প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ অক্টোবর : বিচারপতিরা সবাই বিজেপির লোক। তাই বিচারের সব রায় গুলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধেই বেরুচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে দেশের বিচারপতিদের উদ্দেশ্য করে এভাবেই আক্রমণ শানালেন পূর্ব বর্ধমানের কালনার তৃণমূল বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ। একই মঞ্চ থেকে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের প্রাক্তন সহ সভাপতি দেবু টুডু আবার সিপিএমকে কালকে উঠার সঙ্গে তুলনা করে তীব্র আক্রমণ সান্যাল। শাসক দলের বিধায়ক ও নেতার রেহানও বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। দেশের আইন এবং সংবিধান মেনে চলার শপথ নিয়ে বিধায়ক হওয়া দেবপ্রসাদ বাগ কোন স্পর্ধায় প্রকাশ্য সভা থেকে দেশের বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে আক্রমণ শানালেন, সেই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে বিরোধীরা।
দুর্গোৎসব মিটতেই তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে রাজ্যের ব্লকে ব্লকে বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই রকমই বিজয়া সম্মিলনী শনিবার বিকালে অনুষ্ঠিত হয় কালনা ২ নম্বর ব্লকে ।সেই সম্মেলনে কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ ও দেবু টুডু ছাড়াও জেলার অন্য একাধীক নেতা এবং মন্ত্রী ও সাংসদ উপস্থিত ছিলেন। বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠ শাসক নেতারা আরজি কর কাণ্ড নিয়ে বিরোধীদের রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তোলা নিয়ে সরব হন।তাঁদের মধ্যে দেবপ্রসাদ বাগ ও দেবু টুডু লাগামহীন বক্তব্য রেখে বসেন।
দেবপ্রসাদ বাগ বক্তব্য রাখতে উঠে আরজি করের ঘটনার প্রসঙ্গ সামনে এনে বলেন, আরজি করের ঘটনার প্রথম দিন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদ করেছেন। সিবিআই কে ঘটনার তদন্তভার দিয়ে দেওয়ার কথাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন।তবুও ১৪ তারিখ রাত দখলের নামে আরজি করে ভাঙচুর হল।বিচারপতিরা তখন বললেন,’বাংলার পুলিশের কাছে কি কোন তথ্য নেই,তারা জানতে পারলো না যে আরজি করে এই রকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে।আগাম তারা কোন সতর্কতা অবলম্বন করলো না।’ বিচারপতির এই মন্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেবপ্রসাদ বাগ বলেন , কেমন ষড়যন্ত্র চলছে এবার দেখুন। নবান্ন অভিযানের আগে পুলিশ যখন ধরপাকড় করছে তখন আবার বিচারপতিরা বলছে, জানলেন কি ভাবে যে এঁরাই নবান্ন অভিযানের নামে বিশৃঙ্খলা করতে পারে ? এ নিয়ে দেবপ্রসাদ বাগের ব্যাখ্যা , বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র চলছে।একই সঙ্গে তিনি বলেন, বিচারের যে সমস্ত রায়গুলো বেরুচ্ছে, সেগুলি সবই মমতা সরকারের বিরুদ্ধে। বিচারপতিরা সবাই বিজেপির লোক । এটা প্রমাণিত বলে দেবপ্রসাদ বাগ দাবি করেন।
একই মঞ্চ থেকে কালকেউটের সঙ্গে সিপিএমের তুলনা করে দেব টুডু বলেন, সিপিএমের বাচ্চারা এতদিন চিড়িয়াখানায় ছিল। আর জি কর কাণ্ডের পর আবার বেরিয়ে পড়েছে আর অ্যাং,ব্যাং,চ্যাঙের দল গুজরাট মধ্যপ্রদেশ থেকে এসে কিছু করতে পারবে না। আর জি কর কাণ্ড নিয়ে এখন বিচার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু একশ্রেণীর মানুষ বলছে, উই ওয়ান্ট জাস্টিস। এনিয়ে কটাক্ষ করে দেবু টুডু বলেন,ইংরেজ চলে গেছে, মাওসেতুং চলে গেছে, কাল মার্কস চলে গেছে। এখন যাঁরা ’উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলছে, তাঁরা ৩৪ বছর ধরে আমাদের রক্ত শোষণ করেছে, ঠকিয়েছে, পঞ্চায়েতে লুট করেছে, বর্ধমানের সাইবাড়ি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, মাকে ছেলে রক্ত খাইয়েছে। বাংলার মানুষ শূন্য করে দিয়ে সিপিএমকে ফাঁসি দিয়ে দিয়েছে। ওরা আবার চিড়িয়াখানাতেই চলে যাবে বলে দেবু টুডু মন্তব্য করেন।
শাসক দলের বিধায়ক ও নেতার এহেন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বিজেপি ও সিপিএম নেতৃত্ব । জেলা বিজেপির সহ সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,’তৃণমূল যে দেশের সংবিধান,আইন ও বিচার ব্যবস্থাকেও মানে না ,সেটা তৃণমূল বিধায়কের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাংলায় তালিবানি শাসন প্রতিষ্ঠাই তৃণমূলের একমাত্র লক্ষ্য বলে মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র মন্তব্য করেছেন’।
আর সিপিএম নেতাদের কটাক্ষ,’আরজি কর কাণ্ড নিয়ে বাংলা জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় দেখে তৃণমূল ভয় পেয়েছে।সেই ভয়ে ওরা সিপিএমের নামে বষদগার ছড়াচ্ছে। তবে এতে কিছু লাভ হবে না । তৃণমূলের আসল স্বরুপ বাংলার মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে বলে দাবি সিপিএম নেতৃত্বের ।।