম খাঁকে ধমকাতে শুরু করেন।বিধায়ককে বলতে শোনা যায়, ‘আমাকে না জানিয়ে কেন এখানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে । আমি এলাকার বিধায়ক। আমার সঙ্গে পরামর্শ করার প্রয়োজন বোধ করেনি ।’ এরপর তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন,’আমি এখানকার বিধায়ক, আমি আপনার আমার সঙ্গে পরামর্শ করবেন না, যা খুশি তাই করবেন ?’পরে তিনি মঞ্চে যান । পিছু পিছু যান জেলাশাসক ও ডিএফও । সেখানেও তিনি ডিএফওকে গলার সুর চড়িয়ে ধমকান । জেলাশাসক তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন । সেখানে বিধায়ক বলেন,’যতই চেষ্টা করুন আপনারা আমাকে ভোটে পরাজিত করতে পারবেন না।’
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’তৃণমূলের নেতা বিধায়ক মন্ত্রীরা মনে করেন যে সরকারি আধিকারিকদের কোনো মান সম্মান বোধ নেই। তাদেরকে যত্রতত্র সর্বসমক্ষে তিরস্কার করা, তাদের সাথে প্রকাশ্যে অপমানজনক আচরণ করা যেন তৃণমূলীদের জন্মগত অধিকার। পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের হেতেডোবা এলাকায় বনদপ্তরের একটি বনসৃজন কর্মসূচিতে দুর্গাপুরের ডিএফও; শ্রী অনুপম খাঁ কে অন্যান্য আধিকারিকদের সামনেই অপমান করার সাথে সাথেই হুমকি-শাসানি দিলেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন চক্রবর্তী। ডিএফও সাহেবের অপরাধ, কেন এই কর্মকান্ডের বিষয়ে নরেন বাবুর সাথে আগে আলোচনা করেন নি, কারণ নরেন বাবু একজন বিধায়ক ! এমন বিধায়ক যে বারংবার নিজের বিধায়ক পরিচয় দিয়ে বিধায়ক স্বত্বা কে প্রতিষ্ঠিত করতে হচ্ছে !
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো যে গোটা ঘটনাটার সময় দুর্গাপুরের এসডিএম সহ রাজ্য প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিক এবং গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু কেউই বিধায়ক নরেনবাবুর বনবিভাগের একজন কর্তার প্রতি এমন অপমানজনক আচরণের প্রতিবাদ করলেন না। তৃণমুলের বিধায়ক হলেই কি একজন সরকারি আধিকারিককে এইভাবে অপমান করা যায়? সকলের সামনে অপদস্থ করা যায়? আসলে এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা সরকারি কর্মচারিদের নিজেদের ব্যক্তিগত চাকর-বাকর ভাবেন, তাই দায়িত্ব পালন ঠিকঠাক ভাবে করলেও, শুধুমাত্র আনুগত্যে অভাব দেখা দিলে এদেরকে ইচ্ছাকৃত ভাবে অপমান করা যায়।’।